ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

ববিতে ছাত্রলীগের হামলা: অভিযুক্তরা পাঁচ মাসেও আসেনি শাস্তির আওতায়

ববি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ০৯:২০ এএম

ববিতে ছাত্রলীগের হামলা: অভিযুক্তরা পাঁচ মাসেও আসেনি শাস্তির আওতায়

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন গত বছরের ৩০ জুলাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের সভায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়। হামলার পাঁচ মাসেও হামলাকারীদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) প্রশাসন।

ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। পরবর্তীতে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পান  অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। নতুন উপাচার্য নিয়োগের পরপরই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের বিচারসহ আরো বেশ কিছু দাবি জানানো হয়। তবে ২ মাসের মাথায় গত ২৮ নভেম্বর ফাইল আটকে রাখা, কাজের গতিশীলতা না থাকাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ নিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কার্যালয়ে তালা শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে আলোচনাসভার মাধ্যমে ২২ দফা দাবি রেখে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এখনো বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলাকারী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত বছরের ১৮ জুলাই পুলিশ,বিজিবির সাথে সংঘর্ষ বাঁধে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংলগ্ন এলাকাবাসী। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়ানোয় নানাভাবে হয়রানি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকারবাসীকে। হামলাকারী ছাত্রলীগদের নেতৃত্বে পুলিশসহ এলাকাবাসীকে হয়রানি করা হয়। শিক্ষার্থীদের পাশে দাড়ানোয় মামলার স্বীকার হয়েছেন অনেকে।

কিন্তু হামলাকারীদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায়, হামলাকারীরা শিক্ষকদের সহায়তা নিয়মিত ক্লাস পরিক্ষা অংশগ্রহণ করছে। কেউ কেউ অবাধে ঘুরছে বিশ্ববিদ্যালয়  এলাকায়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কর্ণকাঠী গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক দিয়ে আমাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়। তখন আমরা ঘরে বসে থাকতে পারিনি। যারা যতটুকু পেরেছি শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি কিন্তু ১৮ তারিখের পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে থাকলে আমরা একা হয়ে পড়ি। তখন ছাত্রলীগ ও পুলিশ মিলে বাসায় বাসায় গিয়ে হয়রানি করে। ওইসময় আমিসহ অনেকেই বাড়ি ছাড়তে হয়েছিলো গ্রেফতারের ভয়ে।  কিন্তু শুনতে পারছি, তারা এখনো আগের মতোই চলাফেরা করেছে, যাদের দ্বারা আমরা নির্যাতিত হয়েছি, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।

প্রক্টর ও রেজিস্টার দফতর সূত্রে জানা যায় , গত ১৯ ডিসেম্বর শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য কার্যালয় থেকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয় রেজিস্ট্রার দফতরে। তবে, হামলাকারীদের সুনির্দিষ্ট নাম না থাকায় রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে উপাচার্য কার্যালয়ে হামলাকারীদের নাম চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। পরবর্তীতে হামলাকারীদের সনাক্তকরনের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিস বরাবর। জানা যায়, হামলাকারীদের শনাক্তকরণের জন্য সহিংসতায় আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হামলাকারীদের নাম চাওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন , ছাত্রদের ৩টি পক্ষ অভিযুক্তদের তালিকা জমা দিয়েছে। এগুলো বিচার বিশ্লেষণ চলমান রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এটি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাইলেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি না। বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমরা যাচাই বাছাই করছি। এখনও মামলার সিদ্ধান্ত হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে ।

আরবি/জেআই

Link copied!