বছর ঘুরে পবিত্র ঈদুল ফিতর আবারও স্বমহিমায় ফিরে এসেছে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সবার মাঝেই বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। ঈদ আনন্দের বাইরে নেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারাও। কোথায় ঈদ কাটাচ্ছেন তারা? কেমন কাটবে তাদের ঈদ, প্রস্তুতিই বা কেমন- এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজকের আয়োজন।
ইবি ছাত্রনেতাদের ঈদ আনন্দের ভাবনা তুলে ধরেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ’র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ওয়াসিফ আল আবরার-
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি মূলত গাঁয়ের ছেলে। শহরের ঈদের চেয়ে গ্রামের ঈদে সময় কাটানো আমার হৃদয়ে অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। এজন্য প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাবা, চাচা ও পরিবারের সবার সাথে গ্রামেই পবিত্র ঈদ উদযাপন করবো। এখনো বাবা মা, চাচা চাচিদের থেকে সালামি পাই। আবার ভাতিজা, ভাগ্নিকে সালামি দেই। অন্যান্য বছরে ঈদের আমেজ একরকম থাকলেও এবারে ফ্যাসিজম থেকে মুক্তির ফলে এই ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। দেশের মানুষ এবার মুক্ত স্বাধীন বাতাসে ঈদ উদযাপন করতে পারবে।
তবে গরিব, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষদের ক্ষেত্রে ঈদের আমেজটা ভিন্ন হয়ে থাকে। অভাব অনটন থাকায় অনেক সময় তাদের মাঝে ঈদের খুশি তেমন একটা প্রভাব ফেলে না। ঈদের দিনও তাদের অনেককে হয়তো কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, পরিবারের সকলের মুখে একটু আহার তুলে দিতে। অনেক পরিবারের সদস্যদের ঈদের নতুন জামা কেনার সামর্থ্যটুকুও থাকে না। এজন্য এবারের ঈদে চেষ্টা থাকবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যাতে সুন্দর ভাবে ঈদ পালন করতে পারে সেজন্য কিছু করার।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, আলহামদুলিল্লাহ দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনার পরে পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে এসেছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারেও পরিবারের সবার সাথে ঝিনাইদহে নিজ গ্রামে ঈদ উদযাপন করবো ইনশাআল্লাহ। সর্বশেষ কবে এতটা মুক্তভাবে ঈদ উদযাপন করতে পেরেছি তা মনে পড়ে না। জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় ১/১১ এবং তারপর সুদীর্ঘ ১৬ বছর যাবত স্বৈরাচারী রাজনৈতিক আমলের সময় কাটাতে যেয়ে ঈদটা কেমন যেন একপেশে হয়ে গেছে।
রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে এখন আর আগের মতো শপিং করা কিংবা বন্ধুবান্ধবদের আড্ডা হয় না। আগে সালামি পেলেও এবারে এখনো পাইনি তবে কাছের ছোট ভাইবোনদের সালামি দিয়েছি। তবে অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে এবারের ঈদ আনন্দেই কাটবে বলে আশাকরি। ঈদের দিনে তেমন স্পেশাল কোন কার্যক্রম নেই তবে দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী বিএনপির এবং ছাত্রদলের সিনিয়র নেতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া পরিকল্পনা আছে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ইবি সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, জুলাই গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী দেশের মাটিতে বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী হৃদে-হৃদ মিলে এক অনন্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করবে এবারের ঈদুল ফিতর। তারই প্রেক্ষিতে বুকভরা আনন্দ নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে নাড়িরটানে চলে আসছি পরিবার, প্রতিবেশী, ছোটবেলার খেলার সাথী ও এলাকার মেহনতি মানুষের সাথে ঈদ উৎসবের আমেজ ভাগাভাগি করতে।
ঈদুল ফিতরের আগমনী বার্তা পৌঁছে দিতে চাঁদরাতে ঈদ মিছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ঈদ পরবর্তী রাতে নাইট শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও মেহনতি মানুষের মাঝে ঈদ শুভেচ্ছা সামগ্রী বিতরণ সহ নানাবিধ আয়োজনে আমাদের ঈদ হবে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এক উজ্জ্বল মাইলফলক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ক্যাম্পাসে নানান ব্যস্ততার কারণে দীর্ঘদিন বাড়িতে আসা হয়নি। তাই এবারের ঈদটা ঠাকুরগাঁওয়ে পরিবারের সাথেই কাটানোর ইচ্ছা রয়েছে। ছোটবেলায় ঈদ এলেই কেনাকাটার একটা আমেজ থাকতো কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পরে থেকে শপিংয়ের আমেজটা আর অনুভব করি না। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের এটাই প্রথম ঈদ তাই স্বভাবতই অনুভূতিটা একটু আলাদা। এতদিন ঈদের উৎসবগুলোও ছিলো একটি পরিবার কেন্দ্রিক, গণমানুষের ঈদ হতে পারেনি। মানুষের বাকস্বাধীনতা ছিল না, নিজস্ব স্বাধীনতা ছিলো না, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিলো না কিন্তু এবারে মানুষ মনপ্রাণ খুলে নিজস্ব ভঙ্গিতে ঈদ উদযাপনের সুযোগ পেয়েছে।
ঈদের দিন বিশেষ কোন কর্মসূচি না থাকলেও যেহেতু আমার এলাকায় ও আশপাশে বেশ কয়েকজন ভাই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন তো ঈদের দিন শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করবো। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইবোনদের প্রতি একটাই বার্তা থাকবে তা হলো জুলাই অভ্যুত্থানে দলমত নির্বিশেষে সবাই যেভাবে একসাথে কাধে কাধ মিলিয়ে ফ্যাসিস্টের পতন করেছিলাম, আগামী দিনেও যেন ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের স্বার্থে কাজ করতে পারি।
বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার সেক্রেটারি এস এম শামীম বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অপার খুশির বার্তা বয়ে আনে, যখন আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেই। নিজ এলাকায় গ্রামের সকলকে নিয়ে ঈদ উদযাপন করার পরিকল্পনা আছে। ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা থাকবে।
ঈদ উপহার বিতরণসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করব ইনশাআল্লাহ। ইবির ভাইবোনদের প্রতি আহ্বান থাকবে আসুন, ঈদুল ফিতরের শিক্ষা নিয়ে সকল হিংসা, বিদ্বেষ ও বিভেদ ভুলে গিয়ে ন্যায়, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, দয়া ও মানবতার আদর্শে সবাই একত্রিত হই।
ইবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি মো. ইউসুফ আলী বলেন, পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে ঈদুল ফিতরের শিক্ষা ও সৌন্দর্য পূর্ণতা দিতে চাই। এই ঈদে কিছু ক্ষুদ্র পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসনামলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ভাই শহীদ হয়েছেন এবং যারা গুম হয়েছেন, সামর্থ্য অনুযায়ী সেই পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি অসহায় পরিবারকে ঈদ সামগ্রী ও একজনকে ঈদ উপহার প্রদান নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আমরা জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে, আমাদের চারপাশের গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে ঈদের আনন্দকে সর্বজনীন করে তুলি।
আপনার মতামত লিখুন :