টেলিকম খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই একেক ধরনের ব্যবসা পুরোটা নিয়ে নিতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) এমদাদ উল বারী।
নেটওয়ার্ক স্থাপনার বিভিন্ন লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, সবাই সব ব্যবসা পুরোটা নিয়ে নিতে চায়। অপারেটরদের মধ্যে কোলাবরশন (পারস্পরিক সহযোগিতা) নাই। আপনারা একত্রে কাজ না করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসে মিলিয়ে দেবে না। কেউ যদি মনে করেন করে কাউকে শেষ করে অন্যদের মুখে তুলে খাইয়ে দেওয়া হবে সেটা ভুল।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
‘টেলিযোগাযোগ খাত; বিনিয়োগে ধীরগতি ও অসম প্রতিযোগিতা’ শীর্ষক ঐ গোলটেবিল বৈঠকে টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার দখলের প্রবণতা তুলে ধরে বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী আরও বলেন, মোবাইল অপারেটরগুলো যখন বিদেশ থেকে আসা ফোন কলের হিসেব দিচ্ছিল না তখন আইজিডব্লি এবং আইসিএক্স এর মতো স্তরের জন্ম হয়। আবার চার পাঁচটি লাইসেন্স দেওয়ার কথা থাকলেও ২৭টি লাইসেন্স আইজিডব্লিড দেওয়া হয়। লাইসেন্স দেওয়ার জন্য যখন বিটিআরসিকে মন্ত্রণালয় থেকে পূর্বানুমতি দেওয়ার বিধান করা হলো, তখনই এই খাতে স্বজনপ্রিয়তা ঢুকেছে। এনটিইএন এবং এমএনও বড় হয়েও সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে চায়। তারা সবকিছু একাই করতে চায়। এমএফএস’গুলোর (মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস) এমএনও’দের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু কোলাবোরেশনের অভাবে তারা আলাদা কাজ করছে, তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভিন্ন। টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বয় করে কাজ করতে চায়না। ফলে বাজারে ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের জন্য কঠিন।
অপ্রত্যাশিতভাবে নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বাজার বিনিয়োগ আকর্ষণে পিছিয়ে রয়েছেও বলেও মন্তব্য করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, অপ্রত্যাশিত এবং অনিয়মিত পরিবর্তনের কারণে এই খাতে বিনিয়োগ ধীরগতির। তবে গ্রাহকদের স্বার্থে বিটিআরসি কাজ করছে উল্লেখ করে মেজর জেনারেল (অবঃ) এমদাদ বলেন, জনগণ, ব্যবসা এবং সরকার - এই তিনের মাঝে নিয়ন্ত্রক বসে আছে। নিয়ন্ত্রকের আসনে থাকলে সবার দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় রাখতে হয়। এটা এমন একটা ইন্ডাস্ট্রি যেখানে হঠাৎ করে কোন কিছু করা ঠিক না।
টিআরএনবি’র সভাপতি সমীর কুমার দে’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন দেওয়ান। মূলপ্রবন্ধে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের মধ্যে একটি একক বৃহৎ অপারেটরের আধিপত্যের কারণে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। গোলটেবিল বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমএনও) টেলিটক সহ রবি এবং বাংলালিঙ্কের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নিলেও, দেশের সর্ববৃহত অপারেটর গ্রামীণফোনের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্যদের মাঝে প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক মো. খালেদ আবু নাসের; টেলিকম অপারেটরগুলোর সংগঠন এমটবের সেক্রেটারি জেনারেল লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) মো. জুলফিকার; টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ চৌধুরী; বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান; বাংলালিংক এর কোম্পানি সেক্রেটারি জহরত আদিব চৌধুরী; রবির হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স সাহেদুল আলম এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :