সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ০১:৪০ পিএম

চরম অপুষ্টির ঝুঁকিতে সিলেটের শিশুরা: গবেষণা

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ০১:৪০ পিএম

চরম অপুষ্টির ঝুঁকিতে সিলেটের শিশুরা: গবেষণা

ছবি: সংগৃহীত

সিলেট বিভাগের শিশুরা চরম অপুষ্টির ঝুঁকিতে ভুগছে বলে সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

‘শিশুদের অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকা সিলেট বিভাগের সঙ্কটাপন্ন এলাকা গুলোর মূল্যায়ন’ শিরোনামে সিলেট বিভাগের ৪১টি উপজেলায় ১৬২৫ জন শিশুর উপর এ গবেষণা করা হয়। গবেষণাটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) ও শাবিপ্রবির পরিসংখ্যান বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয় বলে জানান গবেণাটির সহ-প্রধান গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন।

বয়সের তুলনায় উচ্চতায় কম, উচ্চতার তুলনায় ওজন কম ও বয়সের তুলনায় ওজন কম এ তিনটি সূচকের মাধ্যমে শিশুদের পুষ্টিহীনতা পরিমাপ করা হয়েছে বলে জানান গবেষণা প্রকল্পের সহ-প্রধান গবেষক অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন।

যেখানে সিলেট বিভাগে পুষ্টির সার্বিক অবস্থার মধ্যে ৩২.৭ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় উচ্চতায় কম, ১২.৭ শতাংশ শিশু উচ্চতার তুলনায় ওজনে কম এবং ২৫.৫ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় ওজনে কম সমস্যায় ভুগছে বলে এ প্রকল্পের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। যা সারাদেশের গড় শতাংশ থেকে বেশিও বলে জানান এ সহ প্রধান গবেষক।

গবেষণায় দেখা যায়, সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় শিশুদের পুষ্টিহীনতার সমস্যা সব চেয়ে বেশি। যেখানে বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম ও বয়সের তুলনায় ওজন কম যথাক্রমে ৪১.২ ও ২৯.৭ শতাংশ শিশুর। এরপর সিলেট জেলায় শিশুদের উচ্চতার তুলনায় ওজন কম ১৪.৫ শতাংশ শিশুর।

অন্যদিকে, সিলেট বিভাগের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় শিশুদের অপুষ্টির সমস্যা তুলনামূলকভাবে কম বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। যেখানে, বয়সের তুলনায় উচ্চতায় কম, উচ্চতার তুলনায় কম ওজন এবং বয়সের তুলনায় ওজন কমের হার যথাক্রমে ২৫, ৬.৫ এবং ১৭.৬ শতাংশ।

এ গবেষণায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় শিশুদের বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম হওয়ার ফলে পুষ্টিহীনতার হার নিম্নরূপ উঠে এসেছে: বিশ্বনাথ (৩৬.২ শতাংশ), জকিগঞ্জ (৩৫.৫ শতাংশ), জগন্নাথপুর (৩৫.৫ শতাংশ), ছাতক (৩৪.২ শতাংশ), দক্ষিণ সুরমা (৩৪.২ শতাংশ), ধর্মপাশা (৩৪.০ শতাংশ), সিলেট সদর (৩৩.৯ শতাংশ), মাধবপুর (৩৩.৮ শতাংশ), লাখাই (৩৩.৪ শতাংশ) এবং গোলাপগঞ্জ (৩৩.৪ শতাংশ)।

সিলেট বিভাগে বয়সের তুলনায় ওজন কমের সমস্যায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলাগুলো হলো কুলাউড়া (৩২.৭ শতাংশ), বিশ্বনাথ (৩১.৭ শতাংশ), দক্ষিণ সুরমা (২৯.০ শতাংশ), জকিগঞ্জ (২৮.৭ শতাংশ) এবং জগন্নাথপুর (২৬.৬ শতাংশ)।

এ ছাড়া উচ্চতার তুলনায় ওজন কমের সমস্যায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলাগুলো হলো কুলাউড়া (১৪.৫ শতাংশ), জকিগঞ্জ (১২.৫ শতাংশ), বিশ্বনাথ (১২.৩ শতাংশ), জগন্নাথপুর (১২.০ শতাংশ), দক্ষিণ সুরমা (১২.০ শতাংশ), ছাতক (১১.৮ শতাংশ), তাহিরপুর (১১.৪২ শতাংশ), সুনামগঞ্জ (১১.২৮ শতাংশ), আজমেরীগঞ্জ (১১.২০ শতাংশ) এবং জুড়ী (১১.১৮ শতাংশ)।

গবেষণার সহ-প্রধান গবেষক অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে শিশুদের পুষ্টির পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি হলেও, কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিশেষ করে সিলেট বিভাগে শিশুদের পুষ্টিহীনতার হার এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। অপুষ্টি শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।’

‘জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, আমরা সিলেটে শিশুদের অপুষ্টির চিত্র বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা গুলো চিহ্নিত করি। যা নীতিনির্ধারকদের জন্য শিশুদের অপুষ্টি নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়ক হতে পারে বলে আমরা মনে করি।’

এ গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষক ও শাবিপ্রবি পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মোসাম্মাৎ কামরুন নেসা বলেন, ‘অপুষ্টি হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে, যা স্বাভাবিক বৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি সাধারণত অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ, পুষ্টির ঘাটতি, বা শরীরের পুষ্টি শোষণের অক্ষমতার কারণে ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘গবেষণাটি সিলেটের ৪টি জেলার সর্বমোট ৯৩টি ক্লাস্টারে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ওপর পরিচালিত হয়েছে। এ গবেষণার জন্য বাংলাদেশ সরকারের রিসার্চ গ্র্যান্ট ফর উইমেন তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হয়। এ গবেষণায় এক হাজার ৪৫০টি বসতবাড়ি থেকে এক হাজার ৬২৫ জন শিশুর পারিবারিক অবস্থার তথ্য এবং পুষ্টি-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করি আমরা।’

গবেষণাটি পরিচালনায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) শিশু পুষ্টি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল হোসেইনের সহযোগিতায় নেওয়া হয়েছে বলে জানায় গবেষক দল।

এ গবেষণা প্রকল্পে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন শাবিপ্রবির পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদ বাবু, সুমাইয়া তাসনিম, ফখরুল ইসলাম, প্রসেনজিৎ বসাক, মো. সাব্বির হোসেইন ও মাহফুজ জিয়াদ। এ ছাড়া গবেষণার জরিপে ৩০ জন মাঠ কর্মী প্রায় ৫ মাস ধরে তথ্য সংগ্রহে নিযুক্ত ছিলেন।

সিলেটে এসব শিশুদের অপুষ্টির হার কমাতে গবেষক দল- উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা; স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা, এনজিও এবং কমিউনিটি নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত পুষ্টি সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা; মা ও শিশুর জন্য স্বাস্থ্য সেবার সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত পুষ্টি মূল্যায়ন ক্যাম্প পরিচালনা করা ইত্যাদি সুপারিশ প্রদান করেন।

এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ শীর্ষ উপজেলাগুলোতে গবেষক দল- উপজেলা ভিত্তিক পুষ্টি উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোকে আরো কার্যকর করা; স্কুল ও কমিউনিটিভিত্তিক পুষ্টি শিক্ষা কর্মসূচি বৃদ্ধি করা; পুষ্টি সহায়তা ও পরামর্শ কেন্দ্র গুলোকে আরো কার্যকর করা; গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের পুষ্টি সহায়তা কর্মসূচি ব্যাপক আকারে প্রসারিত করা; একান্ত দরিদ্র পরিবারের শিশুদেরকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং সরকার, এনজিও, ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ বৃদ্ধি করার জন্য সুপারিশ গ্রহণের জন্য নীতি নির্ধারিকদের আহ্বান করে।

এদিকে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাভবন সি এর ৩১২ কক্ষে ‘ইনভাইটেশন টু দ্যা আরজিএফডব্লিউ প্রজেক্ট ফাইন্ডিংস্ ডিসেমিন্যাশন সেমিনার’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন প্রকল্পটির গবেষক দল।

এ সময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইসমাঈল হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  পরিসংখ্যার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আজিজুল বাতেন।

এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক এছাক মিয়া, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আল আমিন প্রমুখ।

আরবি/এসআর

Link copied!