ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নেওয়ার পর নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন বাংলার সাধারণ জনতা। তবে, সে স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে বিবেচনার চেয়ে, সাম্প্রতিক সময়ে বাজার ব্যবস্থা নিয়ে নানা নাটক দেখছে দেশের মানুষ। বাজারে কিছুই যেন কেনার পরিস্থিতি নেই সারারণ মানুষের। যা কিছু কিনতে যাই তাতেই আগুন জ্বলা দাম। পরিস্থিতি এমন, হাজার টাকায় বাজারের কিছুই হয় না।
চাল, ডাল, তেল, মুরগী, পেঁয়াজ-মরিচ থেকে সবজি, সব কিছুর দামই চড়া। সবকিছুর দাম বাড়লেও আয় বাড়েনি খেটে খাওয়া মানুষ এবং সরকারী-বেসরকারী চাকুরিজীবিদের। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস সকলের।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) নবাবগঞ্জ, আজিমপুর, শান্তিনগর, কারওয়ানবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, হাতে গোনা দুই-একটি সবজির দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা কমলেও বেশিরভাগই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
ক্রেতাদের প্রশ্ন, আগেও বাজারে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হতো, যা কার্যকর হতো না। তখন রাজনৈতিক সরকার ছিল, নানা কারণ ছিল। কিন্তু এখন কিছুটা পরিবর্তন হবার কথা থাকলেও যে লাউ সেই কদু। নতুন সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলেও এর সুফল আমরা পাচ্ছি না, অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমের শেষ সময় এবং সাম্প্রতিক বন্যা ও বৃষ্টির প্রভাবে বাড়ছে শাক-সবজির দাম। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা আলাল মিয় বলেন, দু-একটি সবজি ছাড়া কোনোটিই ৮০ টাকার নিচে নেই। বেশিরভাগেরই দাম ১০০ টাকার ওপরে। তা হলে আমরা কি ভাবে কম দামে বিক্রি করবো। তবে শীতকালীন সবজি পুরোদমে বাজারে আসা শুরু হলে দাম কমবে বলে আশা তাদের।
শান্তিনগর বাজারে নাজমীন সুলতানা নামের একজন ক্রেতা বলেন, বাজারে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া এবং সেটি কার্যকর না হওয়া সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে। বিগত সরকারও দাম বেড়ে গেলে সরকার কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিতো। তবে, বাজারে তা বাস্তবায়ন হয়নি কখনো। কিন্তু তখনও তায়। এখন নতুন সরকারের ক্ষেত্রেও একই রাস্তায় হাঁটছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। আমাদের দুঃখ আগের থেকে বেড়েছে কমেনি একটুও।
আজিমপুর বাজার করতে আসা ক্রেতা মাহমুদুল হাসান বলেন, হাজার টাকায় এখন আর বাজার হয়না। কোন কিছুই কেনা যায়না। তেল কিনছি এক লিটার, বেগুন এক কেজি, মরিচ কিনে এখন যে টাকা আছে তাতে চাল কিনবো না লবন মসলা কিনবো বুঝতাছি না।
শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখাযায় সবকিছু বিক্রি হচ্ছে চড়াঁ দামে-
প্রতি কেজি বেগুন ১০০-১২০ টাকা, টমেটো ২২০-২৩০ টাকা, করলা ৮০-১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, মুলা ৭০-৮০ টাকা, লতি ১০০-১১০ টাকা, ধুন্দুল ৯০-১০০ টাকা ও পটোল ৮০-১০০ টাকা। পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, গাজর ১৪০-১৬০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, শিম ২৫০-২৮০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। ধনেপাতা ১৬০-২০০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। প্রতি পিস ফুলকপি ৭০-৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০-১০০ টাকা এবং লাউয়ের ৮০-১২০ টাকা।
এছাড়া নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, চাষের পাঙাশ কেজি ২২০ থেকে ২৪০, প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা, তেলাপিয়া কেজি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা।
বাজারে বেড়েছে আদা-রসুনের দামও। প্রতি কেজিতে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ২৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৬০ টাকা ও মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৮০ টাকায়। কাঁচা মরিচ চলতি সপ্তাহে দাম বেড়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত।
প্রতিডজন ডিমের দাম ছুঁয়েছিল ১৮০-১৯০ টাকা পর্যন্ত। সবশেষ ডিম আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক হ্রাস করার পর ডিমের দাম কমেছে। বর্তমানে প্রতি ডজন ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে প্রতি ডজন ডিম ১৫০ টাকা ও হালি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। আর সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়।
আজিমপুর বাজারের এক মুরগি ব্যবসায়ী আলাতাপ মোল্লা জানান, এখন আর আগের মতো মুরগি আসছে না। সেই সঙ্গে পাইকারিতে দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও।
আপনার মতামত লিখুন :