ঢাকা শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

ন্যাশনাল ব্যাংকের ঢাকা আঞ্চলিক ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২১, ২০২৪, ১২:৩২ পিএম

ন্যাশনাল ব্যাংকের ঢাকা আঞ্চলিক ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের আঞ্চলিক ব্যবসায়িক সম্মেলন (ঢাকা) অনুষ্ঠিত হয়েছে।  শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ঢাকার বাংলামোটর এস্কর টাওয়ারে দিনব্যাপী এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।

সম্মেলনে পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক মোঃ আব্দুস সাত্তার সরকার, স্বতন্ত্র পরিচালক মোঃ জুলকার নায়েন, স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক ড. মেলিতা মেহজাবিন সহ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল আলম খান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ আকতার উদ্দিন আহমেদ, ইমরান আহমেদ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকদ্বয় এবং ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও কর্পোরেট শাখাসমূহের ব্যবস্থাপকবৃন্দ এবং উপশাখা ব্যবস্থাপকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

এসময় চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। গার্মেন্টস, কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে আমরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছি। বিশেষত, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সঠিকভাবে পরিচালনা করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ নিশ্চিত করছি, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করছে।

অন্যদিকে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুল আলম খান তার বক্তব্যে শাখা ব্যবস্থাপকদেরকে শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়, নতুন আমানত সংগ্রহ এবং গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি শাখা ব্যবস্থাপকদেরকে রেমিট্যান্স গ্রাহকদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সকল গ্রাহকের কাছে নতুন ও আকর্ষণীয় ডিপোজিট পণ্য পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।

ন্যাশনাল ব্যাংক ১৯৮৩ সালে প্রথম দেশীয় মালিকানাধীন বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ব্যাংকটি নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং ঐতিহ্যবাহী একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ন্যাশনাল ব্যাংক ২২১টি শাখা, ৬৫টি উপশাখা এবং দেশের অভ্যন্তরে ২টি ও দেশের বাইরে ৪টি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠা করেছে। এছাড়া, জিসিসি অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রে ২টি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনার চুক্তি রয়েছে। দেশের নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং রেটিং প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমেও ব্যাংকটি ব্যবসা পরিচালনা করছে। বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকের মোট জনবল প্রায় ৬ হাজার, আমানতকারী ২০ লক্ষাধিক এবং ঋণগ্রহীতা প্রায় ১ লক্ষ।

আশি ও নব্বইয়ের দশকে দেশের পোশাক শিল্পের বিকাশ এবং রপ্তানীতে ন্যাশনাল ব্যাংকের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময় থেকেই ব্যাংকটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে।

কৃষি খাতের উন্নয়নেও ন্যাশনাল ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সম্পূর্ণ নিজস্ব সক্ষমতায় কৃষি খাতে বিতরণ করা ঋণের গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। দেশের প্রান্তিক কৃষিনির্ভর মানুষের সহায়তায় ব্যাংকটি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে "বরেন্দ্র" সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করেছে, যার সুফল এখনো দেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষ ভোগ করছে।

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বিদেশে অবস্থানরত শ্রমজীবী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ন্যাশনাল ব্যাংক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এই ধারাবাহিকতায় মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশসহ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ ও গ্রিসে মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান চালু করেছে। বৈধ পথে ও নিরাপদে অর্থ পাঠানোর লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক প্রথমবারের মতো ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

চলতি বছরে ন্যাশনাল ব্যাংক বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। গত বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত, আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আহরণে ব্যাংকটির অবস্থান বর্তমানে দ্বিতীয়।

১৯৯৭ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মাস্টার কার্ডের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবসার প্রচলন ঘটায়।

ন্যাশনাল ব্যাংক শুধু ব্যবসা পরিচালনার জন্যই কাজ করে না; বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবিক প্রয়োজনে, এবং দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কর্পোরেট দায়বদ্ধতার আওতায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে চরম মন্দা ও তারল্য সংকটের কারণে ন্যাশনাল ব্যাংকও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এর একটি বড় কারণ হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে গুজব ও আতঙ্ক, যা গ্রাহক ও আমানতকারীদের বিভ্রান্ত করছে এবং ব্যাংকিং খাতের প্রতি তাদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।

গত ২০ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংক ‍‍`ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১‍‍`-এর আওতায় ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক এবং স্বনামধন্য ব্যবসায়ী জনাব আবদুল আউয়াল মিন্টু। এছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আরো রয়েছেন- ভাইস চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক জনাব মোয়াজ্জেম হোসেন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক জনাব জাকারিয়া তাহের, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক জনাব মুখলেসুর রহমান, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র পরিচালক জনাব মোঃ আব্দুস সাত্তার সরকার, স্বতন্ত্র পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক জনাব মোঃ জুলকার নায়েন এবং স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক ড. মেলিতা মেহজাবিন। ব্যাংকের ঐতিহ্য ও আস্থা পুনরুদ্ধারে তারা সবাই আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছেন।

এর পাশাপাশি ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল আলম খান সহ ব্যাংকের সকল কর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই কঠিন পরিস্থিতিতেও ন্যাশনাল ব্যাংক দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাত, বিশেষত গার্মেন্টস শিল্পের পাশে থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ নিশ্চিত করতে এবং এলসি সুবিধা প্রদানেও ব্যাংকটি সচেষ্ট রয়েছে।

এছাড়া, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও ন্যাশনাল ব্যাংক যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় রেমিট্যান্স সংগ্রহে ব্যাংকের অবস্থান দৃঢ় রয়েছে। বছরের শেষ দিকে এসেও রেমিট্যান্স আসার এই প্রবাহ অব্যাহত আছে।

চলতি বছর ন্যাশনাল ব্যাংক প্রায় এক হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছে, যার ধারাবাহিকতা আগামী বছরও অব্যাহত থাকবে বলে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সকলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
 

আরবি/জেআই

Link copied!