ঢাকা রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ব্যক্তি উদ্যোগে ভাষার মাসে বইমেলা

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম

ব্যক্তি উদ্যোগে ভাষার মাসে বইমেলা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাবার সাথে সপ্তম শ্রেণির বই কেনার উদ্দেশে বাজারে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থী রমজান আলী (রঞ্জু)। তবে, মাত্র ৭টাকা বাকী থাকায় তার হাত থেকে বই রেখে দেয় দোকানী। পারিবারিক এমন অর্থনৈতিক টানাপোড়নের এক পর্যায়ে পড়াশোনা স্তিমিত হয়ে পড়ে।

অবশেষে পড়াশোনার পর্ব বাদ দিয়ে চলে আসেন কর্ম জীবনে। টানা ৬ বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। চাকরি থেকে পাওয়া অর্থ জমিয়ে নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলেন ‍‍`গিফট শপ‍‍` নামের প্রতিষ্ঠান।

পড়াশোনা ছেড়ে দিলেও বইয়ের প্রতি রমজানের প্রেমের ভাটা পড়ে নি। গিফটের দোকানের একটি তাকে(শেল্ফ) রাখতে শুরু করেন জনপ্রিয় কিছু বই। পরবর্তীতে শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুপ্রেরণায় তিনি বইয়ের সংগ্রহ বাড়াতে থাকেন। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে হুহু করে। মাত্র কয়েকবছরের ভেতরেই গিফট শপের তাকের পরিবর্তে প্রয়োজন হয়ে পড়ে পৃথক জায়গার। নির্ধারণ করা হয় নতুন জায়গা। তবে, রঞ্জু বিপাকে পড়ে যান কী হবে তার নতুন বইয়ের দোকানের নাম এই প্রশ্নে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার রানার পরামর্শে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আহমেদ ছফা লেখা উপন্যাস ‍‍`ওঙ্কার‍‍` এর নামে রাখেন নিজের প্রতিষ্ঠানের নাম।

উপন্যাসটি মূলত ৬৯-এর গণ–অভ্যুত্থানের সামাজিক, পারিবারিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রচিত।

লেখক চেয়েছেন, একটি গল্পের মাধ্যমে সেই সময়ের বাঙালির ত্যাগ, ভয়হীন পথচলা ও স্বাধীনতা পাওয়ার ক্ষেত্রে তপস্যার মিশেল দেখাতে।

‍‍`বইয়ের সঙ্গে সন্ধি‍‍` এই স্লোগান নিয়ে নাজ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন রঞ্জু। ‍‍`ওঙ্কার‍‍` এ শিক্ষার্থীরা বই ক্রয়ের পাশাপাশি বিনামূল্যে নিয়মিত বই ও পত্রিকা পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ ছাড়াও কোনো শিক্ষার্থী মাসে কমপক্ষে ২০ দিন এক ঘন্টা করে ওঙ্কারে বই পড়লে একটি বই  বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন।

এই বছর ভাষার মাসে একটি চমৎকার উদ্যোগ হাতে নেন তিনি। নিজ প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে তিনি আয়োজন করছেন ২১ দিনব্যাপী বইমেলার। পহেলা ফেব্রুয়ারির থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্ত্বরে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে মেলা। শনিবার দুপুর ১২ টায় ফিতা কেটে বইমেলার উদ্ভোদন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক।

উদ্ভোদনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান রাজু, অধ্যাপক আরিফ হায়দার প্রমুখ।  এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী ও ওঙ্কারের শুভাকাঙ্ক্ষীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

ওঙ্কার বইমেলার উদ্ভোদনী অনুষ্ঠানে ছাত্র উপদেষ্টা সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, ‍‍`মানুষের বুদ্ধিজাগতিক বিস্তারের জন্য বইয়ের কোন বিকল্প নেই। ওঙ্কার আজকে যে আয়োজনটি করেছে এটা প্রশংসার দাবিদার। পাঠকেরা এখানে এসে বই কিনবে। এতে অন্যরাও বইপড়ার প্রতি উৎসাহিত হবে। এই ওঙ্কার একদিন হয়তো একটি বৃহৎ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে পারে যদি পাঠকের ভালোবাসা পায়। ওঙ্কারের জন্য শুভকামনা রইল।‍‍`

একক স্টলের এ বইমেলায় রয়েছে ব্যাতিক্রমী কিছু উদ্যোগ। প্রথমত প্রতিটি বইয়ে থাকবে ওঙ্কারের ‍‍`বুকমার্ক‍‍`, দ্বিতীয়ত, এক হাজার টাকার বই কিনলে একটি চাবির রিং এবং তৃতীয়ত, ১৫ শত টাকার বই কিনলে একটি স্কেচ বুক পাবেন ক্রেতারা। এ ছাড়াও প্রত্যেক ক্রেতাই একটি করে কুপন পাবেন। কুপনের লটারি হবে বই মেলার সমাপনী দিনে। এ লটারির প্রথম তিনজন পাবেন এক গুচ্ছ বই।

ব্যতিক্রমী এমন উদ্যোগে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মেলার  দর্শনার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুল্লাহ মুহিব। তিনি বলেন, ‍‍`বিশ্ববিদ্যালয়ে বই মেলা হলে শিক্ষার্থীরা দেখতে আসে। বই পড়ে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পড়ার প্রবণতা বাড়ে। রঞ্জু ভাই তার ব্যবসার পাশাপাশি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যা আমাদের আসলেই আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।

বই মেলার বিষয়ে কথা হয় ওঙ্কারের সত্ত্বাধিকারী রমজান আলী রঞ্জুর সাথে। তিনি এ আয়োজনের বিষয়ে জানান, ‘আমি হয়ত অর্থাভাবে বই কিনতে পারিনি। তবে, বইয়ের প্রতি আমার প্রেমের কোনো কমতি নেই। এছাড়াও ছাত্রদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে একটি বইয়ের দোকান আছে এটা আরও প্রসারিত হোক। ফলে, আমি চিন্তা করলাম ভাষার মাসে একুশ দিন মেলা করব।’

আরবি/জেডআর

Link copied!