ঢাকা সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

৪ বছরেও সঠিক বিচার পাননি নাহিদ

রিপন বারী (জাবি)

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ০৮:৩৮ পিএম

৪ বছরেও সঠিক বিচার পাননি নাহিদ

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

জাবি: শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার ভ্যান চালক নাহিদ হোসেন ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাশাসন থেকে ন্যায্য বিচার পান নি।  তিনি বিচার না পাওয়ায় তৎকালীন প্রশাসনকে দুষছেন।

রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রতিনিধিকে বিষয়টি অবগত করেন নাহিদ। এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ( নিরাপত্তা-১) সুদীপ্ত শাহিনের দ্বারা নির্যাতিত ২০২১ সালের হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারী মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে আবেদন করে। একই মাসের ২৫ তারিখ তাকে ‘সত্যাসত্য যাচাই কমিটিতে সাক্ষাৎকার দিতে রেজিস্ট্রার ভবনে উপস্থিত’ থাকার কথা বলা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সেখানে তিনি তার অভিযোগপত্র দাখিল করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিচার চেয়েছিল নাহিদ।

অভিযোগ পত্রের বিবরণে নাহিদ বলেছিলেন, করোনা মহামারীর কারণে রোজগার বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের অনুরোধে হল থেকে তাদের বেডিং, ও বই পুস্তক ভ্যানে দিয়ে ক্যাম্পাসের বাহিরে বহন করে নিতাম। তারা আমাকে যা সাহায্য করত তা দিয়ে এবং আমি দিনমজুর হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে যা আয় করতাম তা দিয়ে কোন রকম সংসারে দু‍‍`বেলা খাবার জোগাতাম। 

ঘটনার দিন গত ১৬-১০-২০২০ইং তারিখ সকাল আনুমানিক  ৯ টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব মরিয়ম আক্তার লিজার বোন আমাকে ফোন করে বলল যে লিজা ম্যাডাম বিকাল ৪ টার সময় তার অসুস্থ বাবাকে নিয়ে প্রান্তিক গেটে আসবেন এবং আমি যেন তাদেরকে আমার ভ্যান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের শিক্ষক কোয়াটারে পৌঁছে দেই। 

এরপর আবারো তারা আমাকে বিকাল ৩ টার সময় প্রান্তিক গেটে আসার জন্য ফোন করে। তখনই আমি । এরপর আবারো তারা আমাকে বিকাল ৩ টার সময় প্রান্তিক গেটে আসার জন্য ফোন করে। তখনই আমি ভ্যান নিয়ে বাসা থেকে প্রান্তিক গেটের উদ্দেশে বের হই। আমি প্রন্তিক গেটের দিকে যাবার পথে সুদীপ্ত শাহিন তাকে ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর চৌরঙ্গী এলাকা থেকে আটক করেন। 

একটু পর উজ্জল নামের এক গার্ড চলে আসে, তখন জনাব সুদীপ্ত তাকে বলে - ওকে ধর - রুমে নিয়ে যা। আমাকে টেনে হেঁচড়ে রুমে নিয়ে যায়। উজ্জল আমার হাত ২টি পিছন দিকে টেনে ধরে আর জনাব সুদীপ্ত শাহিন আমাকে লাঠিদিয়ে বেধরক পিটাতে থাকে। যখন আঘাতের ব্যাথায় আমি চিৎকার করতে থাকি তখন তিনি আমার মুখের ভিতর লাঠি ঢুকিয়ে দেয়।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, তিন ঘণ্টা সেখানে আটকে আমাকে লাঠি দিয়ে নির্দয়ভাবে মারধর করেন শাহিন। এরপর রাত ৯:৩০ মিনিটে আবার জনাব সুদীপ্ত শাহিন বাইক চালিয়ে আসেন এবং বাইক থেকে নেমে বলেন হারামজাদাটা কি করে। গার্ড বললো বসে আছে, দাড়াতে পারছেনা, স্যার পা ফুলে গেছে। জনাব সুদীপ্ত শাহিন বলেন ও যদি রুম থেকে পায়ে হেঁটে ভ্যানের কাছে না যেতে পারে তা হলে ইয়াবা দিয়ে থানায় বা পুলিশে দিবো। একথা শুনে আমি ভয়ে দেয়াল ধরে দাড়াই ও আস্তে আস্তে ভ্যানের কাছে যাই। তখন তিনি আবার আমাকে বলেন- আমার ভয়ংকর রূপ দেখছিস, কাউকে কিছু না বলে ভ্যান নিয়ে সোজা চলে যা। আমি যদি শুনি আজকের ঘটনা কাউকে বলছিস তোকে মেরে ফেলবো। আমি চিৎকার করতে থাকলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে, আমার মুখে তোয়ালে ঢুকিয়ে দিয়ে তারপর মারবেন।

এছাড়াও তাকে এই শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে যে, সে কাউকে কিছু বলবে না। না হলে তাকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আমি ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি। চিকিৎসার জন্য আমার স্ত্রী আমাকে সিআরপি (পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র)  তে নিয়ে যায়। সেখানে অনেক টাকা খরচ হয়।

শুরুরদিকে ক্যাম্পাসের ছাত্র-ছাত্রী ভাইবোনদের কাছ থেকে অর্থ ধার-কর্য নিয়ে চলেছিলাম। পরে উপায় না দেখে আমার গ্রামের বাড়িতে কিছু জমি ছিলো সেগুলো বিক্রি করে চিকিৎসা ব্যায় বহন করি। এখনও আমার পা ভালো হয় নাই। আমি একটু একটু করে স্ট্রেচারে ভর দিয়ে হাঁটি। বর্তমানে আমি আমার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় আছি এবং আমার ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে চরম হতাশায় দিন পার করছি।

বর্তমানে নাহিদ হোসেন শহীদ সালাম বরকত হলে ডাইনিং এ কাজ করার পাশাপাশি রিকশা চালিয়ে সংসার খরচ চালান। তিনি জানান আমি সুদীপ্ত শাহীনের বিচার চাই এবং আমার ক্ষতিপূরণ চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার ড. এ বি এম আজিজুর রহমান জানান, চার বছর আগের ঘটনা তো, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কি ছিল সেটা দেখলে বোঝা যাবে। আর তদন্ত কমিটির সুপারিশে কত টুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সেটাও দেখা যাবে।

 

আরবি/এস

Link copied!