ঢাকা: দেশের ব্যাংক খাত ধ্বংসের অন্যতম হোতা হিসেবে আলোচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা চারটি ব্যাংকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ৯২৬ কোটি টাকা জমা রয়েছে। এছাড়া পদ্মা ব্যাংকে ২২টি মেয়াদি আমানতের বিপরীতে আমানত রয়েছে ১৭৯ কোটি টাকা। পদ্মা ব্যাংকের এসব আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হলেও ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সুদ দিচ্ছে না ব্যাংকটি। আর এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কার ইশারায় ঝুঁকিপূর্ণ এসব ব্যাংকে এতো বড় আমানত রাখা হলো- সেটি খতিয়ে দেখে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে নিয়ম মেনেই এসব টাকা ব্যাংকে রাখা হয়েছিল।
এদিকে এস আলম সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে টাকা নগদায়নে বন্দর বার বার তাড়া দিলেও ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা নিয়ে গভীর বিপাকে পড়েছে বন্দর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশাল অংকের টাকা রাখতে কর্তৃপক্ষের ব্যাংক বাছাই প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না। এর পেছনে বন্দর কর্মকর্তাদের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা, সেটি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে তাঁরা।
চট্টগ্রাম শাখা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সমন্বয়ক আকতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘বন্দরের চেয়ারম্যান, মেম্বার ফিন্যান্স বা বোর্ড সদস্যরা কোনো দলের কর্মচারী ছিল না, কোনো নেতার কর্মচারী ছিল না, রাষ্ট্রের কর্মচারী ছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ওরাও লাভবান হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখার দরকার। এটা করতে গিয়ে অন্যায় কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে- সেটা কি কারো আঙ্গুল দেখানোয় করেছে, নাকি নিজেরাও লাভবান হয়ে করেছে- সেটি অনুসন্ধান করা দরকার।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এস এম নসরুল কদির বলেন, ‘আমাদের সবগুলো ব্যাংকের অবস্থা কিন্তু খারাপ নয়। কিছু ভালো ব্যাংক এখনও আছে, এসবের প্রতি মানুষের ভালো আস্থা আছে। আস্থা একটা বড় ব্যাপার। এক্ষেত্রে তাঁদের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা, কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল কিনা, কারো সাথে যোগসাজশ ছিল কিনা- সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।’
এদিকে নগদায়ন না হওয়ায় গত সপ্তাহ থেকে এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট নয়টি ব্যাংকের পে-অর্ডার, চেক ও ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে বন্দর। তবে আমানত রাখার বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, সঠিক নিয়ম মেনে ও সরকারি নীতি যথাযথ অনুসরণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের একটি নির্দেশনা ছিল- সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়ী আমানত অর্ধেক সরকারি ব্যাংকে এবং বাকি অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকে রাখতে হবে। আমরা সেই নিয়ম অনুযায়ী আমাদের আমানতের অর্ধেক সরকারি ব্যাংকে এবং বাকি অর্ধেক বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক রেখেছিলাম।’
দুর্বল এসব ব্যাংক থেকে টাকা উদ্ধারে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে কবে নাগাদ এসব টাকা উদ্ধার করা যাবে সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।
আপনার মতামত লিখুন :