বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
স্বাধীনতা দিবস

তরুণদের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ

বুটেক্স প্রতিনিধি

প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২৫, ০৮:৪৬ এএম

তরুণদের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আজ ২৬ মার্চ, ৫৫তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচনার সূচনা দিন। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে চলেছে। তরুণ সমাজের দৃষ্টিতে আগামীর বাংলাদেশ হবে আত্মনির্ভরশীল, প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর এবং বৈষম্যহীন। যেখানে সুশাসন, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের মূলনীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। জুলাই বিপ্লব প্রমাণ করেছে যে, পরিবর্তনের মূল শক্তি তরুণরাই। তাদের নেতৃত্বেই গড়ে উঠবে এক নতুন বাংলাদেশ। সমৃদ্ধ, উন্নত ও সুবিচারপূর্ণ, যেখানে প্রতিটি নাগরিক সমান সুযোগ পাবে এবং দেশ গর্বের সঙ্গে বিশ্বমঞ্চে নিজের স্থান করে নেবে।

তরুণদের দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নিয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) শিক্ষার্থীদের রূপকল্প তুলে ধরেছেন- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম শাহেদ

আজ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৫তম বর্ষে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। কিন্তু নানা ঘাত-প্রতিঘাতে স্বাধীনতার সুফল আমরা পাইনি। কি পাইনি সেটা অতীত। আমাদের এখন সামনের দিকে তাকানোর সময়। বর্তমানের তরুণ সমাজের যে দিকে বেশি নজর দেওয়া উচিৎ সেটা হলো জ্ঞান ও দক্ষতা। আমাদেরকে দেশি-বিদেশি মহলে নানাভাবে অপদস্ত হতে হয়। চির সম্প্রীতির দেশকে আজ উগ্রবাদী হিসেবে প্রেজেন্ট করা হয়। অনেকভাবে কারণ খুঁজার চেষ্টা করেছি- কেন?

দেখলাম বৈশ্বিক পরিমন্ডলে আমাদের অবদান কম। গুগল হোক আর এফ বি আই হোক, স্পেসে তো নাই। ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি আমাদের তরুণদের সেই সক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু আমরা সেই রকমের সিস্টেম বা প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছি না, যাতে করে নিজেদের ফ্লোরিশড করতে পারছি না। বাংলাদেশে এখন সব থেকে বেশি দরকার একটা অত্যাধুনিক প্ল্যাটফর্ম। যা অবশ্যই টেকসই হতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তরুণ প্রজন্মের একজন হিসেবে আমার চাওয়া, তরুণদেরকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। আমরা বিগত দিনগুলোতে দেখেছি রাজনেতা যারা ছিলেন নিজেদের সন্তানদেরকে বিদেশে উচ্চাভিলাষী সুযোগ সুবিধা দিয়েছে, আর দেশে সাধারণ জনগণকে ছাত্র রাজনীতির ভয়াবহ কূপে ঠেলে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। তরুণরা যদি রাজনীতিতে সচেতন হয় তাহলে ভবিষ্যতে তাদের নিয়ে খেলতে পারবে না। পলিটিক্স দিয়ে আমাদের পলিসি তৈরি হয়। কিন্তু সেই পলিসি কি তা আমরা জানি না।

পার্লামেন্টে একদিনে কত আইন পাশ হয়ে যায়,তার খোঁজও রাখি না! এভাবে উদাসীনতাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসা সরকারকে ফ্যাসিস্ট তৈরির একটা জায়গা তৈরি করে দেয়। তরুণেরা এই বাংলাদেশের অন্যতম স্টেক হোল্ডার। তাদেরকে বাদ দিয়ে খালি অপরিপক্ক ট্যাগ দিয়ে সব পলিসি থেকে দূরে রেখে যেমনি দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না, তেমনি তরুণদেরও শুধু প্রাচীন ধ্যান-ধারণাকে দোষারোপ করলে চলবে না। তাদের সবদিক থেকে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। সেটা টেকনোলজি, পলিটিক্স, স্প্রিচুয়াল ইত্যাদি সব সেক্টরে। তবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্তস্নাত লক্ষ্য সঠিকভাবে অর্জিত হবে।

দিব্যজিৎ কুন্ডু অন্তু, তৃতীয় বর্ষ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট।

২৬ মার্চ- বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক, আত্মত্যাগের গল্প, নতুন স্বপ্ন দেখার দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে যে রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই স্বাধীনতা শুধু ভৌগোলিক নয়, বরং আত্মনির্ভরশীল, উন্নত, ও মানবিক এক বাংলাদেশের স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নের বাহক বর্তমানের তরুণ সমাজ।

আজকের তরুণরা আগামীর বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চায়? তারা চায় একটি সুশাসিত, দুর্নীতিমুক্ত, প্রযুক্তিনির্ভর ও মানবিক রাষ্ট্র, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। তারা চায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও উদ্ভাবনের সুযোগ, যাতে তাদের মেধা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগে।

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও আমরা এখনো অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কিন্তু তরুণরা থেমে নেই। তারা স্টার্টআপের জন্য স্বপ্ন গড়ে, প্রযুক্তির সাহায্যে ভবিষ্যৎ আঁকে, গবেষণার গভীরে সমাধান খোঁজে, আর সামাজিক উদ্যোগে বদলে দেয় ভাগ্যরেখা।আজকের তারুণ্য আর চাকরির জন্য অপেক্ষা করে না- তারা নিজেই নতুন দিগন্তের নির্মাতা।

স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ গড়বে-একটি স্মার্ট, সমৃদ্ধ ও টেকসই দেশ। আজকের দিনে তাদের অঙ্গীকার হোক-বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা। তরুণদের হাত ধরেই আগামীর বাংলাদেশ হবে সম্ভাবনার দেশ।

খায়রুন্নেসা তাবাসসুম, দ্বিতীয়বর্ষ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট।

যেন শুধরে যাই। আমরা যেনো কেবল সুযোগের অভাবে সৎ এমন না হয়। সুযোগ পেলেও আমরা যেনো অসৎ-জালিম না হই। আমরা যেনো নিজেদের জন্য যোগ্য শাসক ও নেতা বাছাই করতে পারি। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ অথবা অর্থের লোভে যেনো অযোগ্য, দুর্নীতিগ্রস্ত, মন্দ লোককে সমর্থন না দেই।

সেই ১৯৪৭ থেকেই এদেশের মানুষ বিভিন্ন বৈষম্য বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। এ বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা একের পর এক আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। ১৯৬৬ সালে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারের জন্য ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন ইত্যাদি প্রায় সবগুলো মুভমেন্ট এ বাঙালিরা বিজয় অর্জন করতে পারলেও সেই ফল তারা ভোগ করতে পারেনি। এরপর ১৯৭১ সালে দীর্ঘদিনের বৈষম্য, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে তারা বুঝতে পারে যে এবারও তারা বৈষম্য থেকে মুক্তি ও ন্যায্য অধিকার পাচ্ছে না। পরবর্তীতে বাংলাদেশে আরো অনেক বিপ্লব-অভ্যুত্থান-আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু আমরা প্রতিবারই প্রতারিত হয়েছি। আন্দোলনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কখনোই পূর্ণতা পায়নি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষমতার লোভ ও দুর্নীতির কারণে। প্রতিবারই রাজনৈতিক নেতারা সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে।

জুলাই ২৪ পরবর্তী সময়ে আগামীর বাংলাদেশ আমি এমন দেখতে চাই যেখানে কোনো বিভাজন-বৈষম্য থাকবে না। রাষ্ট্রের প্রায় সকল স্তরে যে একদলীয় কাঠামো ও বেইনসাফ রয়েছে, সেগুলো যাতে সুন্দরভাবে সংস্কার হয়। কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতাদের ক্ষমতার লোভ ও অন্য যেকোনো কারণে যেন জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সংস্কার বাধাগ্রস্থ না হয়। এবার যে দেশের জনগণ আর কোনো প্রতারণার শিকার না হয়।

রাষ্ট্রের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী রাষ্ট্রের জন্য কাজ করবে, জনসাধারণের জন্য কাজ করবে। সরকারি দপ্তরগুলোতে কোনো ঘুষের আদানপ্রদান ব্যতীতই সব কাজ ঠিকভাবে হবে, কোনো দুর্নীতি হবে না। নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন দল সমর্থন করে সেটা না দেখে যাতে যোগ্যতা দেখা হয়। এমন পরিবেশ আশা করি যেখানে কেবল সাধারণ মানুষ নয় রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরাও দলকানা না হয়ে দলের যেকোনো ভূল সিদ্ধান্ত ও খারাপ কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করার সুযোগ যাতে পেতে পারে।

এমন একটা বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে দেশের নেতারা যারা দেশ পরিচালনা করে এবং করবে তারা যেন নিজেদের বা দলের স্বার্থে দেশের স্বার্থ, দেশের মানুষের স্বার্থ বিসর্জন না দেয়। ক্ষমতার জন্য পাশের দেশে (অথবা অন্য যেকোনো দেশে) না গিয়ে যেনো জনগণের কাছে যায়, ভিন্ন দেশকে খুশি করার রাজনীতি না করে যেনো জনগণকে (শুধুমাত্র নিজ দলের সমর্থকদের নয়) খুশি করার রাজনীতি করে। ভোগের রাজনীতি পরিহার করে ত্যাগের রাজনীতি করতে পারা মানুষগুলো যাতে দেশ পরিচালনা করার সুযোগ পায় এমনটাই আশা করি।

রিয়াদ হাসান, দ্বিতীয়বর্ষ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট।

স্বাধীনতা হলো যেকোন জাতির মুক্তির উন্মোচন পথ। এই মুক্তির জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয় বহু বীর সন্তানদের। তাই স্বাধীনতা দিবসে স্মরণ করে নিতে চাই মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং সেই সহযোদ্ধা মা-বোনেদের যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজকের ‘বাংলাদেশ’ নামক ভূখণ্ড লাভ করেছি। কালের ধারাবাহিকতায় এদেশ এগিয়ে চলছে নিজের ছন্দে সাথে নিয়ে নানান সাফল্য ও ব্যর্থতা।

আর এর মূল চালিকাশক্তি হলো এদেশের জনগণ। অগ্রজ ব্যক্তিদের সাফল্য ত্বরান্বিত  করতে তরুণদের উজ্জীবিত হতে হবে। এই লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে জয় করতে হবে।

শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি তরুণদের প্রযুক্তিগত বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। একইসাথে দরকার ব্যবস্থাপনা, উপস্থাপনা ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা। এসব গুণ একজন তরুণকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে বিকশিত করতে ভূমিকা রাখে।

এর পাশাপাশি আমাদের ভৌগলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ে  সচেতন থাকা আবশ্যক। নিজেদের বিশ্ব দরবারে উপস্থাপনের মাধ্যমে তরুণ সমাজ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।

তাছাড়া নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে লালন করতে হবে এবং  নৈতিক মূল্যবোধে বলিষ্ঠ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের করুণ পরিস্থিতিতে  তাদের এগিয়ে আসতে হবে এবং কল্যানমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

সর্বোপরি, ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন’। আগামীর বাংলাদেশ হবে মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত এবং লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিমুক্ত। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সমান অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে রাষ্ট্রকে। রপ্তানি খাতকে সমৃদ্ধ করতে হবে।দুর্নীতি বিরুদ্ধে কঠোর আইন আরোপ করা দরকার। সেই সাথে দরকার নারীর ক্ষমতায়ন। প্রতিটি নাগরিকের জীবন ও জানমালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

সস্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাস কার্যক্রম ও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে এই জঘন্যতম কাজ বিলীন করা এখন সময়ের দাবি। এ ভাবেই স্বাধীনতার অগ্রযাত্রা তরান্বিত হবে। জনগণ পাবে ‍‍‘স্বাধীনতা‍‍’ নামক সুমিষ্ট ফলের স্বাদ আস্বাদন করতে।

অভিষেক দত্ত, প্রথম বর্ষ,ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং।

আরবি/এসআর

Link copied!