আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেয়েছি ১৯৭১ সালে। কিন্তু ৭১ সালে ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেলেও নাগরিক স্বাধীনতা ছিলো না, কথা বলার স্বাধীনতা ছিলো না। ৭ নভেম্বর সেই দিন যেদিন বাংলাদেশর স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দান করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের মহানায়ক জিয়াউর রহমান গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও রচনা পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এ কথা বলেন।
রাবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ৭ নভেম্বর সেই দিন যেদিন বাংলাদেশর স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করেছে। আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেয়েছি ১৯৭১ সালে। কিন্তু ৭১ সালে ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেলেও নাগরিক স্বাধীনতা ছিলো না, কথা বলার স্বাধীনতা ছিলো না। এই না থাকার মধ্যে আবারও হাতে কুড়াল নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিতা গণতন্ত্রের বৃক্ষকে কেটে টুকরো টুকরো করে বাকশাল গঠন করলেন। সেই বাকশালের বিষবৃক্ষ উপরে দিয়ে সেদিন ক্যন্টনমেন্ট থেকে সিপাহি এবং বাড়ি বাড়ি থেকে জনতা রাস্তায় নেমে পড়ে। ৭ নভেম্বরের চেতনা ছিলো স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার ও প্রতিষ্ঠিত করা। সার্বভৌমত্বকে অটুটভাবে শক্তিশালী করাই হচ্ছে ৭ নভেম্বর।
রাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, যে জায়গা দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করছি, আজ থেকে ৩২ বছর আগে এখান থেকেই বক্তৃতা করে বিদায় নিয়েছি। ৮০ দশকের যে বিশ্ববিদ্যালয়, সেই বিশ্ববিদ্যালয় আমি দেখছি। আরেকটি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমরা সম্পৃক্ত ছিলাম। লেখাপড়া, তরুণ-তরুণীদের সেই দিন, আর রাজনীতির সেই উত্তপ্ত মতিহারের সবুজ চত্বর, আবার যেন আমার কাছে ৩৪ বছর আগের মতো ফিরে এসেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ৫ আগস্টের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পরে দেশের কিছু সংবাদ মাধ্যম এখনও খুনি হাসিনার পালিয়ে যাওয়া শব্দটি সংবাদ মাধ্যমে ব্যবহার করতে ভয় পাচ্ছে বা লজ্জা পাচ্ছে। অধিকাংশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যায় নি বরং পালিয়ে গেছেন। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের যে সারাংশ এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর পরবর্তী যে সারাংশ দুটো একই শুধু অন্যভাবে ঘটেছে। ৫ আগস্টের পরে আজ ৩ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও কিভাবে একটা ফ্যাসিস্ট শক্তি বাংলাদেশ কে পিছিয়ে দেওয়া জন্য গভীর ষড়যন্ত্রের লিপ্ত রয়েছে। ঠিক তেমনি ষড়যন্ত্র হয়েছিলো ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহি জনতার বিল্পবের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বিপ্লবের যে স্পিরিট ধারণ করা হয়েছিলো তখন ষড়যন্ত্র করেছিলো যারা ঠিক আজেকেও সেভাবে ষড়যন্ত্র করছে।
প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ইসলামী বিশ্বিবদ্যালয়ের (ইবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৭ই মার্চ আমরা একটা ঘোষণা শুনতে পেয়েছিলাম যেখানে বলা হয়েছে আমি মেজর জিয়া বলছি। যেসময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা মঞ্চে থাকার কথা,আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা সেসময় রাজনৈতিক নেতাকর্মী অর্থাৎ আওয়ামিলীগের কোনো নেতাকর্মীকে পাওয়া যায়নি। যখন দিশেহারা ছিলো, কি করবে তারা বুঝতে পারতেছিলো না ঠিক সেসময় এই ঘোষণাটি আমাদের উজ্জীবিত করেছিলো। আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশকে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলা৷ মূল লক্ষ্য ছিলো বাক স্বাধীনতা, সংবাপত্রের স্বাধীনতা ও অন্যান্য সকল মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু ৭২ এর পরবর্তী সরকার এই দেশে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিলো । জনজীবনে নিরাপত্তার অভাব, নৈরাজ্য ও দুর্ভিক্ষে এদেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল।
ছাত্রদলের রাবি শাখার আহবায়ক সুলতান আহমেদ রাহীর সভাপতিত্বে কেন্দ্র, মহানগর ও ক্যাম্পাসের প্রায় ৫ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :