বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি বাড়ায় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি কমেছে। এক বছরের ব্যবধানে এই খাতে ঘাটতি কমেছে ৩৮ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা বা ৩৫ দশমকি ৬ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গত আট বছর ধরে এই হিসাবে ঘাটতি ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে ডলারের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে ২০২২ ও ২০২৩ সালে। তা এখনো অব্যাহত থাকলেও আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের সার্বিক তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে এই খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়।
আইন অনুযায়ী সরকারের পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার আয় ও ব্যয়ের হিসাব পরিচালনা করে। বছর শেষে তা সরকারকে টাকার হিসাবে জানাতে হয়। এর অংশ হিসেবেই বৈদেশিক মুদ্রার সমুদয় স্থিতির তথ্য টাকায় রূপান্তর করে সরকারকে বা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য ওই প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার হিসাবে প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এই হিসাবে ঘাটতি কমেছে ৩৮ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা বা ৩৫ দশমকি ৬ শতাংশ।
সরকার দৈনন্দিন বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও ব্যয়ের তথ্য বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলেও এই হিসাবে ঘাটতি হয়।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে ব্যাংক খাতে লুটপাট বন্ধ হয়ে যায়। একই সঙ্গে দেশ থেকে টাকা পাচারও কমে যায়। এর বিপরীতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বেড়ে যায়। এ কারণেই বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়ে। এতে ডলারের সংকটও কিছুটা কমে যায়।
প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ২১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা বা ৭ দশমকি ৯ শতাংশ। গত অর্থবছরে এই খাতে ঘাটতি হয়েছিল ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করায় এর আগে ঘাটতি কিছুটা কমেছিল।
গত অর্থবছরের শেষ দিকে আবার আমদানি বাড়তে থাকে। ওই সময় মূলত আমদানির আড়ালে টাকা পাচার হয়েছে। কিন্তু গত সরকারের পতনের পর টাকা পাচার বহুলাংশে কমে যাওয়ায় ডলারের প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হয়।
ফলে আমদানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে বাণিজ্য ঘাটতি আবার বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার আর্থিক হিসাবেও ঘাটতি কমতে শুরু করেছে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার অন্য খাতের মধ্যে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে। আগে বিদেশভ্রমণ ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় কমলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের চলতি হিসাবে ঘাটতি আরও কমবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশাবাদী। ফলে আর্থিক হিসাবেও ঘাটতি কমতে থাকবে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও বাড়বে।
আপনার মতামত লিখুন :