বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) শিক্ষক-সংকট চরমে পৌঁছেছে। অতিরিক্ত ক্লাস-পরীক্ষার চাপে গবেষণা কার্যক্রমে যথেষ্ট সময় দিতেন পারছেন না শিক্ষকেরা। ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, ২৫টি বিভাগে মোট ৪৯৩ জন শিক্ষক থাকার কথা, তবে ইউজিসি থেকে অনুমোদন পাওয়া পদের সংখ্যা ২৬৬ টি। যার মধ্যে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ২১০ জন। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পূর্ণ না হওয়ায় ৫৬টি পদ ফাঁকা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ টি বিভাগে ১০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন। এর বিপরীতে শিক্ষক আছেন ২১০ জন। অর্থাৎ প্রতি ৪৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। এর মধ্যে শিক্ষাছুটিতে আছেন ৫৪ জন শিক্ষক। ১৫৬ জন শিক্ষক দিয়েই চলছে পাঠদান ১৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীর। এ হিসাবে ৬৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১ জন শিক্ষক। যার অর্থ দাঁড়ায় বিভাগ প্রতি শিক্ষকের সংখ্যা ৭ জনেরও কম।
জানা গেছে, বৈশ্বিকভাবে একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১: ২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত একজন শিক্ষক থাকবেন। জাতীয় পর্যায়েও দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এ মানদণ্ড অনুসরণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে সে লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের ওপর ক্লাস-পরীক্ষার অতিরিক্ত চাপ পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চার বছর মেয়াদে আট সেমিস্টারের স্নাতকে পড়ানো হচ্ছে গড়ে ৩৫-৪০ টি কোর্স এবং এক বছর মেয়াদের দুই সেমিস্টারের স্নাতকোত্তরে পড়ানো হয় গড়ে ১০-১২ টি কোর্স। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় এক শিক্ষককে নিতে হচ্ছে ৮-১০টি কোর্স। কিছু বিভাগে তারও বেশি; বিশেষ করে মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা,কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ও লোকপ্রশাসন বিভাগের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গবেষণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমেও প্রভাব পড়ছে।
অন্যদিকে, শিক্ষক সংকটের সঙ্গে রয়েছে শ্রেণি কক্ষ সংকটও। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি শাখা থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শ্রেণিকক্ষ রয়েছে ৩৭ টি। যার মধ্যে একাডেমিক ভবন ১ এ ১৩ টি একাডেমিক ভবন- ২ এ ১৫ টি। বাকি ৮ কক্ষ টি প্রশাসনিক ভবনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ২০১৮ সালের গবেষণার জন্য প্রায় ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়। তবে, যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য বাজেট থাকলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের বরাদ্দ দেওয়া হয় না। এ ছাড়া পর্যাপ্ত জায়গা ও জনবল সংকটের কারণে এসব যন্ত্রপাতি কোনো কাজে আসছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ইউজিসি থেকে জানানো হয়েছে, অনুমোদন পাওয়া শিক্ষকদের নিয়োগ কার্যক্রম সম্পূর্ণ হলে নতুনভাবে অতিরিক্ত পদসংখ্যা অনুমোদন করা হবে। তবে ছাড়কৃত পদসংখ্যার নিয়োগ সম্পন্ন না হওয়ায় সুযোগ থাকলেও নতুন করে পদ অনুমোদন পাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. ধীমান কুমার রায় জানান, একদিকে আমাদের শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে কক্ষের সীমাবদ্ধতা। অথচ দুটোই আমাদের প্রয়োজন। শিক্ষক বেশি হলে পাঠদান নিতে জায়গার প্রয়োজন পড়বে, আবার কক্ষ বেশি হলে শিক্ষকের প্রয়োজন পড়বে। তাই কক্ষ বাড়ানো ও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। তাহলে একাডেমিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, নবনিযুক্ত শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের সঙ্গে দেখা করে শিক্ষক সংকটসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। শিক্ষক নিয়োগ দিলে তাদের বসার জায়গা ও পাঠদান কক্ষও প্রয়োজন হবে। যে সব বিভাগে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, সেখানে দ্রুত নিয়োগ দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হবে শিগগিরই।