ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

দাম বেড়েছে মাছ-মুরগি, স্বস্তি নেই চালে

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৫, ০১:২২ পিএম

দাম বেড়েছে মাছ-মুরগি, স্বস্তি নেই চালে

ছবি: সংগৃহীত

শীতকালীন সবজিতে ভরেছে রাজধানীর বাজার, কমেছে সকল ধরণের সবজিসহ পিঁয়াজের দাম। তবে, সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে মাছ-মুরগির । স্বস্তি ফেরেনি চাল, তেল ও মাছের বাজারে। বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখী দামে অনেকটাই নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের জীবন।

গত এক মাস ধরে অস্থির চাল-তেলের বাজারে বিরাজ করছে অস্থিরতা। সাথে দাম বেড়েছে ইলিশসহ প্রায় সকল ধরণের মাছের। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) নবাবগঞ্জ, আজিমপুর, শান্তিনগর ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

দেশের চালের বাজারে স্বস্তি ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের উদ্দেশ্যে গত ২০ অক্টোবর চালের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয় ১৫ শতাংশ। রেগুলেটরি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয় ৫ শতাংশ । একইসাথে, আগাম কর ৫ শতাংশ সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে, দাম না কমায় গত ৩১ অক্টোবর চাল আমদানিতে শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু এর কোনো প্রভাবই দেখা যায়নি বাজারে।
ভরা মৌসুমে দাম কমার বদলে দফায়-দফায় শুধু বেড়েই চলেছে চালের দাম। চাল মজুতে ঘাটতি না থাকার পরও আমদানিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে, আমদানি শুল্ক ৬৩ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে।

জনগণকে যদিও আশার বাণি দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন । ৯ জানুয়ারি তিনি বলেন, রমজানকে ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখার সর্বচ্চো চেষ্টা করছে। 
তবে, আসলেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে আছে নানা দ্বিধা ও প্রশ্ন।

চালের অস্থিতিশীল দামে বেকায়দায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। মো. মান্নান শেখ (৩৪) রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, শীতের এ মৌসুমে সবজির সাথে-সাথে চালের দামও কমে যাবার আশা করলেও, আরো বেড়েছে। আমরা রিকশা চালায়, আমাদের আয় বাড়েনি বরং সরকার পতনের পর আয় আরো কমেছে। বেড়েছে শুধু জিনিসের দাম। দিন যত যাচ্ছে বউ-ছেলেমেয়ে নিয়ে ঢাকায় থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে।

হামিদ নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে এখন চালের অভাব নেই। তবু দাম কমছে না বরং বাড়তি কিছু চলের দাম। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে চলছে লুট-পাট। আর পকেট কাটছে আমাদের। বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা সরকার বারবার বললেও আসলে তার কোন সুফল এখন পযন্ত আমরা পাচ্ছি না। 

তবে, ব্যবসায়ীরা চালের বাজারের অস্থিরতা স্বীকার করলেও দোষ দিচ্ছেন মিল সিন্ডিকেটের উপর। নবাবগঞ্জ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়ায় যার প্রভাব খুচরা বাজারের উপর পড়ছে।

নবাবগঞ্জ বাজারঘুরে চালের যে দাম দেখা যায়. প্রতি কেজি মিনিকেট ৮০-৮৫ টাকা, আটাইশ ৬০-৬৫ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫৫-৫৮ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়।

মাছের বাজার ঘুরে দেখাযায় গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহ মাছের দাম খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। কিছুটা কমেছে পাঙাশ-তেলাপিয়ার দাম । দাম বেড়েছে ইলিশসহ অন্যান্য।
বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০-২৬০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩৩০০-৩৪০০ টাকা, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০-২২০০ টাকা, আর ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১২০০-১৩০০ টাকায়।
এছাড়া. বোয়াল কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, পাঙাশ ১৯০-২১০ টাকা, তেলাপিয়া কেজি ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

গেল এক সপ্তাহের চেয়ে মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ৫ থেকে ১০ টাকা । সোনালি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকায়, সোনালি হাইব্রিড ৩৩০ টাকায় । ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে,২১০-২২০ টাকায়। গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে সময় নানামুখি উদ্দ্যেগে কিছুটা দাম কমলেও বছরের ব্যবধানে আবারও ৭৫০ ছাড়িয়েছে গরুর মাংস।

আরবি/এস

Link copied!