শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহা শুধু ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান নয়, ২৪ এর গণঅভ্যূত্থানেও তিনি প্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে ড. শামসুজ্জোহার ৫৬তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় রসায়ন বিভাগের আয়োজিত ‘জোহা স্মারক বক্তৃতা- ২০২৫’ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রদানকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘আমি দেখেছি ড. জোহাকে দলীয় চিন্তাভাবনার ভেতরে আটকে রেখে তার ব্যাপকতা এবং বিশালতা সংকীর্ণ করা হয়েছে। এর ফলে আমরা তার মর্যাদা সবাই মিলে তাকে ধারণ করতে পারি না। চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশে যেন আমরা এ সংকীর্ণ মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারি। তিনি আমাদের দেশের, আমাদের সবার। উনিশশো ঊনসত্তরে শহীদ জোহা যেমন প্রাসঙ্গিক ছিলেন চব্বিশের অভ্যুত্থানেও তিনি একইভাবে প্রাসঙ্গিক ছিলেন। বিগত দিনের মতো যেন তাকে আর দলীয় লেজুড়িকরণ করা না হয়।’
১৮ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মনে করেন রাবি উপাচার্য। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে আজকের দিনের চেয়ে বড় কোনো তারিখ হতে পারে না। এটা আমাদেরকে যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। শহীদ জোহা শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, তিনি এই দেশের সবার। শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ জোহাকে নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।
এদিন সকাল ৯টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার শাহাদৎবার্ষিকী পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দিনটিকে রাবিতে `শিক্ষক দিবস` হিসেবে পালন করা হয়। তবে দীর্ঘ ৫৬ বছর পরেও দিবসটি জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পায়নি।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি `শিক্ষার বাহন অথবা গণতান্ত্রিক জনশিক্ষা নীতির গোড়ার কথা` শীর্ষক একটি আলোচনা করেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে এখন যে শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান সেটাকে কোন বিচারেই গণতান্ত্রিক বলা যায় না। বৈষম্যহীন তো নয়ই, এই ব্যবস্থাকে ‘জাতীয়’বলা যায় কিনা তাহাও তর্কসাপেক্ষ। এই ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ সার্বজনীনতার অভাব। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য ক্রমবর্ধমান ধনসম্পদ বৈষম্যের ভিত্তিতে শিক্ষাদানের মধ্যেও বৈষম্যের প্রতিষ্ঠা।
[34764]
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা কিংবা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরও বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার কোন মৌলিক পরিবর্তন হয়নি। এদেশের বিরাজমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে তাই ‘আধা-ঔপনিবেশিক’বললে বড় কোন অন্যায় হয় না। ক্রমবর্ধমান ইংরেজি মাধ্যম আর ইংরেজি সংস্করণ শিক্ষার জয়জয়কারটা হিসাবে নিলেও এই সত্য প্রতীয়মান হয়।
এছাড়া তিনি, এই উপমহাদেশের শিক্ষানীতি ও বাংলা ভাষায় ইংরেজদের আধিপত্য, বিলেতে শিক্ষানীতির সংরক্ষণশীল পরিবর্তন ও খোদ ভারতবর্ষের মধ্যে-এই দেশের সামন্ত ও বুর্জোয়া শ্রেণীগুলির ইংরেজিপ্রীতি খোদ ইংরেজ পাদ্রী, ব্যবসায়ী মহল কিংবা সরকারের চাহিতেও অধিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে সমালোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন খান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মতিয়ার রহমান।
অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষক দিবসে শহীদ জোহাকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। তিনটি গ্রুপে তিনজন করে মোট নয়জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিলো।