চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সবুজ ক্যাম্পাসের হৃৎস্পন্দন ছিল চুয়েট লেক। ছোট ছোট টিলার কোলে, ঘন ছায়াঘেরা পরিবেশে ঘেরা এই লেকটি ছিল শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ক্যানভাস। `গ্রিন হ্যাভেন` বা সবুজ স্বর্গ নামে পরিচিত এই লেকটি ছিল ক্যাম্পাসের প্রধান আকর্ষণ।
এক সময় এর স্ফটিক স্বচ্ছ জলে রঙিন পাল তোলা নৌকার আনাগোনা ছিল, শিক্ষার্থীদের গানে-আড্ডায় মুখরিত থাকতো চারপাশ, আর সোনালি বিকেলে প্রতিফলিত হতো প্রকৃতির মায়াবী রূপ। কিন্তু আজ সেই ক্যানভাসে আঁকা হয়েছে বিবর্ণতার ধূসর পটভূমি।
বিশ হাজার বর্গফুটের এই প্রাকৃতিক জলাশয়টি আজ পরিচর্যার অভাবে আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘোলাটে পানি আর দুর্গন্ধ যেন এক নীরব আর্তনাদ। মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় লেকের চারপাশ এখন এক ভুতুড়ে পরিবেশ। লেকের ধারে থাকা বসার স্থানগুলোও অযত্নে অবহেলায় জীর্ণ হয়ে যাওয়ায় সেখানে শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা যায় না।
স্থাপত্য বিভাগের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত নন্দী বলেন, ‘একসময় চুয়েট লেক ছিল পরিষ্কার, যা শিক্ষার্থীদের প্রিয় আড্ডাস্থল। নৌকাভ্রমণ, অবসর কাটানো কিংবা বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় লেকপাড় ছিল তাদের অন্যতম আকর্ষণ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লেকপাড়ে ঝোপঝাড় আর ময়লার আধিক্য শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমিয়ে দেয়। সব কিছু পরিষ্কার করে আবারও আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি করছি।’

যন্ত্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গোবিন্দ মোদক মনে করেন,‘জলাশয়গুলো পরিষ্কার করা হয় এবং বসার জায়গাগুলো পুনরায় সাজানো হয়, তাহলে এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভালো আড্ডার স্থান হতে পারে।’
নতুন রুপে চুয়েট লেককে গড়ে তোলা ও সকলের প্রত্যাশা নিয়ে নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক শাহজালাল মিশুকের মনে করেন, চুয়েট লেকের সঠিক পরিচর্যা ও কার্যকর লেকসাইড উন্নয়নের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের পরিবেশকে নতুন জীবন দেওয়া সম্ভব।
‘লেকের চারপাশে শিক্ষার্থীদের জন্য পরিকল্পিত ও স্থাপত্যশৈলী সমৃদ্ধ লেকসাইড উন্নয়ন করা গেলে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তির স্থান হিসেবে গড়ে উঠবে। দিনরাত শিক্ষার্থীদের কলরবে মুখরিত থাকবে এ লেকের চারদিক। রোজকার শিক্ষার্থীদের কত শত গল্প-আড্ডা হবে, এখানে কত স্বপ্নের সূচনা হবে লেকের নয়নাভিরাম দৃশ্যের মধ্য থেকে। তাই দ্রুত প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
লেকটি সংস্কারের বিষয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী দেলোয়ার হোসাইন জানান, লেকটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই এর হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা লেকটি সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। কাজ চলমান আছে। লেকের একটি অংশে কাজ চলছে। এরপর পুরো লেকটি সংস্কার করা হবে। বর্ষাকালে এটি পানি পূর্ণ হয়। এর পাশের হলটিতে যাওয়ার জন্য একটি কালভার্ট তৈরির পরিকল্পনা করেছি। এ ছাড়া চুয়েটের অন্যান্য লেকগুলো সংস্কারের বিষয়ে আমরা কয়েকটি সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছি।’
শিক্ষার্থীদের একটাই প্রত্যাশা, তাদের স্বপ্নের ক্যানভাসে যেন আবার রং ফিরে আসে, সবুজ স্বর্গের বুকে যেন আবার প্রাণের সঞ্চার হয়।