গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে কাজ করছে ন্যাশনাল ব্যাংক (এনবিএল) জানিয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ব্যাংকের অনেক টাকা চলে গেছে। সে সব টাকা উদ্ধারে আমাদের ৫টি অডিট টিম কাজ করছে। আশা হারাবেন না, ন্যাশনাল ব্যাংক আমানতকারীর সব টাকা ফেরত দেবে।
রাজধানীর বাংলামটরে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে আমার কাজ করছি। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, অনিয়ম যা হয়েছে তা আগেই। এখন থেকে আর হবে না। অন্যদিকে ব্যাংকের ব্যবসা ফেরাতে চেষ্টা করছি। ৬টি দেশে আমাদের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি আছে। আগামী সপ্তাহে সবগুলে পুরো দমে চালু হবে।
আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, রেমিট্যান্স থেকে যে আয় আসে, তা চালু হলেই অনেক সমস্যার সমাধান হবে। সব গ্রাহকের রেমিট্যান্স দেশে আনতে পারলেই ব্যবসা বাড়বে। কাজেই আস্থা হারাবেন নাÑ দুই থেকে তিনটি মাস সময় দিন। সর সমস্যার সমাধান করবো।
এজন্য ব্যাংকের মূলধন বৃদ্ধি করতে শেয়ার বাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করবেন না বলে জানান তিনি। তবে শেয়ারবাজার খারাপ হওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোর ওপওে চাপ পড়ছে বলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
ন্যাশনাল ব্যাংকে ১৯৮৩ সালে প্রথম দেশীয় মালিকানায় বেসরকারী ব্যাংক হিসেবে ন্যাশনাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক সুপ্রতিষ্ঠিত ও ঐতিহ্যবাহী একটি ব্যাংকের নাম।
ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২২১টি শাখা, ৬৫টি উপশাখা, দেশের ভেতর ২টি ও দেশের বাইরে ৪টি সাবসিডিয়ারি, জিসিসি অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রে ২টি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা চুক্তিসহ দেশের নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) এবং রেটিং প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট জনবল প্রায় ৬ হাজার, আমানতকারী ২০ লখের অধিক ও ঋণগ্রহীতা প্রায় ১ লাখ।
ন্যাশনাল ব্যাংক আশি ও নব্বই দশকে দেশের পোশাক শিল্পের উত্থান এবং রপ্তানীতে এর অবদান সর্বজনবিদিত। এছাড়া সেই সময় থেকে ব্যাংকটি বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিকাশে এবং বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। কৃষি খাতের উন্নয়নেও ন্যাশনাল ব্যাংকের অনন্য ভূমিকা রয়েছে।
ন্যাশনাল ব্যাংক সম্পূর্ণ নিজস্ব সক্ষমতায় বিতরণকৃত মোট ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। দেশের প্রান্তিক কৃষিনির্ভর মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যাংকটি বাংলাদেশ সরকারের সাথে বরেন্দ্র সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করে। যার সুফল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষ এখনো ভোগ করছেন।
বিদেশ থেকে বৈধ পথে ও নিরাপদে টাকা প্রেরণের লক্ষ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকই সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। এতে করে বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভে একটি ইতিবাচক প্রভাব আসে।
চলতি বছর দেশের অর্থনীতিতে কার্যকর ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণ গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫৫%। বিশেষত, চলতি বছরে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আহরণে ন্যাশনাল ব্যাংকের অবস্থান দ্বিতীয়।
ন্যাশনাল ব্যাংক প্রথমবারের মতো ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মাস্টার কার্ডকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবসার প্রচলন ঘটায়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংক প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে এবং চলতি বছরের মধ্যে আরও ৪০০ কোটি টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :