ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সবজির বাজার টালমাটাল, দায় নিচ্ছে না কেউ

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪, ০৭:০৫ পিএম

সবজির বাজার টালমাটাল, দায় নিচ্ছে না কেউ

ছবি রুপালী বাংলাদেশ

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল সর্বস্তরের জনগণ। যেই স্বপ্নে থাকবে খাদ্য নিরাপত্তা, ন্যায্য মূল্যে পণ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। কিন্তু, সিন্ডিকেট এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাড়তি দামে কিনেতে হচ্ছে এসব পণ্য।  চাল, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডিম, মাছ থেকে শুরু করে সকল নিত্যপণ্যের দামই চড়া আকারে বিক্রি করা হচ্ছে। এ যেন টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে সবজির বাজারে। 

রাজশাহী, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কাঁচামাল রাজধানীত ঢুকেই দাম বাড়ছে হর হামেশায়। যেন দেখার কেউ নেই। নিত্যপণ্যের চড়া দামে ক্ষিপ্ত জনসাধারণ থেকে সর্বস্তরের মানুষ। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় এবার প্রশ্ন ওঠছে স্বাধীন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। কিন্তু এর দায় নিতে রাজি নয় কেউ। 

রূপালী বাংলাদেশের প্রাথমিক তদন্তে ওঠে এসেছে নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের নানান তথ্য। রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে নারয়ণগঞ্জ কাঁচা বাজার হাত বদলে চলছে চাঁদাবাজি। আগের মতই চাপা ভয়ে মুখে কুলুপ দিয়ে আছেন সাধারণ ব্যবসায়ী এবং ভুক্তভোগীরা।

বিক্রেতারা বলছে, সকল সবজির যোগান কম কিন্তু চাহিদা বেশি। যার ফলে দাম বাড়ছে। তবে ঢাকার কাওরান বাজার, শান্তিনগর বাজার সহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেল উল্টো চিত্র । চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি থাকলেও দাম কমার কোন চিহ্ন নেয় ।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছে, সরব হয়েছে সিন্ডিকেট। তবে পুরাতনদের স্থান দখল করেছে নতুন রাজনীনৈতিক ব্যানারে। বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁচামাল ঢাকাতে ঢুকেই দাম কেন বাড়ে! এ বিষয়ে  রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন  জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া সুলতানা। 

আতিয়া সুলতানা  বলেন 

‘ভোক্তা অধিকারের কাজ চলমান রয়েছে। আপানার জানেন, আমরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনশীল রাখতে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে বাজার মনিটরিং এর কাজ করেছি।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সচেতনতা মূলক লিফলেট ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে আসছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে প্রতিটি পণ্যের মূল্য তালিকা দোকানে টানিয়ে রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে, বলে জানান তিনি। ব্যবসায়ীরা যাতে প্রতিটি পণ্যের মূল্য তালিকা রাখে এবং অতিরিক্ত দামে কোনো পণ্য বিক্রি না করে সে জন্য তাদের অবগত করা হয়েছে।

আতিয়া সুলতানা আরও বলেন 

‘ভোক্তাদের সঙ্গে যারা প্রতারণা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ।  বর্তমান সময়েও শক্তভাবেই বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’

প্রায় সব ধরণের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা। একইসাথে সবজির চড়া দাম নিয়ে বিপাকে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ। প্রান্তিক কৃষক তার পণ্যের সঠিক দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে, চড়া দামে নিত্যপণ্যে কিনতে দম বের হবার অবস্থা সাধারণ মানুষের।

গত ৭ সেপ্টেম্বর রূপালী বাংলাদেশের প্রতিনিধি কামরুজ্জামান বাদশা সরেজমিনে রাজশাহীর পাইকারী বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের তালিকা দেন। অন্যদিকে যশোরের প্রতিনিধি সালাউদ্দিন সাগর সরেজমিনে সেখানকার বাজার ঘুরে তালিকা দেন। রাজশাহী ও যশোরের পাইকারী বাজারের সাথে রাজধানীর খুচরা বাজারের মূল্যতালিকার হেরফের দেখা যায় অনেক।

উল্লেখ্য, রাজশাহী (পাইকারী) কাচা মরিচের কেজি ১১০ টাকা। যশোর (পাইকারী) কাচা মরিচের কেজি ১১৫ টাকা। আর ঢাকার খুচরা বাজারে তা বিক্রি হতে দেখা যায় ২৪০ টাকা থেকে ২৭০ টাকা।  সেই সাথে দ্বিগুণ দামের চিত্র প্রায় সবধরনের সবজির ক্ষেত্রে।                  

জেলা থেকে রাজধানীতে ঢুকলেই দামের যে হেরফের সে বিষয়ে বেসরকারি চাকরিজীবী তাকের রহমান বলেন, ‘আমরা যার গ্রাম থেকে শহরে এসেছি তারা জানি, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কৃষক যে ফসব ফলান । তার সঠিক দাম তারা পান না। এদিকে আমরা ঢাকাতে থেকে কয়েকগুন বেশি দামে নিত্যপণ্যে কিনে খায়। অনেক সময় অতিরিক্ত দামের কারণে প্রয়োজনীয় পণ্যে কিনতে হিমশিম খেতে হয়। আমরা মনে করি সরকারের প্রতিটি সংস্থা যদি সঠিক ভাবে কাজ করে তবে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব। তবে সকলেই গা বাচিয়ে চলা এবং বিষেশ সুবিধা নিয়ে চুপ থাকার সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে সেটা না ভাঙলে আমাদের মত সাধারণ মানুষ অত্যাচারিত হতে থাকবে।’

নিত্যপণ্যের দাম কেন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না, এ বিষয় যেন দেখার কেউ নেই। ফলে নাজেহাল হচ্ছে মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্তদের জীবন। 
 

আরবি/এস

Link copied!