কিশোরগঞ্জের ১.৭ মিলিয়ন (১৭ লাখ) পরিবারের অধিকাংশ কর্মক্ষম নারী এখন ঢাকায় কর্মরত। তাদের একটি অংশ বাজারে মাছকাটা কাজ করেন এবং অন্যটি গৃহপরিচারিকা হিসেবে আছেন ঢাকায়। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৮টি ইউনিয়নের পরিবারগুলোর ২১ শতাংশ নারী তরুণী।
ঢাকায় কাজ করতে এসে তারা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। পিতা-মাতার সচেতনতার অভাবে তাদের মধ্যে সন্তানদের বেশিরভাগ অংশ বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছেন বলে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সমস্যার সমাধানে স্কুল পর্যায় থেকে চাই কর্মমূখী শিক্ষা। প্রতিটি অঞ্চলের বিশেষ পণ্যকে গুরুত্ব দিয়ে সে বিষয়ে তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা। তারা উদ্যোক্তা হয়ে উঠলে সামাজিক অর্থনীতি বিকাশে ভূমিকা নিতে পারবে বলে জানান অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত অতিথিরা। সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা, কিশোরী ও যুবাদের কাজের সুযোগ ও কর্মব্যবস্থা’ বিষয়ক সংলাপে এই তথ্য তুলে ধরে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। একই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের সুপারিশ তুলে ধরেন।
সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে শ্রমিক অধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
আরও উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক (প্রমিক্ষণ) মো. মানিকর রহমান, ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব স্মল অ্যান্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষামূলক কর্মসূচির (ইউসিইপি বাংলাদেশ) উপ-পরিচালক-প্রোগ্রাম অ্যান্ড ইনোভেশন জয় প্রকাশ বড়ুয়া, আর্থ সোসাইটির ভাইস ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মিস শাকিলা সাত্তার এবং বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তা সমিতির সভাপতি মিসেস শেজান খানসহ অনেকে।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ডক্টর খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং এ এস এম শামীম আলম শিবলী, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট।
অনুষ্ঠানে নারীদের কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম অধিকার কমিশনকে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে জেলা পর্যায়ে কিশোরী ও তরুণীদের জন্য চাকরির বাজার অনেক চ্যালেঞ্জিং। যে কারণে শহুরে নারীদের চেয়ে গ্রামীণ নারীরা পিছিয়ে রয়েছে।
কিশোরগঞ্জের শ্রমবাজার পিছিয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিশেষ একটি ধাক্কা সারা দেশের মতো এখনোও লেগেছে। পরিবর্তিত ব্যবস্থায় গ্রামীণ জনপদের নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ এবং উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার তাগিদ দেন তিনি।
খন্দকার মোয়াজ্জেম বলেন, প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমের আওতা বাড়াতে হবে। নারীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে ফ্রি ট্রেনিং, উপজেলা লেভেলে ইনসেন্টিভের ব্যবস্থা করা এবং কৃষি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকাগুলোতে পেইড ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
নারীর উন্নয়ন এবং পিছিয়ে পড়া গ্রামাঞ্চল নারীদের এগিয়ে নিতে অন্তর্র্বতী সরকারের শ্রম অধিকার কমিশনকে নারীদের কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীকরণের তাগিদও জানায় সিপিডি।
প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ বলেন, বিভিন্ন পেশা হারিয়ে গেছে। আমরা কাজ করছি, যাতে আর পেশা হারিয়ে না যায়।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমরা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন ট্রেডে তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনছি। যাতে শিক্ষার্থীরা শুধু সার্টিফিকেট নির্ভর না হয়ে ওঠেন। শিগগিরই বুয়েট এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। একই সঙ্গে ইউরোপের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি, যাতে তারা আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধির সার্টিফিটেটের মূল্যায়ন করেন।
আপনার মতামত লিখুন :