ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

তিনটা পদ্মা সেতু করার টাকা বিদেশে পাচার

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪, ০২:৩৩ এএম

তিনটা পদ্মা সেতু করার টাকা বিদেশে পাচার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

*এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা
*সিআইডির অনুসন্ধান শুরু
*বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব সংস্থার কাছে তথ্য চেয়েছে
*জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে সমন্বয় করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব: ড. ইফতেখারুজ্জামান


বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি)। এস আলম গ্রুপ হুন্ডিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এক লাখ ১৩ হাজার দুইশ পঁয়তাল্লিশ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে প্রাথমিক তথ্য ধরে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। যা অন্তত তিনটা পদ্মা সেতুর খরচের সমান।

এই অংক আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থাটি। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের সমন্বয় করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। সেই উদ্যোগ নিতে হবে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থ পাচার করেছে এস আলম গ্রুপ। এর সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তি, গোয়েন্দা সংস্থা, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা জড়িত ছিল। তাদের পাচার হওয়া অর্থ ও ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য জাতীয়, আন্তর্জাতিক এবং যে অর্থ পাচার করেছে সেই দেশের আইন অনুসরণ করতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। এই সরকারের বিশ^ব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, তারা ইচ্ছা করলেই পারবে।

তিনি বলেন, অর্থ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে নজির স্থাপন করতে হবে। যত টাকা পাচার করেছে তার তিনগুন জরিমানার বিধান আইনে রয়েছে। তাই করতে হবে। এ ছাড়াও তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; তাহলে এই অর্থ পাচার প্রতিরোধ করা যাবে। যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে পাচারে সুরক্ষা দিয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের এক সূত্র জানিয়েছে, এস আলম গ্রুপের মালিক মো. সাইফুল আলমসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, বিদেশে অর্থ পাচার, ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েজ এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনা অপরাধের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ ১৩ হাজার দুইশ পঁয়তাল্লিশ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তাই তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এস আলম গ্রুপ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাসসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে অর্থ পাচার করেছে। সেখানে গ্রুপের নিজের ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নামে স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ ক্রয় ও ব্যবসায় পরিচালন করেছেন। পাচারকৃত অর্থে সিঙ্গাপুরে ২৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা (২ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার) পরিশোধিত মূলধনের ক্যানালি লজিস্ট্রিক প্রাইভেট লি. প্রতিষ্ঠা করেছেন। তা ছাড়াও ভুয়া নথি তৈরি করে, জাল জালিয়াতি এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিদেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগের নামে-বেনামে ৬টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেছে এবং বিদেশে পাচার করেছে।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, বিদেশ শেল কোম্পানি (নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান) খুলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা প্রতারণামূলক ভাবে বিদেশে পাচার করেছেন। এস আলম তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমসহ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তির সহযোগিতায় অর্থ পাচার করেছে।

সিআইডি ইতিমধ্যে এস আলমের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ বেশকিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চেয়েছে। সেই তথ্য পাওয়ার পর কোন কোন দেশে অর্থ পাচার করেছে সেই দেশ শনাক্ত করে সেইসব দেশে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। 
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, এস আলম গ্রুপের শীর্ষ কর্তারা আত্মগোপনে রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এস আলমের সম্পদ কাউকে না কেনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় এস আলমের কারখানায় লুটের ঘটনা ঘটেছে।

এগুলো নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। 
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের প্রধান ডিআইজি কুসুম দেওয়ান জানিয়েছেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি ঘটনাই তদন্ত করা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!