বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) খাতা মূল্যায়নে জালিয়াতি, নিজের জন্য বরাদ্দ হওয়া খাতা অন্য শিক্ষককে দিয়ে মূল্যায়ন এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তা’মিরুল মিল্লাত মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. মাওলানা মুহাম্মদ আবু ইউসুফকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তামিরুল মিল্লাত ট্রাস্ট কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ২০টি অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের পর তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি।
তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক ড. কোরবান আলী স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে সম্প্রতি বরখাস্তের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ মাওলানা ইউসুফ দাবি করেছেন, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই বরখাস্ত করা হয়েছে।
তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও মাদরাসা বোর্ডের প্রশ্ন প্রণয়ন, মডারেশন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অধ্যক্ষের আস্থাভাজন সহকারী অধ্যাপক মাওলানা শরীফুল ইসলামকে। তাকে সহযোগিতা করতেন নন-এমপিওভুক্ত সেকশন অফিসার শরীফ মাহমুদ। বিশেষ করে ফিকাহ বিভাগের উত্তরপত্র অধ্যক্ষ ইউসুফ নিজে মূল্যায়ন না করে শরীফ মাহমুদকে দায়িত্ব দেন, যা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত।
অভিযোগ রয়েছে, ফিকাহ বিভাগের প্রভাষকের পদটি কৌশলে খালি রেখে নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগের পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। এর ফলে প্রশ্নফাঁস, পরীক্ষার্থীদের মাধ্যমে নিজেদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং সর্বোচ্চ নম্বর প্রদানসহ শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা ঘটে। তদন্ত কমিটি এসব অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত বলে উল্লেখ করেছে।
অধ্যক্ষ ড. মাওলানা মুহাম্মদ আবু ইউসুফের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাতা গ্রহণসহ আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্য ড. মো. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, অধ্যক্ষ আবু ইউসুফের অনৈতিক কর্মকাণ্ড আমাদের তদন্ত রিপোর্টে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি নিজের পদ রক্ষা করতে এলাকায় উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের ব্যবহার করে অনেককে অপমান করেছেন।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১২ তারিখে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ড. মো. কোরবান আলী স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে অধ্যক্ষ আবু ইউসুফকে বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তামিরুল মিল্লাত ট্রাস্ট কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে আনা ২০টি অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের পর সর্বসম্মতিক্রমে ২০ মার্চ ২০২৫ থেকে আগামী ছয় মাসের জন্য তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তিনি কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন না এবং ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দিতে হবে।
এদিকে, বরখাস্তের চিঠি পাওয়ার পর অধ্যক্ষ ড. মাওলানা আবু ইউসুফ অভিযোগের জবাব না দিয়ে তিন মাসের সময় চেয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, বরখাস্তের প্রক্রিয়াটি আইনি কাঠামো মেনে হয়নি। কোনো বিষয়ে অভিযোগ থাকলে প্রথমে শোকজ দেওয়া হয়। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তা হয়নি, আমাকে সরাসরি বরখাস্ত করা হয়েছে। আমি এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছি না।
আপনার মতামত লিখুন :