ঢাকা রবিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৫

স্নাতকের সনদ ছাড়াই রাবিতে আরও এক নিয়োগ

মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৫, ১০:২৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

স্নাতকের (সম্মান) সনদ ছাড়াই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে আরও একজনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে প্রথম শ্রেণির চাকরি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গত ১৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) শেখ সাদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ পান।

নিয়োগপ্রাপ্ত মো. শরিফুল ইসলাম রাজশাহীর কাটাখালীর থানার চিনিকল বাজার এলাকার মো. আব্দুস সোবহানের ছেলে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ভর্তি হয়েছিলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে তিনি পড়াশোনা সম্পন্ন করতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নিয়োগের সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার স্নাতক পাশের সার্টিফিকেট জমা দিতে পারেননি। স্নাতক পাশের সার্টিফিকেট ছাড়াই তাকে চাকরি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় জেষ্ঠ্য অধ্যাপকরা বলছেন, একটি নতুন স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা আমরা বলছি। কিন্তু এ ধরনের অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং আমাদের স্বপ্নগুলোকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিচ্ছে। উক্ত পদে নিয়োগের জন্য সার্কুলার প্রকাশ করা হলে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর মধ্যে থেকে বাছাইয়ের সুযোগ থাকতো। কিন্তু এর পরিবর্তে এমন বিতর্কিত নিয়োগের পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, জরুরি ভিত্তিতে জনবলের প্রয়োজন থাকায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এরমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি তাদের নিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরিফুল ইসলামকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে সহকারী প্রোগ্রামার পদে টাকা ২২০০০-৫৩০৬০/- (বাইশ হাজার) টাকা বেতনে সহকারী প্রোগ্রামার পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে ০৬ (ছয়) মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়োগ যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হয়।

এ পদে নিয়োগের যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের সহকারী প্রোগ্রামার পদটি একটি প্রথম শ্রেণির পদ। এখানে কোনো জনবলের নিয়োগ পেতে হলে নিয়োগপ্রার্থীকে অবশ্যই স্নাতক পাশ করতে হবে। আগের রেজিস্ট্রারের সময়ে এই নিয়োগটি হয়েছিল। স্নাতকের সনদ ছাড়া যে নিয়োগ হয়েছে এটি কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।

এ ধরনের নিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আইসিটি সেন্টারের সাবেক এক পরিচালক।

তিনি বলেন, ‍‍বর্তমান সময়ে কম্পিউটার সাইন্সে পড়াশোনা শেষ করা অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষার্থী বেকার অবস্থায় রয়েছে। একটা সার্কুলার প্রকাশ করা হলে কয়েক হাজার আবেদন পড়বে। এই ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে এটি নষ্ট হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, ‍‍‍‍‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগের এই দৃষ্টান্তগুলো ভালো কিছু নয়। অতীতে এই দৃষ্টান্তগুলোরই আমরা বিরোধিতা করেছি। এটার আবার পুনরাবৃত্তি হলে শিক্ষার্থীদের এই আকাঙ্ক্ষাকে অবমূল্যায়ন করা হয়। আমরা যেখানে পরিচ্ছন্ন একটা জায়গার স্বপ্ন দেখি এ ধরনের নিয়োগ সেটাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়।‍‍‍‍’

উচ্চ মাধ্যমিকের সার্টিফিকেট দিয়ে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির চাকরিতে যোগদান করলেন এ বিষয়ে জানতে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. শরিফুল ইসলামের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে, তার নম্বরে থাকা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেন। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরে কল কেটে দেন। পরে একাধিকবার কল ও বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ছাইফুল ইসলাম বলেন, ‍‍‍‍`এ বিষয়ে গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে অনেক কথা বলেছি। নতুন করে আমার আর বলার কিছু নেই।‍‍‍‍

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‍‍‍‍‘একটা তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। উক্ত কমিটি এই নিয়োগের কোথায় কোথায় বিচ্যুতি ঘটেছে তার রিপোর্ট দেবে। আমি এই রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। ব্যাক্তিগতভাবে আমি কোনো বিচ্যুতি বরদাস্ত করব না। আমাদের একটু তাড়াহুড়োর মধ্যে নিয়োগগুলো দেওয়ায় বিচ্যুতি হয়েছে।‍‍‍‍’

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৮ নভেম্বর আইসিটি সেন্টারে দুইজনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন, শরিফুল ইসলাম ও মোমেন খন্দকার অপি। মোমেন খন্দকার অপি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। নিয়োগের সময় তার স্নাতকের ফলাফল প্রকাশিত হয়নি।

এই বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তীতে এই নিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।