এইচএসসি পাশেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণিতে নিয়োগ

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৫, ১১:০০ পিএম

এইচএসসি পাশেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণিতে নিয়োগ

ছবি: সংগৃহীত

স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে একজনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে প্রথম শ্রেণির চাকরি দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব।

গত বছরের ১৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক শেখ সাদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তিনি আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপত্রের অফিস আদেশ ও পরীক্ষানিয়ন্ত্রক দপ্তরের প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রশাসন গত বছরের ১৮ নভেম্বর এক অফিস আদেশে মোমেন খন্দকার অপি নামে একজনকে নিয়োগ দেন।

কিন্ত, তখনও নিয়োগপ্রাপ্তর স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়নি। ফলাফল প্রকাশ হয় নিয়োগের প্রায় এক মাস পর ১২ ডিসেম্বর।

বিশ্ববিদ্যালয় জেষ্ঠ অধ্যাপকেরা বলছেন, দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির চাকরি পেতে হলে তাঁকে অবশ্যই স্নাতক পাস করতে হবে।

চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই নিয়োগ দিয়ে থাকলে সেটি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে।

তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগে ফলাফলের এ বাধ্যবাধকতা তাদের জানা ছিল না।

এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রমের তাড়া থাকায় এবং ভালো প্রোগ্রামার হিসেবে পরিচিত থাকায় তাকে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

নিয়োগ পাওয়া মোমেন খন্দকার অপি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

নিয়োগের প্রায় একমাস পর প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, তিনি স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষায় ৩ দশমিক ২০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আদেশে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার পদে টাকা ২২০০০-৫৩০৬০/- (বাইশ হাজার) টাকা মাত্র বেতনে সহকারী প্রোগ্রামার পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে ০৬ (ছয়) মাসের জন্য নিয়োগ করা হলো। এ নিয়োগ যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। 

স্নাতকের চূড়ান্ত সনদ পাওয়ার আগে কাউকে প্রথম শ্রেণির চাকরি দেওয়ার সুযোগ নেই মন্তব্য করে নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, ‘এটি মোটেও সংগত নয়।

এ রকম হয়ে থাকলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না। যার যোগ্যতা নিয়ে কোনো কথা হবে না, কেবল তাঁকেই অ্যাডহক নিয়োগ দিতে হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের সাবেক এক পরিচালক বলেন, ‘সহকারী প্রোগ্রামার পদে নিয়োগ দিতে হলে কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে তাঁকে ন্যূনতম স্নাতক পাশ হতে হবে।

স্নাতকের সনদ না পাওয়া মানে সে এইচএসসি পাশ। এই সনদ প্রদর্শন করে এই পদে চাকরি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমেন খন্দকার অপি বলেন, ‘স্নাতক পরীক্ষার পর গত নভেম্বরে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

আমাদের অফিসিয়াল ফলাফল বের হতে দেরী হয়েছে। তবে আমি আনঅফিসিয়াল ডকুমেন্ট দেখিয়েছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. রোকানুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই।

আনঅফিসিয়াল ফলাফল কখনো প্রকাশ হয় না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কারও ইমপ্রুভমেন্ট ইস্যু বা হলের সিটের আবেদনের জন্য হলে তাঁকে এ বিষয়ে জানানো হয়ে থাকে।

তবে কেউ যদি ভিন্ন জায়গায় অর্থাৎ চাকরির মতো জায়গায় ব্যবহার করে তাহলে আমি দায়িত্ব নিব না। চাকরির ক্ষেত্রে আমরা বলি, সে ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে।’

নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘বিষয়টি আমি একটু আগেই জানলাম। সে ‘অ্যাপিয়ার্ড’ করে করেছে কি না, আমাকে একটু দেখতে হবে।’

‘অ্যাপিয়ার্ড’ দিয়ে প্রথম শ্রেণির চাকরিতে যোগদান করা যাবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘বিষয়টি আমি সম্পূর্ণ আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের এখতিয়ারে ছেড়ে দিয়েছিলাম। নিয়মকানুনের বিষয়ে আমি রেজিস্ট্রার ও আইসিটি সেন্টারের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলব। বিষয়টি আমি দেখছি।’

শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই নিয়োগের দায়িত্ব পালন করা রাবি আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ছাইফুল ইসলাম বলেন, ‍‍`অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগে ফলাফলের এমন বাধ্যবাধকতা ছিল বলে আমার জানা ছিল না।

এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার আবেদন গ্রহনের কাজের তাড়া থাকায় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।‍‍`

তিনি আরও বলেন, ‍‍`নিয়োগপ্রাপ্ত আমার বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি খুব ভালো প্রোগ্রামার হিসেবে আমার জানা থাকায় তাকে নিয়োগ দিয়েছিলাম।‍‍`

আরবি/জেডআর

Link copied!