ঢাকা বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫

চরম নিরাপত্তা শঙ্কায় নোবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা

সাদমান রাকিন, নোবিপ্রবি
প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৫, ১২:৫৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরার অভাবে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজরদারি ব্যবস্থা না থাকায় অপরাধমূলক কার্যকলাপ রোধ করা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হল, পকেট গেট, পকেট গেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পর্যন্ত রাস্তা, পকেট গেট থেকে সালাম হল সংলগ্ন রাস্তা, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, শান্তি নিকেতন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনাই সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা সম্ভব হচ্ছে না নজরদারি ক্যামেরার অভাবে।

নোবিপ্রবির ছাত্রী হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও নেই ছাত্রদের হলগুলোতে। ছাত্রদের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক উকিল হল ও ভাষা শহিদ আব্দুস সালাম হল পরিদর্শন করে দেখা যায় বেশিরভাগ সিসিটিভি ভাঙা, বাকিগুলোর তার ছিড়ে পড়ে আছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক উকিল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রোবায়েত হোসেন রাকিব জানান, আমাদের হলে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটে, কিন্তু কোনো সিসিটিভি না থাকায় অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এতে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকি। এখন তো ওয়াশরুমে যাওয়ার সময়েও রুমে তালা দিয়ে যেতে হয়। ঈদের ছুটিতে যে বাড়ি যাবো রুমে তালা দিয়ে কিন্ত হলের কোনো করিডোরেই সিসিটিভি না থাকায় টেনশনে থাকতে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক উকিল হলের প্রভোস্ট ড. মো. তসলিম মাহমুদ জানান, হল পরিদর্শন করে দেখেছি যে বেশিরভাগ সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট এবং যে পরিমাণ আছে তা অপর্যাপ্ত। তাই চাহিদা পাঠিয়েছি প্রশাসনের নিকট। দ্রুতই সিসিটিভি পাবো বলে আশা করছি। চাহিদা মোতাবেক সিসিটিভি ক্যামেরা পেলে তখন আর ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকবে না।

পকেট গেট দিয়ে অবাধে বহিরাগত প্রবেশ করে যেটা একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এই গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে অপরিচিত লোকজন অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

পরিসংখ্যান ১৬তম ব্যাচের নারী শিক্ষার্থী প্রতীচি কর বলেন, পকেট গেট দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী চলাচল করে। এখন বহিরাগতদের দ্বারা যদি সেখানে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে শনাক্ত করার কোনো উপায় নেই, যেহেতু সিসিটিভি নেই।

তিনি আরও বলেন, বহিরাগত অনেক ছেলে ইভটিজিং করে কিন্ত ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের রাস্তায় সিসিটিভি না থাকায় ইভটিজিং এর অভিযোগ দেয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাউকে শনাক্ত করে কোনো শাস্তির আওতায় আনতে পারছে না।

এসিসিই ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান জানান, পূর্বে একবার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলে প্রচণ্ড মারামারি হয়ে হল বন্ধ হয়ে যায়। ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীন দলের এমন কোন্দল হবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই দ্রুত হলগুলোতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা উচিত যেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থাকে এবং প্রশাসন প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করতে পারে।

এ ছাড়া পকেট গেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পর্যন্ত রাস্তায় এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকার ব্যাপারে অভিযোগ করেন তিনি।

সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এএফএম আরিফুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ জায়গা সিসিটিভির আওতায় নিয়ে এসেছি। বাকি জায়গাগুলো যেন সিসিটিভির আওতায় আনা যায় এ বিষয়ে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যা এখনো চলমান রয়েছে। হলসহ বাকি যেসব জায়গায় এখনো ক্যামেরার আওতায় আসেনি সেই জায়গাগুলোকে শীঘ্রই সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিলেও শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কবে নাগাদ এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে।