শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আসিফ ইকবাল, বাকৃবি

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম

বাকৃবির বোটানিক্যাল গার্ডেন: প্রকৃতির এক নীরব পাঠশালা

আসিফ ইকবাল, বাকৃবি

প্রকাশিত: এপ্রিল ৫, ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম

বাকৃবির বোটানিক্যাল গার্ডেন: প্রকৃতির এক নীরব পাঠশালা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেষে অবস্থিত সবুজে ঘেরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসের এক বিশেষ আকর্ষণ হলো বোটানিক্যাল গার্ডেন। একটুখানি প্রশান্তি খুঁজতে, উদ্ভিদের অপরিসীম বৈচিত্র্য বুঝতে কিংবা গবেষণার অনুপ্রেরণা নিতে এ গার্ডেনের জুড়ি মেলা ভার। এখানে প্রকৃতি যেন নিজেই রঙের তুলি হাতে একেকটি পাতা, ফুল ও গাছের গায়ে শিল্পকর্ম এঁকে দিয়েছে।

শহরের কোলাহল পেরিয়ে যখন কেউ এই গার্ডেনের পথে পা বাড়ায়, তখনই বদলে যায় সময়ের গতি। চারপাশের নিস্তব্ধতা ও পাখির কলতান এক মোহনীয় আবহ সৃষ্টি করে। নানা প্রজাতির গাছগাছালির মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়, প্রকৃতিই যেন এক অবারিত গ্রন্থাগার, যেখানে প্রতিটি গাছ-লতা একেকটি জীবন্ত অধ্যায়।

‘সবুজ গহন, ছায়া ঢাকা পথ, নিশ্চুপ শ্রাবণ, বৃষ্টি দেয় রথ।’

উদ্ভিদ গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু শুধু নৈসর্গিক সৌন্দর্যই নয়, বাকৃবির বোটানিক্যাল গার্ডেন হলো উদ্ভিদ গবেষণার এক নির্ভরযোগ্য ক্ষেত্র। এখানকার গাছপালা শুধু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে না, বরং গবেষকদের জন্য এক অফুরন্ত জ্ঞানের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে।

এই উদ্যানের বিভিন্ন অংশে সংরক্ষিত রয়েছে বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় গাছের সংগ্রহ। দেশীয় ও বিদেশি প্রজাতির বহু উদ্ভিদ এখানে সুস্থ ও পরিচর্যায় বেড়ে উঠছে। বিশেষ করে কৃষি ও উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষার্থীদের জন্য এটি এক পরীক্ষাগার, যেখানে হাতে-কলমে উদ্ভিদের নানা বৈশিষ্ট্য ও জীবনচক্র সম্পর্কে জানা যায়।

বছরের বিভিন্ন সময়ে এখানে নতুন নতুন প্রজাতির গাছ সংযোজন করা হয়। ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় এর রূপ, যেন প্রকৃতির নিজস্ব এক জীবন্ত ক্যালেন্ডার। বসন্তে মাধবীলতা, শিউলি আর কাঁঠালচাঁপার সুবাসিত পরশে মন ভরে ওঠে। বর্ষায় বৃক্ষরাজির সতেজতা নতুন প্রাণ পায়, আর শরতে কাশফুলের দোলা জানান দেয় উৎসবের আগমনী বার্তা।

পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা
বোটানিক্যাল গার্ডেন শুধু গবেষণা বা নান্দনিকতার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি পরিবেশ সুরক্ষায়ও বড় ভূমিকা রাখে। শহরের বাড়তি কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করে এই উদ্যান। পাশাপাশি এখানে সংরক্ষিত ঔষধি গাছগুলো ভবিষ্যৎ ওষুধ শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

এখানে রয়েছে নানা ধরনের ঔষধি গাছ, যেমন—অশ্বগন্ধা, তুলসী, বাসক, অর্জুন ও নিম। এগুলো শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা এসব গাছের গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করতে পারে এবং ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

‘বৃক্ষ বাঁচে, প্রাণ বাঁচে, সবুজে মোড়া স্বপ্ন আঁকে।’

বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদের সংগ্রহশালা
বাকৃবির বোটানিক্যাল গার্ডেনে ৩০টিরও বেশি আলাদা আলাদা জোন রয়েছে, যেখানে বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ সংরক্ষিত। উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ হলো—

পাম সাইকাড জোন: এখানে ৩৩ প্রজাতির পাম গাছ রয়েছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

সুন্দরবন জোন: বাংলাদেশের সুন্দরবনের পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গঠিত, যেখানে সুন্দরি, গরান, কেওড়া, পশুরসহ নানা ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ আছে।

ক্যাকটাস ও সাকুলেন্ট হাউস: এখানে ৬০টিরও বেশি প্রজাতির ক্যাকটাস সংরক্ষিত, যা দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ ক্যাকটাস lm প্রজাতির ঔষধি গাছ।

শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত
শুধু গবেষক বা শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বাকৃবির বোটানিক্যাল গার্ডেন সাধারণ দর্শনার্থীদের কাছেও দারুণ আকর্ষণীয়। প্রতিদিন এখানে প্রকৃতিপ্রেমী, ফটোগ্রাফার ও পর্যটকরা ভিড় করেন। কেউ আসে গাছের ছায়ায় বসে একটু নির্জনতা খুঁজতে, কেউবা ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করতে চায় প্রকৃতির সৌন্দর্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি মুক্তাঙ্গন, যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে মন ফুরফুরে হয়ে ওঠে। ক্লাসের ব্যস্ততা কাটিয়ে, গবেষণার ক্লান্তি ভুলে, বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে এখানে সময় কাটানো যেন এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এখন এই উদ্যানের বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে নতুন ওষুধের সন্ধান করছেন, যা ভবিষ্যতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

সবশেষে বলা যায়, বাকৃবির বোটানিক্যাল গার্ডেন শুধু একটি উদ্যান নয়, এটি প্রকৃতির এক জীবন্ত পাঠশালা। গবেষক, শিক্ষার্থী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি এক অফুরন্ত সম্ভাবনার ক্ষেত্র। প্রকৃতিকে ভালোবাসতে, সংরক্ষণ করতে এবং তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এর চেয়ে সুন্দর জায়গা আর কী হতে পারে?

আরবি/এসআর

Link copied!