বকেয়া বেতন পরিশোধ না করায় পরীক্ষা দিতে না দিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। গত সোমবার অনার্স প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় ইনকোর্স পরীক্ষায় বকেয়া বেতনের কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি। এমনকি শিক্ষার্থীর সঙ্গে দূর্বব্যবহারের অভিযোগও পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তেজগাঁও কলেজ ছাত্র অধিকার পরিষদ। মঙ্গলবার (৪মার্চ) এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ’শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতনের কারণে পরীক্ষা হল থেকে বের করে দেওয়ার মতো দুঃসাহস একজন প্রিন্সিপাল কীভাবে দেখালেন!
এটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। শিক্ষা হলো মৌলিক অধিকার, এবং একজন শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করা। অথচ, শুধুমাত্র আর্থিক কারণ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে না দেওয়া চরম অমানবিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ।
প্রশ্ন হলো, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তিনি পেলেন কীভাবে? এটি কি প্রতিষ্ঠানের কঠোর নীতির ফল, নাকি শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে দেখার প্রতিফলন? একজন শিক্ষকের উচিত মানবিকতা ও ন্যায়বোধ বজায় রাখা, কিন্তু যদি তিনি নিজেই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে দেন, তাহলে তার পেশাদারিত্ব নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
বেতন সংক্রান্ত বিষয় প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক স্তরে সমাধান করা উচিত, যা কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার কারণ হতে পারে না। এমন অমানবিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সমাজের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে।’
এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, “পরীক্ষার হলে প্রবেশের পর আমাদের বের করে দেওয়া হয় এবং মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি কিছু শিক্ষকের দুর্ব্যবহার এবং অভদ্র আচরণের শিকার হতে হয়েছে আমাদের। একজন শিক্ষক কীভাবে অনার্স শিক্ষার্থীদের সাথে ‘তুই-তোকারি’ করতে পারেন এবং চড় মারতে আসতে পারেন? আমাদের বেতনের টাকাতেই তো কলেজ চলে!”
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সাধারণত ফর্ম ফিলাপের আগে বেতন পরিশোধ করে। তেজগাঁও কলেজও এতদিন একই নিয়মে চলছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের সবখানে সংস্কার চলছে, তেজগাঁও কলেজেও সংস্কার চলছে,মানি। কিন্তু হঠাৎ করে পরীক্ষার আগে ঘোষণা না দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া অনৈতিক। অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশনি বা চাকরির মাধ্যমে নিজেদের খরচ চালায় এবং তারা সাধারণত বেতন পায় মাসের ১০ তারিখের পরে। যদি বেতন ছাড়া পরীক্ষা দিতে না দেওয়া হয়, তবে সেই হিসেব করে রুটিন তৈরি করা উচিত ছিল যেন সবাই বেতন পেয়ে কলেজের বকেয়া পরিশোধ করতে পারে।”
বেতন না দেওয়ার কারণ হিসেবে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী জানান, ‘অনেকদিন থেকেই আমাদের কলেজের বেতন কমানোর কথা চলছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য সব কলেজের তুলনায় তেজগাঁও কলেজের সকল খরচ অনেক বেশি। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে যাচ্ছে। শোনা গিয়েছিল প্রশাসন কর্তৃক বেতন কিছুটা কমানো হয়েছে, কিন্তু এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। কলেজের বেতন দিতে হয় অনলাইনের মাধ্যমে, সেখানে এখনও আগের বেতনই দেখায়। এসব বিষয়ের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা বেতন দিবো কীভাবে?’
শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কারণেই যদি তারা পরীক্ষা দিতে না পারেন, তবে কেন তাদের সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার করা হবে? কেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি সমাধান করা হবে না? ছাত্র অধিকার পরিষদ এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।