ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

অনলাইনে গোল্ড কেনার ফাঁদ

রহিম শেখ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৫, ১২:৪১ পিএম

অনলাইনে গোল্ড কেনার ফাঁদ

ছবি, সংগৃহীত

অনলাইন অ্যাপে স্বর্ণালংকার কেনার বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে ‘গোল্ড কিনেন’ অ্যাপের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই প্রতারণামূলক অ্যাপটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই অ্যাপ, ওয়েবসাইট বা কোম্পানি গায়েব হয়ে যাবে কি না তা নিয়েও অনেকেই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

সোনা বেচাকেনায় অনিয়মের অভিযোগে গোল্ড কিনেন টেকনোলজিসের সদস্য পদ স্থগিত করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতিষ্ঠানটি নিয়মবহির্ভূতভাবে সোনার অলংকারের পরিবর্তে সোনার বার ও কয়েন বিক্রি করায় সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে বলে বাজুস জানিয়েছে।

গোল্ড কিনেন অ্যাপ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের দোরগোড়ায় সোনার বার এবং কয়েন আকারের স্বর্ণ ক্রয়, সংরক্ষণ, বিক্রি, উপহার দিতে এবং সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমার বিনিময়ে গ্রাহকের নামে স্বর্ণ সঞ্চয় করা হবে।

‘গোল্ড কিনেন’ অ্যাপটির মাধ্যমে প্রতি মাসে ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্বর্ণ সঞ্চয়ের সুযোগ পাচ্ছেন গ্রাহকেরা। বিকাশের মাধ্যমে প্রতি মাসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। সঞ্চিত গোল্ড ১, ৫ ও ১০ গ্রামের বার এবং ২ ও ৪ গ্রামের কয়েনরূপে উত্তোলন করে ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় হোম ডেলিভারি নিতে পারবেন। অথবা দেশজুড়ে নির্ধারিত পিকআপ পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করে রাখতে পারবেন নিজের বাসায়। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের নির্ধারিত পিকআপ পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে এখন সঞ্চিত গোল্ড পিকআপের মাধ্যমে উত্তোলন সম্ভব। তবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনার কোনো মজুত নেই। তারা মানুষকে বোকা বানাতে নানা ছল-চাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অনলাইনে স্বর্ণ বিক্রি করার কথা বলে যারা প্রচার চালাচ্ছেন, তাদের কাছে আদৌ কোনো স্বর্ণ আছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটলে তাকে অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। অ্যাপের প্রতারণার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিজিটাল প্রতারণা থেকে দূরে থাকতে হবে, কোনোভাবেই লোভে পড়া যাবে না।’ জানতে চাইলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা এ ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তাদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গোল্ড কিনেন অ্যাপের হেল্পলাইন নম্বরে কল দিলে কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি মাসুদ বলেন, ‘অ্যাপে লগইন করার পর সোনা কেনা যাবে। এখান থেকে সোনা কেনার পর ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফরমে মূল্য পরিশোধ করা যাবে।’

টাকা আগাম কেন পরিশোধ করতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন সোনা ক্রয় করবেন তখনই শুধু পেমেন্ট করতে হবে। আমরা অ্যাপভিত্তিক সেবাটি দিচ্ছি, আর অ্যাপের মাধ্যমেই সোনা কিনতে হবে। আপনি যদি চান ডেলিভারিও নিতে পারেন। ন্যূনতম এক গ্রাম হলেই ডেলিভারি নিতে হবে। বর্তমানে আমাদের ক্যাশ অন ডেলিভারি চালু নেই। যেহেতু সোনা নিয়ে আমরা কাজ করছি, এ জন্য ক্যাশে কোনো লেনদেন করছি না।’

ডিজিটাল অ্যাপে আদৌ কোনো সোনার মজুত আছে কি না জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ঢাকার বনানীর ১১ নম্বর রোডে তাদের শোরুম রয়েছে। সেখানে সোনা আছে।’ রাজধানীর বনানীর ১১ নম্বর রোডে অবস্থিত ডি ব্লকে অবস্থিত ‘গোল্ড কিনেন অ্যাপ’ অফিসে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কামরান সঞ্জয় রহমানের দেখা পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘কোনো অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতারণা হলে তা বন্ধের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।’ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

জানা যায়, গোল্ড কিনেন অ্যাপটি অ্যাপেল অ্যাপ স্টোর এবং গুগল প্লে স্টোরে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে পুরোপুরিভাবে অ্যাপটি উন্মুক্ত করা হয়।

এদিকে সোনা বেচাকেনায় অনিয়মের অভিযোগে গোল্ড কিনেন টেকনোলজিসের সদস্য পদ স্থগিত করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস জানায়,  সদস্যপদ গ্রহণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সব শর্ত পূরণ করায় ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটিকে বাজুসের প্রাথমিক সদস্যপদ প্রদান করা হয়। কিন্তু স্বর্ণ বেচাকেনায় অনিয়ম করায় বাজুস এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অনিয়ম প্রসঙ্গে বাজুস জানায়, প্রতিষ্ঠানটি নিয়মবহির্ভূতভাবে সোনার অলঙ্কারের পরিবর্তে সোনার বার ও কয়েন বিক্রি করায় সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এ ধরনের কার্যক্রম বাজুসের গঠনতন্ত্রের ৪(ক) ধারা যথাযথভাবে অনুসরণ করে না সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

আরবি/এস

Link copied!