ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অভয়ারণ্যের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে মেহেদী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৬ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১২ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরে এই মেহেদী উৎসব পালিত হয়। মেহেদী উৎসব পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীবৃন্দ ৷
এদিন, প্রকৌশল অফিসের পার্শ্ববর্তী অভয়ারণ্যের নিজস্ব বাগানে উৎপাদিত মেহেদী পাতা দিয়ে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের হাতে মেহেদীর আর্ট, হেয়ার প্যাক, কলকা দেওয়া, আলতা দেওয়া, ঐতিহ্যবাহী পটপাট এবং পাতার গান পরিবেশন করে অভয়ারণ্যের সদস্যরা।
উৎসবে আগত নবীন শিক্ষার্থীরা বলেন, শুনেছি এবারই প্রথম ক্যাম্পাসে এভাবে বড় আয়োজন করে মেহেদী উৎসব পালন হচ্ছে। ক্যাম্পাসে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই এরকম সুন্দর একটি উৎসব পেয়ে আমাদের খুবই ভালো লাগছে। চারপাশে একটা উৎসব উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। নতুন ক্যাম্পাসে এসেই এরকম আয়োজন পাওয়ার অনূভুতি আসলে ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না।
আয়োজকরা জানান, মেহেদী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে মূলত নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে যাতে তারা ক্যাম্পাসকে আরো সুন্দরভাবে গ্রহণ করতে পারে। এছাড়াও, এই আয়োজনে তারা বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ছোটবেলায় অনেকেই মেহেদী নিতাম কিন্তু কালের ক্রমান্বয়ে সেটা হারিয়ে যেতে বসেছে। আলতা, কলকা দেওয়ার রীতিও আগের মতো আর নেই৷ এই জিনিসগুলো জীবন্ত রাখতেই অভয়ারণ্যের এই প্রয়াস।
অভয়ারণ্যের সভাপতি ইশতিয়াক ইমন বলেন, ২ বছর আগে আমরা মেহেদী উদ্যানে ৬০ টি মেহেদী গাছ লাগিয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ ছিলো ক্যাম্পাসে একটি মেহেদী উৎসব করা এবং সেখান থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে পরিবেশবাদী কাজ করা। আমরা নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চায় বিশ্বাস করি। এজন্য কলকা, আলপনা, বাঙ্গালীয়ানা নাচ গানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কারণ, দেশীয় চর্চা ভূলে গেলে আমরা জাতিগতভাবে অনেকটাই পিছিয়ে যাব। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা গাছের কতটা মূল্যায়ন দেওয়া উচিত আর বাঙ্গালী সংস্কৃতির কতটা মূল্যায়ন দেওয়া উচিত।
ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, অভয়ারণ্যের অসাধারণ আয়োজনের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমাদের বৈষম্যহীন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার যে স্বপ্ন যেখানে সব ধরনের সংস্কৃতি, সব ধরনের কালচার নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বমহীমায় বিরাজ করবে, আজকের মেহেদী উৎসবের মাধ্যমে তার নতুন যাত্রা শুরু হবে। অন্যান্য সংগঠনের প্রতি আহবান থাকবে তারাও যেন নিজ নিজ কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসকে আরো সুন্দর করে।
ইবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, পরিবেশবাদী সংগঠন অভয়ারণ্যের আজকের এই আয়োজন দেখে আমার খুবই ভালো লাগছে। তারা নিজেদের উৎপাদিত গাছে নিজেরা মেহেদী পাতা বেটে মেহেদী উৎসব পালন করছে, এটা খুবই চমৎকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করেই আমাদের নতুন বাংলাদেশের পথচলা। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেহেদী উৎসব হচ্ছে, বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান সামনেও হবে। সবাই মিলেই একটি সুন্দর, সমৃদ্ধশালী ও বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস তৈরি করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :