ঢাকা রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫

দুই শিক্ষককে চাকরিচ্যুতিসহ ৯ দফা দাবিতে রুয়েটের প্রশাসন ভবনে তালা

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম

দুই শিক্ষককে চাকরিচ্যুতিসহ ৯ দফা দাবিতে রুয়েটের প্রশাসন ভবনে তালা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দুই শিক্ষকের চাকরিচ্যুতি, পরীক্ষার খাতায় কোডিং সিস্টেম ও স্বৈরাচারী সরকারের আমলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণসহ ৯ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) প্রশাসনিক ভবন ও সিভিল অনুষদের ডিনের কার্যালয়ে তালা দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

বুধবার ১৫ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা ঘটনার পরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচিটি পালন করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্ত্বরে কর্মসূচিটি শুরু করেন। পরে বিকেল সোয়া ৪ টায় উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

রুয়েটের অভিযুক্ত শিক্ষক দুজন হলেন, সহকারী অধ্যাপক গোলাম মোস্তাকিম ও সিভিল অনুষদের ডিন কামরুজ্জামান রিপন।

আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১০ আগস্ট  ‘রুয়েটের অভ্যন্তরীণ ও প্রশাসনিক সংস্কারের’ লক্ষ্যে এক দিনের মধ্যে সব ধরনের দলীয় রাজনীতিমুক্ত রুয়েট ঘোষণাসহ ১২ দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর আবেদন করেন রুয়েট শিক্ষার্থীরা। এ দাবি সম্পুর্নরূপে না মেনে নেওয়া এবং এক বিষয়ে ফেল করে স্নাতক আটকে থাকার হতাশায় আরবান প্ল্যানিং (ইউআরপি) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান আত্মহত্যায় অভিযুক্ত শিক্ষকদ্বয়ের পদত্যাগের দাবিতে সকাল সাড়ে ৯টায় বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে। পরে পৌনে ১১টার দিকে প্রশাসন ভবন, প্রধান ফটক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিনের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুর রাজ্জাক আসেন। এ সময় দাবিগুলো মেনে নিতে সময় চায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এতে ভূয়া ভূয়া স্লোগান দেয়।

শিক্ষার্থীদের অন্য দাবি গুলো হলো- সেমিস্টারের রেজাল্ট ও গ্রেডশীট দ্রুত প্রকাশ করতে হবে; শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে; প্রতি মাসে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সেশন আয়োজন করতে হবে; হজোর মোড়ের ঘটনায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চার্জশিট প্রদান করতে হবে; শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের প্রতি সদাচরণ করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে জমাকৃত ১২ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্কিটেকচার বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাফিন আশরাফ বলেন, ‍‍`শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করায় অভিযোগে দুই শিক্ষকে আজকের ভেতর চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমাদের সেমিস্টার ফাইনালসহ পরীক্ষার খাতায় সরাসরি নাম লেখার পরিবর্তে কোডিং সিস্টেম চালু ও স্বৈরাচারী সরকারের আমলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। এ ছাড়াও আমাদের অন্যান্য দাবি গুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে একাডেমিক কমিটি ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মেনে নিতে হবে।

আন্দোলনরত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, ‍‍`রুয়েটের বেশ কয়েকজন শিক্ষক রয়েছে যাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেন। ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিক সমস্যা ভোগেন। গত কয়েক বছরে রুয়েটের অন্তত ৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাই আমরা চাইনা এমন শিক্ষকেরা আর চাকরিতে বহাল থাকুন এবং নতুন কোনো শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় পড়ুক।‍‍`

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মেনে নেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীরা যে দুজন শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে সেটি আজকের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে নগরের পদ্মা আবাসিক এলাকার পাশে হজোর মোড়ে স্থানীয়দের হামলায় রুয়েটের অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া গত ১০ জানুয়ারি রাতে নগরের একটি ছাত্রাবাস থেকে রুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের (২৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!