রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আরিফুজ্জামান কোরবান, রাবি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৪, ০৩:৪২ পিএম

স্বপ্নভঙ্গ রাবি শিক্ষার্থী রফিকুলের

অনার্সে ফার্স্ট হলেও ‍‍‘শিবির’ সন্দেহে‍‍ খাটানো হয় জেল, বাতিল হয় ছাত্রত্ব

আরিফুজ্জামান কোরবান, রাবি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৪, ০৩:৪২ পিএম

অনার্সে ফার্স্ট হলেও ‍‍‘শিবির’ সন্দেহে‍‍ খাটানো হয় জেল, বাতিল হয় ছাত্রত্ব

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার অদম্য স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফলিত গণিত বিভাগে। তুখোড় মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন স্কুল, কলেজসহ সকল পরীক্ষায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরও এই ধারাবাহিকতায় ব্যত্যয় ঘটেনি।

২০০৮ সালে প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হন রফিক। কিন্তু নোংরা রাজনীতির স্বীকার হতে হয় মেধাবী ও স্বপ্নবাজ এই তরুণকে। ভালো ফলাফল করায় শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফলিত গণিত বিভাগ থেকে তুলে নিয়ে পুলিশে সোপর্দ করলে বিনা দোষে ৪ মাস ৭ দিন কারাবরণ করতে হয়েছে তাকে। 

তবে পড়াশোনার প্রতি অদম্য আগ্রহের কারণে কারাবন্দী থেকেই দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সেখানেও প্রথম হন রফিকুল। এভাবেই নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে অনার্সে ৩.৮০ পেয়ে বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এবার স্বপ্ন পূরণের পথে হাটার পালা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যেই অদম্য স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি, সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেননি তারই বিভাগের তিন শিক্ষক। মাস্টার্সের থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ এনে তার ছাত্রত্ব বাতিল করে দেওয়া হয়।

রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনার্সে প্রথম স্থান অর্জন করে ২০১৪ সালে বিভাগের তৎকালীন সভাপতি (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সরকারের অধীনে মাস্টার্সের থিসিস নেন তিনি। এদিকে, ২০১৪ সালের ১১ আগস্ট ফলিত গণিত বিভাগে দু’জন প্রভাষক চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মাস্টার্সের ফলাফল প্রকাশ না হওয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সার্টিফিকেট দেখিয়ে রফিকুলও এ নিয়োগে আবেদন করেন। কিন্তু নিয়োগ বোর্ডে মাস্টার্সের সনদ দেখাতে হবে বলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এসময় রফিকুলের থিসিস সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম সরকারের বিরুদ্ধে সিলগালা প্যাকেট খুলে নম্বরপত্র টেম্পারিংয়ের অভিযোগ এনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন বিভাগের শিক্ষক ড. আব্দুল হক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফলাফল প্রকাশ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। এদিকে, ২০১৫ সালের ২৮ জুন এমএসসি পরীক্ষা শেষ হলেও ৮ মাসেও ফলাফল প্রকাশ করা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায় রফিকুলের।

ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর জানায়, বিভাগের আটজন শিক্ষক ফলাফল প্রকাশের পক্ষে থাকলেও শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলি আকবর ও অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুজ্জামান খান চাননি ফলাফল প্রকাশ হোক। ফলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং সেখানে বলা হয় তদন্ত প্রতিবেদন না হওয়া পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণা স্থগিত থাকবে।

পরে ২০১৫ সালের ২০ আগস্ট তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহা. রেজাউল করিম থিসিস পেপার জালিয়াতি ও হাতে নকল নম্বর আনার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন রফিকুলকে। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬১তম সিন্ডিকেটে ১৩৭ নং সিদ্ধান্তে মাস্টার্সের রেজিস্টেশন বাতিলের মাধ্যমে রফিকুলের ছাত্রত্ব বাতিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন।

ছাত্রত্ব বাতিল করা হলেও রফিকুল থেমে থাকেননি। ২০১৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) গণিত বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৪.০০ পেয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে, রফিকুল ২০২৪ সালে চীনের ডালিয়ান ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং মেকানিক্স বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

এদিকে, দেশের ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীবের কাছে রেজিস্টেশন পূনর্বহাল ও ফলাফল প্রকাশের দাবি জানিয়ে গত ৩ অক্টোবর লিখিত অভিযোগ দেন রফিকুল ইসলাম। 

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, প্রভাষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদি গোষ্ঠী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রফিকুলের বিরুদ্ধে এসব করেন। এভাবেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রভাষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে রফিকুলকে বঞ্চিত করা হয়। এছাড়াও মাস্টার্সের সব পরীক্ষা শেষ করলেও থিসিস জালিয়াতির অভিযোগে এনে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।

অভিযোগপত্রে রফিকুলের ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য অভিযুক্ত তিন শিক্ষক হলেন- বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. আলি আকবর, অধ্যাপক ড. আব্দুল হক ও অধ্যাপক ড. আশরাফুজ্জামান খান।

অভিযোগের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ন্যায্য বিচারের দাবিতে বর্তমান প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে আমার একটাই দাবি, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের মাধ্যমে মাস্টার্সের রেজিস্ট্রেশন পুনর্বহাল করে আমার ফলাফল প্রকাশ করা হোক।

তবে অভিযুক্ত শিক্ষকদের সাথে কথা বললে তারা কেউই বিষয়টি স্বীকার করেননি। অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. আশরাফুজ্জামান খান বলেন, আমার নামে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ কে দিয়েছে সেটি আমার জানা নেই। আর নকল করার কারণে রফিকুল ইসলামের ছাতত্ব বাতিল হয়েছে এটি সত্য। একজন ছাত্র যদি নকল করে আর সে বিষয়ে অভিযোগ করলে যদি দোষ হয়, তাহলে আমার বলার কিছু নেই। 

অধ্যাপক ড. আলি আকবর বলেন, রফিকুল ইসলামের মাস্টার্সের পরীক্ষা কমিটিতে আমি কোন পদেই ছিলাম না; তবুও কেন আমার নামে অভিযোগ করা হয়েছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই। 

রফিকুলের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তার থিসিস সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সরকার বলেন, রফিক তার সুবিচার পাওয়ার অধিকার রাখে। মাস্টার্সের সবকিছু শেষ করেও অন্যায়ভাবে তার ফলাফল বাতিল করা হয়েছে। রফিকের অন্যায় ছিল সে ভিন্নমত পোষণ করতেন। এছাড়াও থিসিস সুপার ভাইজার হিসেবে আমাকেও পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ থেকে আজীবন বিরত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আমি চাই, রফিক তার অধিকার ফিরে পাক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তার মাস্টার্সের ফলাফল প্রকাশ করুক। 

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমরা রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেলে পাঠানো হয়। সেখান থেকে কিছু পরামর্শ আসছে আমাদের কাছে, যার ফলশ্রুতিতে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ নিয়ে কাজ করছেন।

 

আরবি/ এইচএম

Link copied!