ঢাকা সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

জাবির শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ০৮:০৮ পিএম

জাবির শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আমির হোসেন ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে একই বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ৪৭ তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা বিভাগের সভাপতি বরাবর একটি অভিযোগ পত্র পেশ করেন।

অভিযোগ পত্রে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হেনস্তার বিষয়ে জানানো হয় এবং বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন।

অভিযোগ পত্রে বলা হয়,
১. বিভিন্ন সময়ে নারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হেনস্থা করা ছাত্রছাত্রীদের বডি শেমিং করা এবং ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ক্লাসে কথা বলা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি করে ক্লাসে এই বিষয়ে আলোচনা করা।

২. প্রেজেন্টেশনের সময় ছেলেদের যথাযথ অগ্রাধিকার না দেয়া এবং নাম্বার দেয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা।

৩. আমাদের ব্যাচের শিক্ষার্থী নারী কেলেংকারীতে জড়িত, এমন গুরুতর মিথ্যা অভিযোগ অন্যান্য ব্যাচের ক্লাসে গিয়ে প্রচার করা।

৪. আমরা প্রথমবর্ষে থাকাকালীন আমাদের একটি ব্যক্তি উদ্যোগে ভ্রমণ নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছে ও অন্যান্য ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে গিয়ে কটুক্তি করা, ছেলে মেয়েদের নামে অত্যন্ত নিন্দনীয় তথ্য ছড়ানো ও তাদের চারিত্রিক বিষয়ে প্রশ্ন তোলা। এই ভ্রমণের জেরে পরবর্তীতে তার রুমে ক্লাসের সবাইকে ডেকে নেয়া ও তার রুমের সামনে ছেলে মেয়ে সবাইকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ফোন করে নানারকম অপমানজনক কথা বলা ও ধমকানো। প্রথম বর্ষ, প্রথমে সেমিস্টারের ভাইভার সময় ভাইভা চলাকালে কারা ঘুরতে গিয়েছিল তাদের তালিকা নিয়ে ভাইয়া বোর্ডে থাকা শিক্ষকদের কাছে জমা দিয়ে ওই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা। উক্ত ভাইভাতে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের এই ভ্রমণটি নিয়ে নানারকম প্রশ্ন করা হয়।

৫. ক্লাসে পড়ানো বাদ দিয়ে যত অপ্রাসঙ্গিক বিষয় (যেমন গীবত করা, শিক্ষকসুলভ আচরণ না করা, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য) নিয়ে আলোচনা করা। সিলেবাসের পড়া তো দূরের কথা, পরীক্ষার জন্য ন্যূনতম কিছু না পড়ানো। ৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টারে রিসার্চ মেথোডলজি কোর্সে রিসার্চ কি এই কথা দিয়ে আলোচনা শুরু করে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে চলে যাওয়া। প্রতি ক্লাসে এই এক লাইন ব্যাতিত আর কোনো লেখাপড়া হয় নি।

উল্লেখ্য তিনি ১ম বর্ষ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যত কোর্স নিয়েছেন, সকল কোর্সেই একই কাজ করেছেন। ১ম বর্ষে উনার কোর্সগুলোতে (আর্থ সায়েন্স, সয়েল সায়েল) সকলের রেজাল্ট খারাপ হয়েছিল। ইচ্ছাকৃত আমাদের উপর মানসিক অত্যাচার করেন যার ফলশ্রুতিতে প্রথম বর্ষের রেজাল্ট তুলনামূলক খারাপ হয়। উল্লেখ্য তিনি বিভাগের তৎকালীন সভাপতি ছিলেন।

৬. প্রথম বর্ষের ১ম সেমিস্টারের প্রথম রমজান শুক্রবার সকালে বৃষ্টির মধ্যে শ্রেণি-প্রতিনিধিকে ফোন দিয়ে তাৎক্ষনিক ক্লাস নেয়ার কথা বলা। যারা উল্লেখ্য দিনে উপস্থিত হতে পেরেছিল তাদের ৪টি ক্লাসের উপস্থিতি দেয়া ও যারা ছিল না তাদের ৪ টি ক্লাসের উপস্থিতি কেটে দেয়া। তিনি উক্ত অ্যাটেন্ডেন্স শীটে বিভিন্ন সময় ছাত্রছাত্রীদের নাম মার্ক করে রাখেন এবং মাস্টার্সে আসার পরও ঐ একই শীটের ভিত্তিতে ক্লাসে রোলকল করেন।

৭. কোন শিক্ষার্থী তিনি ব্যতিত অন্য কোন সুপারভাইজারের অধীনে কাজ করলে এই নিয়ে ক্লাসে তাদের হেনস্তা করা। "তোমরা গবেষণার কি বুঝো যে গবেষণা করো।" এই ধরণের মন্তব্য করে গবেষণা কাজে নিরুৎসাহিত করা।

৮. ক্লাসে অন্যান্য শিক্ষকদের নামে কটূক্তি করা ও তাদের নানারকম ব্যাঙ্গাত্মক নামে ডাকা। অনেক সময় শিক্ষকের নাম ধরেও বদনাম করা, যেমন ‍‍`পেটমোটা ও খাটোটা মিলে আমার প্রোমোশন আটকাতে চেয়েছিল", "একজন তো টিস্যু পেপার এর মত পেপার পাবলিশ করে", "যোগ্যতাহীন শিক্ষকে ডিপার্টমেন্ট ভরে গেছে", "একজন যে কি কথা বলে কিছুই বোঝা যায়না", "আন্দোলনে আমাকে দেখা যায়নায় কারণ আমি এই ডিপার্টমেন্টের একজন শিক্ষকের মত ক্যামেরার সামনে গিয়ে নাচানাচি করি নাই", "প্রাক্তন চেয়ারম্যান একটা চোর ছিল, চেয়ারম্যান হওয়ার পর নিজের রুম সাজায়- ক
 

রুমে হাতিলের ফার্নিচার কেনে", "জিআইএস ল্যাবের নামে এক শিক্ষক টাকা খেয়েছে, ল্যাবের জন্য সব নষ্ট কম্পিউটার কিনেছে", "শিক্ষক হয়ে গেছে অথচ শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে না", "ওই শিক্ষকের ছেলে হোটেলে ঘুরতে গেছিলো‍‍`। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষককে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন নামে, ‍‍`ব্ল্যাকডগ", "তেলবাজ", "দুর্নীতিবাজ", "পেটমেটা", "টাকলু", "তালগাছ", "বহিট্টা" এবং শিক্ষার্থীদের "মুরগীর বাচ্চা", "ব্লুটুথ বয়", "ছোট মরিচ" ইত্যাদি অযাচিত শব্দ ব্যবহার করে সম্বোধন করা। শিক্ষকদের বডি শেমিং করা, শিক্ষকদের গবেষণা ও টাকা পয়সার উৎস নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা, মিথ্যাচার করা, বিভাগের সাবেক একজন সভাপতি ও তার ছেলেকে নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের কাছে কুৎসাও রটানো।

এছাড়াও তাদের কিছু দাবি অভিযোগ পত্রে যুক্ত করা হয়,
১. ২০২১-২২ স্নাতোকোত্তর শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটি থেকে তাকে অপসারণ করা।

২. এই শিক্ষাবর্ষে আমরা তার অধীনে কোনো কোর্স বা ক্লাস করতে ইচ্ছুক নই, তাই তাকে উক্ত কোর্সের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে অন্য দারিত্বশীল ও যোগ্য শিক্ষককে নিযুক্ত করা।

৩. উনি আমাদের কোনো কোর্সের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় পরীক্ষক হিসেবে থাকবেন না, এটি নিশ্চিত করা।

৪. ভবিষ্যতে যাতে এই ডিপার্টমেন্টে কোনো ব্যাচ বা শিক্ষার্থী যেন এ ধরনের ঘটনাগুলোর সম্মুখীন না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৫. আমাদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুনরায় ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে যেন পরীক্ষার ফলাফলে কোন প্রভাব না পড়ে তা নিশ্চিত করা।

৬. উপরে উল্লেখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অধ্যাপক ড. আমির হোসেন ভূঁইয়াকে সকল ধরণের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি পূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করে যথাযথ ব্যবস্থা দেয়া।

এ বিষয়ে উপ উপাচার্য (প্রশাসন)  সোহেল আহমেদ বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি ন্যূনতম সময়ে যত দ্রুত সম্ভব হয় ব্যবস্থা নেব। তোমাদের যে তারিখে পরীক্ষা আছে সেই তারিখেই যেন হয়। তোমরা স্বাধীনভাবে মুক্তভাবে যেন পরীক্ষা দিতে পারো সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরবি/এস

Link copied!