দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ নিয়ে সবার অধীর আগ্রহ থাকে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ যেন একটু বেশিই। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পর থেকে একজন শিক্ষার্থীকে বেশিরভাগ সময় আত্মীয়-স্বজন থেকে দূরে থাকতে হয়। ব্যস্ত ক্যাম্পাস জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ ছুটি পাওয়া যায় এই ঈদুল ফিতরেই। তাই ঈদে ঘরে ফেরার আনন্দটা শিক্ষার্থীদের কাছে ভিন্নমাত্রার।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) এর শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনার কথা তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম শাহেদ।
৪৭তম ব্যাচের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তৌজিবুর রহমান তীতন বলেন, ঈদ সবসময় আমাদের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। সারা বছর ক্যাম্পাসে নানা কাজ, নানা জটিলতায় জড়িয়ে থাকি। এ ছাড়া আমরা যারা হলে থাকি আমাদের পরিবার থেকে দূরে থাকি। সবসময় তাদের সাথে দেখা করার সুযোগ পাই না। কিন্তু ঈদে পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে আনন্দ করতে পারি। এ ছাড়া থাকে না কোনো অ্যাকাডেমিক চাপ। সবমিলিয়ে ঈদ হচ্ছে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সুখে কাটানোর সময়। খুশির এই দিনে সবাইকে ভালোবাসা ও শুভকামনা।
৪৮তম ব্যাচের ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আশিক বলেন, ঈদ উল ফিতর! খুশি ও আনন্দ। ঈদ আসার কিছুদিন আগে থেকেই এক ধরনের খুশির অনুভূতি কাজ করে। চাঁদরাতের উচ্ছ্বাস, নতুন জামাকাপড়, ঈদ সালামি, আর সুস্বাদু খাবারের আনন্দ মিলিয়ে ঈদ। এবার সেমিস্টার ফাইনালের পর ঈদ হওয়ায় সবাই বেশি ছুটি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঈদের ছুটি হলো বাড়ি ফেরা, পরিবার প্রিয়জনদের সান্নিধ্য, আর ভালোবাসায় ভরা মুহূর্ত।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর সবার সঙ্গে মিলিত হওয়াই ঈদের সবচেয়ে বড় আনন্দ। ঈদের দিন আমরা সবাই কাছের মানুষ ও বন্ধুদের খোঁজ খবর নেই। সবার ঈদ সুন্দর কাটুক, ভালোবাসা ছড়িয়ে যাক চারদিকে।
একই ব্যাচের ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব আল জান্নাত বলেন, আমাদের মতো যারা ব্যাচেলার তাদের জন্য মূলত ঈদের সময়েই বাড়িতে বেশিদিন কাটানো যায়। ব্যাচেলার লাইফে সব ধরনের স্বাধীনতা-আনন্দ থাকলেও পরিবারের মানুষগুলোর সাথে সময় কাটানোর আনন্দটুকু সবসময়ই স্মৃতিচারণ করা হয়। সারাবছর ল্যাব, সিটি, সেমিস্টার ফাইনাল বা ভাইভা দিতে দিতে যখন জীবন যায় যায় অবস্থা, তখন ঈদের সময়টুকুতে হাফ ছেড়ে বাঁচা যায়। বাড়ি যাওয়ার সময় `স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার` গানটা মনে পড়ে। কিন্তু আমার স্বপ্ন তো বাড়িতেই, আমার মা-বাবা-পরিবার।
এ সময়টাতে চেষ্টা করি নিজেকে নিয়ে ভাবার, নিজেকে একটু সময় দেওয়ার জন্য, একটা বই পড়া কিংবা পরিবারের সাথে সময় দেওয়া, বা সামাজিক কোনো ভালো কাজ এগুলো নিয়েই সময় যায়। এজন্য আমাদের এলাকার সকল পাবলিকিয়ানরা মিলে একটা সংগঠন করেছি, যাতে করে এই ছুটির সময়গুলোতে আমরা সামাজিক কোনো কাজে আসতে পারি, এগুলোতে এক অন্যরকম আনন্দ কাজ করে।
ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাজবিউল হাসান নিশাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এবারের ঈদ আমার জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক হতে যাচ্ছে। কারণ এ বছর রমজান মাসের প্রথম দিকেই ছুটি পাওয়া গেছে। তাছাড়া সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনার চাপ ছিল না। পবিত্র রমজান মাস শেষ করে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে মুখিয়ে আছি।
৪৯তম ব্যাচের ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শুআইব শাহারিয়ার সাঈফ বলেন, ঈদ মানেই আনন্দ, তবে বুটেক্স শিক্ষার্থীদের ঈদ উদযাপন একটু অন্যরকম। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরাই যেন এক যুদ্ধ। ট্রেনের টিকিট পাওয়া থেকে শুরু করে দীর্ঘ যাত্রা সবকিছুই একটা বাড়তি চ্যালেঞ্জ। অনেকেই আবার টিউশনির কারণে ২৫-২৬ রমজান পর্যন্ত ঢাকায় থেকে যান, কখনো দেরিতে বেতন পাওয়ার কারণে পরিবারের জন্য কেনাকাটাতেও বিলম্ব হয়। তবু যখন পরিবারের সাথে একটা সুন্দর ঈদ কাটে, তখন সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।
৫০তম ব্যাচের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মারুফ আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ঈদ আমার জন্য কেবল আনন্দের বার্তা বয়ে আনে না, বরং দায়িত্বের ও তৃপ্তির এক অনন্য অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। টিউশনির টাকা দিয়ে মায়ের জন্য নতুন কাপড় আর বাবার জন্য একটি পাঞ্জাবি কেনা এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ। যখন মা-বাবার মুখে প্রশান্তির হাসি দেখি, তখনই মনে হয়, সব পরিশ্রমই সার্থক।
ঢাকার তীব্র যানজট পেরিয়ে, ব্যস্ত রাস্তাগুলোর ভিড় ঠেলে বাড়ির পথে রওনা হবো। কারণ আমার কাছে ঈদের প্রকৃত অর্থ পরিবার। ঈদের আসল আনন্দ লুকিয়ে থাকে পরিবারকে ঘিরে থাকা ভালোবাসার মুহূর্তগুলোর মধ্যে। ঈদ কেবল নতুন পোশাক বা সুস্বাদু খাবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি ভালোবাসা, সম্পর্কের বন্ধন ও একসঙ্গে থাকার আনন্দের প্রতীক।