ঢাকা: বাংলাদেশ তিন পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেগুলো হলো- রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়), গার্মেন্টস ও গ্রামীণ উন্নয়ন। দেশে রেমিট্যান্স বাড়াতে মধ্যপ্রচ্যের ৬টি দেশের ভাষা জানা জরুরি। এজন্য আরবি ভাষা ইন্সটিটিউট খোলা দরকার। জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার দুপুরে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বাংলাদেশ কুরআন প্রচার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘মধ্যপ্রাচ্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো অপরিহার্য’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। রেমিট্যান্স না বাড়ার প্রধান কারণ তুলে ধরে তারা বলেন- রেমিট্যান্স যোদ্ধোদের ভাষাগত অদক্ষতা এবং অযোগ্যতাই প্রধান কারণ। ‘ফান্ডমেন্টাল বিহেবিয়ার’ না থাকায় ঝুঁকির মুখেও পড়ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শুধু সওয়াবের আশায় আরবি পড়েন। তা হবে না- লিখতে এবং বলতেও জানতে হবে। যেমন চীন ও ভারতের কেরালার মানুষ অনেক এগিয়ে। কেরালার হিন্দুরা আরবি শিখছে, সেখানে ৭শ হিন্দু রয়েছে আরবির শিক্ষক। তাদের থেকে অনেক পিছিয়ে দেশ। এজন্য ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ক্লাস বইয়ে আরবি ভাষাকে অর্ন্তভূক্ত করা জরুরি। ইংরেজির মতো আরবিকে দেশে তৃতীয় ভাষা করার বিকল্প নেই। এজন্য সরকারি পৃষ্টপোষকতা দরকার।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপন্থিত ছিলেন সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) চেয়ারম্যান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। বাংলাদেশ কুরআন প্রচার ফাউন্ডেশনের সাবেক উপ-প্রধান প্রকৌশলী বাংলাদেশ বিমান মো. তামজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ই্নস্টিটিউটিটের (নিপোর্ট) সাবেক ইকোনোমিক কাউন্সিল ও মিনিস্টার, বাংলাদেশ দূতাবাস সৌদি আরব ড. মো. আবুল হাসান।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচায ও প্রফেসর ড. মোহাম্দ শহীদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগে চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক, স্বতন্ত্র পরিচালক এবং চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক নূরুল ইসলাম খলিফা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আব্দুল আউয়াল সরকার।
প্রধান অতিথি হিসেবে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে আরবি ভাষা শিক্ষায় সরকারকে গুরুত্ব দেয়া দরকার। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের শ্রমিকরা ভাষা না জানার কারণে অনেক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। আগামীতে যাতে জনশক্তির অপচয় না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখা দরকার।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মীরা মধ্যপ্রাচ্যে অধস্তনের চেয়ে অধস্তন হিসেবে কাজ করে। তাদের সবচেয়ে প্রতিবন্ধকতা হলো পাকিস্তানী ও শ্রীলঙ্কানরা। তারা হচ্ছেন বাংলাদেশিদের বস। কারণ তাদের আরবি ভাষা জানা। ফলে তারা মালিকদের কাছাকাছি যেতে পারছেন কিন্তু আমরা পারছি না, তাদের বুঝাতেও পারছি না। যে কারণে চাইলেও মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকরা বড় কোনো পদে যেতে পারেন না। বিদেশে গিয়ে শুধুমাত্র আরবি ভাষা না জানার কারণে তারা নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
সেমিনারে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত তিনটি ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেগুলো হলো- রেমিট্যান্স, গার্মেন্টস ও গ্রামীণ উন্নয়ন। প্রবাসীদের বলা হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধা। সত্যিকার অর্থে তারাই আসল যোদ্ধা। আমরা ভৌগলিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করেছি কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে এখনো মুক্তি পাইনি। এজন্য বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ অন্যদের কাছে কম্প্রোমাইজ করতে হয়েছে। প্রবাসীরা যে কয় টাকার বেতনে চাকরি করেন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ তারা দেশে পাঠান। প্রবাসীরাই অর্থনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা।
সভায় বক্তারা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে গ্লোবাল ল্যাংগুয়েজ শিখে গেলে সব বিপত্তি এড়ানো সম্ভব। এখানকার বেশি সুবিধা নিচ্ছেন যারা আরবি বলতে এবং পড়তে পারেন। এজন্য স্কুল ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে আরবি শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। না হলে তারা বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হন।
একইসঙ্গে দেশের প্রতিটি জেলায় আরবি ভাষার ইন্সটিটিউট করতে হবে, বিদেশে পাঠানোর আগে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তবেই আমাদের রেমিট্যান্সে ভালো ফল আসবে। সেজন্য দরকার সরকারের সহযোগিতা।
আপনার মতামত লিখুন :