ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
গ্রাহক সমাবেশে বক্তারা

ইসলামী ব্যাংকে ২০১৭ সালের আগের পর্ষদ চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম

ইসলামী ব্যাংকে ২০১৭ সালের আগের পর্ষদ চাই

গ্রাহক সমাবেশে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি গ্রাহকের আস্থার ব্যাংক। এটি চালাতে হলে ইসলামী মনোভাব লাগবে। ইসলামের খেদমত করতে যারা ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছিল তাদের হাতেই ইসলামী ব্যাংককে দেয়া হোক।

ব্যাংকটি অন্যায়ভাবে বেদখল হওয়ায় এখান ইসলাম বিদায় নিয়েছে। যারা বিনিয়োগ করেছিল তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এজন্য ২০১৭ সালে দখলের আগের পরিচালনা পর্ষদকে ব্যাংকে ফেরাতে হবে। পরিপূর্ণ রূপে ইসলামে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে।

রাজধানীর দিশকুশায় একটি হোটেলে শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অবৈধ প্রভাব রক্ষায় গ্রাহক সমাবেশে শনিবার (২৪ আগস্ট) এসব কথা বলেন বক্তারা। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ। কিছু দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি গভর্নরকে দেয়া হবে বলে সমাবেশে জানানো হয়।

সমাবেশ থেকে জানানো দাবির মধ্যে রয়েছে- ইসলামী ব্যাংকের আড়াই কোটি গ্রাহকের ব্যাংকটিতে এস আলম গ্রুপের বিশেষ মদদে চট্টগ্রামের পটিয়ার প্রায় ৯ হাজার লোককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের চাকরিচ্যুত করলে গ্রাহকরা বুঝতে পারবেন ইসলামী ব্যাংকে আবার ইসলাম ফিরে এসেছে। একই সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকিং আইন প্রণয়ন করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পৃথক ইসলামী বিভাগ চালু ও কেন্দ্রীয় ইসলামী ব্যাংক গঠন এবং ব্যাংক লুটেরাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আবু আহমেদ বলেন, যারা ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিল তারা কর্মীদের কম বেতন দিতেন, কম খরচ করতেন। এভাবে তারা অনেক সম্পদ জমা করেছিলেন। যাতে ইসলামী অর্থনীতির শক্তভিত্তি গড়ে ওঠে। এটিই ইসলামী ব্যাংকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। লুটেরাগোষ্ঠী যখন দেখল এখানে অনেক সম্পদ জমা আছে। তখন তারা সেটি দখলের পাঁয়তারা শুরু করে। একে একে সবগুলো ইসলামী ধারার ব্যাংক বেদখল হয়ে যায়।

তিনি বলেন, একসময় ইসলামী ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোকে ধার দিত। এখন ব্যাংকটিকে ধার করে চলতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না। তাই গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে হবে। যদি তারা দেখেন আমানতের নিরাপত্তা রয়েছে, তাহলে আবার ইসলামী ব্যাংকে টাকা রাখতে শুরু করবেন। তারা কত মুনাফা দেয়া হলো- তা দেখতে চান না। মূলত সুদের লেনদেন করতে চান না এমন গ্রাহকরাই ইসলামী ব্যাংকে লেনদেন করেন।

ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক সভার আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স এসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সভাপতি আব্দুল হক বলেন, লুণ্ঠিত অর্থ দেশে ফিরে আনতে হবে। ব্যাংকের টাকা দেশের বাহিরে থাকলে তা ফিরে আনতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে লুটেরাদের দেশে ফিরিয়ে তাদের বিচার করতে হবে। নতুন চেয়ারম্যান এস আলমের সহযোগী ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এবং স্বতন্ত্র পরিচালক খুরশীদ ওহাবকে বাদ দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে।

ব্যাংকটির গ্রাহক ও জামাল উদ্দিন টেক্সটাইলের মালিক জামাল উদ্দিন বলেন, ইসলামী ব্যাংকে এলসি নিতে এক সময় হুমড়ি খেয়ে পড়ত মানুষ। এখন সেই চিত্র উল্টো হয়েছে। এখন এই ব্যাংকের এলসি ও পে-অর্ডার কেউ নিতে চায় না। সরকারের বিশেষ বাহিনীর সহায়তায় ২০১৭ সালে ব্যাংক বেদখলের পরেই লুটেরাদের কারণে ব্যাংকটির সর্বনাশ হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের এই করুণ পরিণতি থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যাংকের পূর্বের পরিচালনা পর্ষদে যারা ছিলেন তাদের ফিরে আসতে হবে। কারণ ঈমান আকিদার লোক ছাড়া ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা করলে কি হয়- তা এখন দৃশ্যমান।

গ্রাহক ফিরোজ হায়দার চৌধুরী বলেন, ব্যাংক লুটকারি এস আলমকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তার কাছে নামে- বেনামে যে টাকা রয়েছে, তা ফিরিয়ে আনতে হবে। শক্তি প্রয়োগ করে যাদের পর্ষদ থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো তাদের আবার পর্ষদে নিয়ে আসতে হবে বলেন তিনি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!