ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

লুটপাটের অর্থনীতির গতি ফেরানোর চেষ্টা

রহিম শেখ

প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৪, ০৩:৪৭ পিএম

লুটপাটের অর্থনীতির গতি ফেরানোর চেষ্টা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডলারের তীব্র সংকট, ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচার এবং রাজনৈতিক প্রকল্পের নামে যে হরিলুট হয়েছে তাতে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সাধারণ মানুষ রীতিমতো পিষ্ট হয়েছে। এরপরও কাগজে-কলমে অর্থনীতি সবল করার চেষ্টা হলেও তা জনজীবনে স্বস্তি আনতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সাড়ে ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণ রেখে বিদায় নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার দ্বিতীয় মাস আজ। এই সময়ে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে আসে নতুন নতুন নেতৃত্ব। আর্থিক খাতে চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগই বাতিল করেছে সরকার। রাজনৈতিক প্রকল্পে ব্যয় খতিয়ে দেখার পাশাপাশি অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে শ্বেতপত্র প্রণয়নে কমিটি গঠন করেছে সরকার। ইতোমধ্যে গত আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাটকারী শতাধিক মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। ব্যাংকের নগদ টাকার সংকট সামাল দিতে ধারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা খুব বেশি আশা দেখায়নি।

তবে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিশ্বের ১২টি দেশে ৭১টি চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন দেখেছে দেশবাসী। কিন্তু গত সরকার পতনের পর থেকে তৈরি পোশাক খাতে যে অস্থিরতা শুরু হয় তা সামাল দেওয়া ছিল সরকারের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তবে শেয়ারবাজারে নেওয়া একের পর সিদ্ধান্তে দরপতন যেভাবে শুরু হয়েছে তা সামলে উঠতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

জানা গেছে, টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থেকেও অর্থনীতির রক্তক্ষরণ বন্ধে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব উদ্যোগ নিতে পারেনি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার দুই মাসের মধ্যেই সেসব উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বিশেষ করে আর্থিক খাতে এ বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে ব্যাংক দখল করে নামে-বেনামে ঋণ নেওয়ার দিন শেষ হয়েছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতি আর আর্থিক খাতের পুনর্গঠনে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এ বিষয়ে পরিষ্কার একটি বার্তাও এসেছে অর্থনীতিবিষয়ক নেতৃত্বের কাছ থেকে। তবে নীতি সুদহার কিছুটা বাড়ানো ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এখনো বড় কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় শিল্প খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

  • অর্থনীতি কেমন আছে

সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই তলানিতে। গত জুলাইয়ে ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। তবে আগস্টে কিছুটা কমে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০.৪৯ শতাংশ। নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার চর্চা থেকে বের হননি ক্ষমতার বলয়ে থাকা একশ্রেণির ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদেরই কেউ কেউ একে ঋণের নামে অর্থের লুণ্ঠন হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৯০ কোটি টাকা। মূলত ঋণখেলাপিদের একের পর এক সুবিধা দেওয়া ও লুটপাটের ব্যাপারে চোখ বন্ধ করার নীতি নেওয়ার কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ব্যাংক খাতের নীতিনির্ধারণ হয়েছে ক্ষমতার বলয়ে থাকা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায়- এমন অভিযোগও আছে। বাজেটে ঘাটতি অর্থায়ন করার কারণে বিগত সরকার দেদার দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়েছে। গত জুন মাস পর্যন্ত সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ সময়ে ঋণের বোঝা বেড়েছে সাড়ে ছয় গুণ, যা বর্তমান বাজেটের তিন গুণের সমান। বাছবিচারহীনভাবে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ায় বাজেটের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। এখন প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের অর্থ চলে যাচ্ছে ঋণ পরিশোধে। ডলার সংকট এখনো চলমান। ৮৬ টাকার ডলার ১২০ টাকায় উঠেছে। আমদানি খরচ বেড়েছে। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির সুখবর গত দুই বছরে ছিল না। অর্থনীতির আকার অনুসারে পর্যাপ্ত রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এসব পুরোনো সমস্যার তেমন সফলতা আসেনি।  

  • রেমিট্যান্সের গতি রিজার্ভ বাড়িয়েছে

গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়েছেন। ওই মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি ছিল। সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪০ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৮০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। সরকার পতনের পর থেকেই বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। আবার বৈধ পথে ডলারের দরবৃদ্ধিতে হুন্ডি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। এতে রেমিট্যান্স আসার গতি বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গত বছর ডলারের দাম নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যান্ড ছিল ১ শতাংশ। ১৮ আগস্ট এই ব্যান্ড আড়াই শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে ডলারের মধ্যবর্তী দাম দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ১২০ টাকা। এ সিদ্ধান্তের কারণে ব্যাংকগুলো এখন ডলারের দাম কিছুটা বেশি দিতে পারছে। ফলে বাড়ছে প্রবাসী আয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, আইএমএফের বিপিএম-৬ হিসাব মান অনুযায়ী, ২ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ডলার। আর গ্রস বা মোট রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ৪৭৬ কোটি ডলার।

  • প্রকৃত পরিসংখ্যান প্রকাশ

দেশে গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে জুলাই মাসে। এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে আগস্ট মাসে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর। মূল্যস্ফীতির সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন করে আসছিলেন। সব পণ্য ও সেবার দাম হু হু করে বাড়লেও মূল্যস্ফীতির হারকে দুই অঙ্কের ঘর পার হতে দেখা যায়নি। তবে আগস্টে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে মূল্যস্ফীতিও যেন লাফ দিয়ে বেড়ে যায়। অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সময়মতো ‘প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত’ প্রকাশ করা হবে। তিনি মনে করেন, যথাযথ নীতি প্রণয়নের জন্য প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত দরকার।

  • ব্যাংক খাত সালমান-এস আলমমুক্ত

রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ইসলামী ব্যাংকসহ অন্তত আটটি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ। অন্য ব্যাংকগুলো হলোÑ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লে¬াবাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। গত দুই মাসে আর্থিক খাতে সবচেয়ে বড় দৃশ্যমান পদক্ষেপ হলো এসব ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন পর্ষদ গঠনের মাধ্যমে এসব ব্যাংক এস আলমমুক্ত করেছে। এস আলম গ্রুপ ব্যাংক ও আর্থিক খাত থেকে নামে-বেনামে যে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, তা কীভাবে উদ্ধার করা হবে, তা অবশ্য এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ঋণ আদায় না হলে ব্যাংক খাতের ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ছাড়া সালমান এফ রহমানের আইএফআইসি ব্যাংকেরও পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে আরও কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদ, যেগুলো সরকার-ঘনিষ্ঠরা নিয়ন্ত্রণ করত। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে সরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

  • শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন

নির্দিষ্ট ও স্বল্প আয়ের মানুষ জীবন চালাতে হিমশিম খেলেও সাবেক সরকার সব সময় অর্থনীতির একটি রঙিন চিত্র এঁকে গেছে। তবে অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা জানতে এখন একটি শ্বেতপত্র তৈরি করা হবে। গত ২৯ আগস্ট বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শে^তপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারা, কীভাবে দুর্নীতি করেছেÑ এ কমিটি তা ধরবে না। তবে গত কয়েক বছরের অর্থনীতির গতিধারা বিশ্লেষণ করে অর্থনীতির সংকট ও চ্যালেঞ্জ নির্ধারণ করবে এবং সমাধানের পথও বাতলে দেবে তারা। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে বলে কথা রয়েছে।

  • রাজনৈতিক প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনা করবে সরকার

গত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া সাতটি মেগা প্রকল্প বর্তমানে চলমান। এসব প্রকল্পে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এর মধ্যে একমাত্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়া বাকি ৬টি প্রকল্পের ৯১ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। তবে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে এ রকম প্রকল্প নেওয়ার কী প্রয়োজনীয়তা ছিল এবং প্রকল্পগুলো যৌক্তিকভাবে নেওয়া হয়েছে কি নাÑ এসব পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর ব্যয় পর্যালোচনার কাজটি করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, বড় প্রকল্পগুলোর একটি মূল্যায়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এ পর্যালোচনা শেষ হবে।

  • তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা

ক্ষমতার পালাবদলে আইনশৃঙ্খলার অবনতির মাঝে পোশাক খাতের শ্রমিকদের অসন্তোষ, আন্দোলন, কর্মবিরতি এবং একের পর এক কারখানা বন্ধের ঘটনায় রপ্তানি আয়ে ৮৫ শতাংশের মতো অবদান রাখা এ খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানামুখী শঙ্কা দানা বাঁধছে। উৎপাদন তলানিতে নেমে যাওয়া, কার্যাদেশ পাশের দেশে চলে যাওয়া, আয় কমে ব্যাংক ঋণে নির্ভরশীলতার পাশাপাশি সামনের দিনে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে দেশের রপ্তানিতে অবদান রাখা অনেক বড় কোম্পানির। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাতছাড়া হওয়া কার্যাদেশগুলো বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানে যাচ্ছে। শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিল হয়ে গেছে বলে গত ১২ সেপ্টেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, ৩০ শতাংশের মতো কার্যাদেশ অন্যান্য দেশে চলে গেছ

  • টানা দরপতনের বৃত্তে পুঁজিবাজার

গত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আটকে আছে টানা দরপতনের বৃত্তে। কিন্তু হঠাৎ বাজারের এই পতনে দুটি কারণ বলছেন বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে একটি বেক্সিমকোর শেয়ার নিয়ে কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার প্রতিষ্ঠান ও পাঁচ ব্যক্তিকে ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা করা। এতে একশ্রেণির বিনিয়োগকারী বাজারবিমুখ হয়েছেন। অন্য কারণটি হচ্ছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের পক্ষ থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও নাসা গ্রুপ এবং থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের (যেটি মূলত নগদ লিমিটেড নামেই পরিচিত) মালিকানা বদলে নিষেধাজ্ঞা জারি। এসব গ্রুপ বা কোম্পানির তালিকাভুক্ত শেয়ারের লেনদেনে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি না হলেও অনেকে ভুল বুঝেছেন এবং তাতে বাজারে একধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে গত ৩৮ দিনে পুঁজিবাজার থেকে ৩১ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে।

  • পাচারের অর্থ ফেরাতে ১২ দেশে ৭১ চিঠি

বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিশ্বের ১২টি দেশে ৭১টি চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ২৭টি চিঠির জবাব পেয়েছে সংস্থাটি। দুদক কর্মকর্তারা বলেছেন, বিশ্বের ১২টি দেশে টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে দুদক। বিভিন্ন দেশে বাড়ি, গাড়ি ক্রয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগসহ ব্যাংকে টাকা রাখা হয়েছে। টাকা পাচার করা দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, সাইপ্রাস, জাপান, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া। যারা এসব দেশে টাকা পাঠিয়েছেন তাদের বিষয়ে ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৭১টি এমএলএআর পাঠানো হয়েছে। এদিকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে এবং প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছে দুদক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, গত দুই মাসে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে যে প্রাতিষ্ঠানিক শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণে সরকার ব্যস্ত ছিল। এসব সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেখা গেছে, ব্যাংক খাতে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে। মূলত এতদিন অর্থনীতি যে বিকল অবস্থায় ছিল, তা পুনর্গঠন করে স্বাভাবিক অবস্থায় আনার পূর্বশর্ত হিসেবে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করা একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। 

আরবি/এফআই

Link copied!