ঢাকা বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

ডিপ্লোমা কোটা বাতিলের দাবিতে চুয়েটে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

চুয়েট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৫, ২০২৫, ০৮:২৭ পিএম
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

চাকরিতে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের কোটা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে  এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রকৌশল নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়া, বিএসসি ডিগ্রিধারী হওয়া, কারিগরি দশম গ্রেডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত করা এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী ব্যতীত অন্য কেউ প্রকৌশলী পদবি ব্যবহার করতে পারবে না মর্মে আইন পাস করে গেজেট প্রকাশের দাবি জানান।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কারণে প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারীরা পদোন্নতি ও নিয়োগে ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন।

দীর্ঘ ৪ বছর কঠিন পাঠ্যক্রম, ল্যাব, থিসিস ও প্রজেক্টের মধ্য দিয়ে পাস করা বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা চাকরির বাজারে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সরকারি চাকরির দশম গ্রেডে একচেটিয়া শতভাগ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ এবং নবম গ্রেডে পদোন্নতিতে ৩৩.৩ শতাংশ কোটা আছে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের। অধিকন্তু নবম গ্রেডে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোটার ব্যবস্থা ৫০ শতাংশ করার অন্যায্য দাবিও জানিয়ে আসছিল তাঁরা। 

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, সরকারি নিয়োগে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রাধান্য ও বিএসসি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের উচ্চতর পদে প্রবেশে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা পেশাগত মর্যাদা ও ন্যায্যতা লঙ্ঘন করে।

কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। অভ্যুত্থানের পরেও চাকরিক্ষেত্রে এরকম অন্যায্য কোটা থাকা জুলাই শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি। তাই অবিলম্বে এ কোটা প্রথা বাতিল চান তাঁরা।

সমাবেশে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহাফুজার রহমান মোহাব্বত বলেন, জুলাই বিপ্লব ছিল সকল স্তরের বৈষম্য দূরীকরণের আন্দোলন। বিএসসি প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে চলমান দীর্ঘদিনের বৈষম্যের অবসান আজ সময়ের দাবি।

তিনি বলেন, ডিপ্লোমাধারীরা অন্যায়ভাবে কোটা সুবিধা ভোগ করছে। তারা দশম গ্রেড কুক্ষিগত করে রেখেছে এবং পরবর্তীতে ৩৩ শতাংশ বা বেশি কোটা নিয়ে সরাসরি নবম গ্রেডে পদোন্নতি পাচ্ছে, যা বিসিএস সমমানের।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, অথচ বিসিএসের জন্য একজন বিএসসি প্রকৌশলীকে অসম্ভব পরিশ্রম ও প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাই এরকম অবৈধ কোটা প্রথা বাতিল করতে হবে। দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তির যথাযথ মূল্যায়ন অত্যন্ত জরুরি। তাই আমরা যে তিন দফা দাবি উত্থাপন করেছি, তা অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হোক।

পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, সহকারী প্রকৌশলী পদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ, যেখানে গবেষণাধর্মী চিন্তা, জটিল সমস্যা সমাধান ও প্রকৌশল বিশ্লেষণ ক্ষমতা প্রয়োজন। অথচ এই পদে বর্তমানে ৩৩ শতাংশ কোটা পদোন্নতির মাধ্যমে ডিপ্লোমাধারীদের দেওয়া হচ্ছে। এমনকি কোথাও কোথাও ৫০ শতাংশের বেশি পদও পূরণ হচ্ছে।

তিনি বলেন, এর ফলে প্রকৃত বিএসসি প্রকৌশলীরা চাকরিতে নিয়োগে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় প্রকল্প ও সেবার মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আরও ভয়ংকর বিষয় হলো, বহু প্রতিষ্ঠান তাদের পদন্নোতিযোগ্য ডিপ্লোমাধারীদের সান্ধ্যকালীন বিএসসি কোর্স করিয়ে সহকারী প্রকৌশলী পদে বসিয়ে দিচ্ছে।  

তিনি আরও বলেন, এটা শুধুমাত্র দেশের প্রকৌশল খাতকেই ধ্বংস করছে না, বরং মেধাবী তরুণদের হতাশ করে দেশত্যাগে বাধ্য করছে। পাশাপাশি চাকুরি ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা টেকনিশিয়ানদের কাছে বিএসসি প্রকৌশলীদেরকে প্রতিনিয়ত হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। তাই আমাদের এই তিনদফা দাবি মানা না হলে আমরা দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।

উল্লেখ্য, বর্তমানে কারিগরি পদে (১০ম গ্রেড) শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরাই আবেদন করতে পারেন এবং পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে তারা সরাসরি ৯ম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী পদে প্রবেশ করতে পারেন।

তবে একজন বিএসসি ডিগ্রিধারীকে এই ৯ম গ্রেডে প্রবেশ করতে প্রচুর প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যার কারণেই এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে বলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান। শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত এই তিনদফা দাবি মানা না হলে তারা দেশব্যাপী আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করার হুঁশিয়ারি দেন।