রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫

ফেল করা ছাত্রকে আইইআর পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি

মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি

প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ০৪:১২ পিএম

ফেল করা ছাত্রকে আইইআর পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি

শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর ) অধীন বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ছবি- সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধীন বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণির ভর্তিতে পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। গভর্নিং বডি ও শিক্ষকদের সুপারিশ ‘উপেক্ষা’ করে নিজের পছন্দমতো তিন প্রার্থীকে ভর্তি করিয়েছেন আইইআর পরিচালক অধ্যাপক আকতার বানু। তাদের মধ্যে একজনের অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলটির শিক্ষার মানোন্নয়নে গভর্নিং বডি ও শিক্ষকেরা এ বছর থেকে বিভিন্ন শ্রেণিতে অতিরিক্ত ও নতুন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি না করার সুপারিশ করেন। তবে সে সুপারিশ উপেক্ষা করে শেখ রাসেল মডেল স্কুল থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা শেষ করা অন্তত তিন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধাপে আইইআর পরিচালক অধ্যাপক আকতার বানুর ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ভর্তি করা হয়।

ভর্তি শিক্ষার্থীরা হলেন- অনিরুদ্ধ সরকার, জান্নাতুল ফেরদৌস ও আখতার হোসেন। তাদের মধ্যে অনিরুদ্ধ সরকার জেএসসির একটি বিষয়ের পরীক্ষার ‘শারীরিক অসুস্থতার’ কারণে যোগদানই করেননি।

এ বিষয়ে অনিরুদ্ধ সরকারে মাতা সেঁজুতি সরকারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘শারীরিক অসুস্থতার জন্য অনিরুদ্ধ জেএসসির একটি পরীক্ষায় যোগ দিতে পারেনি। ওই বিষয়ে তার ফেল রয়েছে। তবে পরবর্তীতে অনিরুদ্ধর বাবা ওকে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করায়। বর্তমানে সে নিয়মিত ক্লাস করছে।’

এ শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়ে জানতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মোহা. আমিনুল ইসলামের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং শেখ রাসেল মডেল স্কুল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একাধিক সূত্র জানায়, প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তির বিষয়ে স্কুলের শিক্ষক, গভর্নিং বডি, আইইআর এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে ভর্তি সম্পর্কে একটি নীতিমালা গ্রহণ করা হয়। ২০২৪ সালের ওই নীতিমালা অনুযায়ী আইইআর পরিচালকের ‘বিশেষ বিবেচনায়’ নতুন শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও স্কুলটিতে এ বছরে থেকে কোনো শ্রেণিতে নতুন কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তির না করার জন্য সুপারিশ করে।

উপাচার্যের হস্তক্ষেপ চেয়েও নেই প্রতিকার-

এদিকে অষ্টম শ্রেণিতে ফেল করা শিক্ষার্থীকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করালেও ভর্তি নেওয়া হয়নি অন্য শিক্ষার্থীদের। একই বছর জেএসসি পরীক্ষায় ৪র্থ এবং ৬ষ্ঠ মেধাক্রম অধিকার করা দুই বোন তানিসা সারওয়ার ও তাসনিয়া সরকার তিন মাসের অধিক সময় ধরে চেষ্টা করেও ভর্তি হতে পারেননি। পরে এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদন করেন তারা। এরই প্রেক্ষিতে গত ১১ মার্চ উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব আইইআর পরিচালককে ‘বিষয়টি যাচাই করে দেখতে’ বলেন। তবে এ বিষয়ে আইইআর পরিচালককে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তানিসা সারওয়ার ও তাসনিয়া সারওয়ারের বাবা বুলবুল সারওয়ার বলেন, আমার সন্তানরা মেধার স্বাক্ষর দিয়ে জেএসসিতে ভালো ফলের সাথে পাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজে তাদের ভর্তি নেওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ জানিয়েছি। তবে তাদের ভর্তি নেওয়া হয়নি। কিন্তু একই স্কুল থেকে তুলনামূলক খারাপ ফল করা কয়েকজনকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেএসসিতে ফেল করা একজনেরও ভর্তি নেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি।

এ বিষয়ে আইইআর পরিচালক অধ্যাপক আকতার বানু জানান, ‘নবম শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়ে যেহেতু কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ভর্তি নেওয়া হয়নি, সেক্ষেত্রে কাকে ভর্তি নেওয়া হবে এবং কাকে হবে না এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। যাদের ভর্তি করানো হয়েছে তাদের আইইআর পরিচালকের বিশেষ বিবেচনায় ভর্তি করানো হয়েছে।’

জেএসসিতে ফেল করা শিক্ষার্থীকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। এ বিষয়ে স্কুলই ভালো বলতে পারবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আরবি/এসআর

Link copied!