ঢাকা: দরপতনে বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্তর্বর্তী সরকারের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইতিবাচক নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও টেনে স্থিতিশীলতার দিকে নিতে পারছে না। সরকার পরিবর্তনের পরে সামান্য উত্থান ঘটলেও এরপরে পতনবৃত্তে আবদ্ধ পুঁজিবাজার।
গত অক্টেবর মাসের তথ্যানুসারে ২২ দিনে অর্থাৎ ১৪ কার্যদিবসে সাড়ে ৬ হাজার বিনিয়োগকারী তাদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব শেয়ারশূন্য করেছেন। তবে চলতি নভেম্বর মাসের হালনাগাদ তথ্য এলে তা আরও বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে, বলে মনে করেন অনেক বিনিয়োগকারী।
তবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি) সরকার নতুন করে ৩ হাজার কোটি টাকা অর্থায়নে পুঁজিবাজারে তারল্যের সংকট কাটবে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে অঙ্গীভূত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থবির হওয়ার কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার প্রত্যাশা করেন ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বিও হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সিডিবিএল (সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড) জানিয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেয়ারশূন্য বিও হিসাব ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪১৪টি। ১ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ১৪ কার্যদিবসে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি বিও হিসাব শূন্য হয়েছে অর্থাৎ এসব হিসাব থেকে সব শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তবে শেয়ারবাজার ছাড়ার কারণ হিসেবে আস্থার সংকটকেই বেশি দায়ি করেছেন কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তা।
শেয়ারবাজারে লেনদেন করতে হলে যেকোনো ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকে বিও হিসাব খুলে শেয়ার কেনাবেচা করতে হয়। তাই বাজার পতনের চিত্র এখন বিও হিসাবের সংখ্যায় ফুটে উঠেছে। সংবেদনশীল পুঁজিবাজার ছেড়ে অনেকে বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব এখন শেয়ারশূন্য।
সিডিবিএলের হিসাবে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৯০ হাজার ৩৫৫। সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ১২ লাখ ৮৫ হাজার ৯০৬।
শেয়ারবাজার ছাড়ার কারণ হিসেবে শেয়ারবাজারের লেনদেনের মধ্যস্থতাকারী কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, বাজারে অর্থের চেয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকটই বেশি। এ কারণে বিও হিসাবে টাকা থাকার পরও অনেকে শেয়ার কিনছেন না। আবার অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু টাকা তুলে নিচ্ছেন না। শেয়ার বিক্রির পরও বিনিয়োগকারীদের টাকা বিও হিসাবে অলস পড়ে থাকছে।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম চলে আসছে। শুদ্ধাচারের ঘাটতির কারণে পুঁজিবাজারের আজ অচলাবস্থা। তাই বাজারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু রাতারাতি ও এককভাবে কারও পক্ষে সব অনিয়ম দূর করা কঠিন কাজ।
তিনি আরও বলেন, এই কঠিন কাজই করতে হবে বাজারসংশ্লিষ্ট সবপক্ষকে আস্থায় নিয়ে, ধীরে ধীরে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাজারসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদ্দেশ্য খারাপ না হলেও তারা নিজেদের পুরোপুরি বাজারবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এ কারণে হয়তো কিছুটা আস্থার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :