ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

ছাত্রদলের কাউন্সিলে প্রিজাইডিং অফিসার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম
মঞ্চে লাল বৃত্তের মধ্যে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন ও অভিযুক্ত শাহাদাত হোসেন। : রূপালী বাংলাদেশ

পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রদলের কাউন্সিল গত ২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। শাখাটির কাউন্সিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহি ও প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে শাখা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী কাজ করেছেন। 

তবে বিতর্ক শুরু হয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাবির একটি হল শাখার  সাবেক এক নেতার প্রিজাইটিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন নিয়ে। একই মঞ্চে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীনের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন নিষিদ্ধ সংগঠনের এই নেতা।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে দল বদলকারী ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম শাহাদাত হোসেন। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠনের রাবির সৈয়দ আমীর আলী হল শাখার সহসভাপতি ছিলেন।

কমিটির পাতায় নাম থাকলেও তিনি তার পদের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও হল শাখার একাধিক নেতা তার পদের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি রাজশাহীর কাটাখালি থানার হরিয়ান এলাকার মো. শহিদুল ইসলামের ছেলে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুসহ একাধিক নেতার সঙ্গে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময়ের একাধিক ছবি তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি তার ফেসবুক থেকে সব সরিয়েও নেন। 

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা জেবর আলীর নির্বাচনী প্রচারণায়ও সম্মুখ সারিতে থেকেছেন তিনি। তা ছাড়া গত বছরের ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরাসরি আন্দোলনে নামার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এই ছাত্রলীগ নেতাকে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান আশ্রয় দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। শাখা ছাত্রদলের একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। অভিযোগ অস্বীকার করলেও নিজের পক্ষে যথাযথ প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তবে বিএনপির সদস্যপদ পূরণের রসিদ দেখিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করার কারণে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগকে যেন চাঁদা দিতে না হয়, তাই তাদের সঙ্গে লিঁয়াজো করে চলতে হয়েছে। আমি ছাত্রলীগের কোনো পদে ছিলাম না। তবে তাদের সঙ্গে কোচিং সেন্টার পরিচালনার জন্য মেলামেশা ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমার আত্মীয়, তাই তার নির্বাচনে সহযোগিতা করেছি।’

বর্তমানে ছাত্রদলের কাউন্সিলে দায়িত্ব পালন ও দল পাল্টানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আগে থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তবে ব্যবসায়িক কারণে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে লিঁয়াজো করে চলতে হতো। আমি পাবনায় একটা কাজে গিয়ে শাখা ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে দায়িত্ব পালন করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি। ক্যাম্পাসে অনেকেই এসে আমার সঙ্গে ছবি তুলে। পাবনার ঘটনায় শাহাদাত গিয়েছিল তার ব্যক্তিগত কাজে, সে আমাদের সফরসঙ্গী বা দলের অংশ হিসেবে না। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক হিসেবে পরিচয় দিলে তার সঙ্গে কথা হয়। মঞ্চে নাসির ভাইয়ের সঙ্গে অনেকই ছবি তুলেছে। তাই হয়তো শাহাদাতও ছবি তুলেছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘শাহাদাত নামের যে ছেলেকে নিয়ে কথা হচ্ছে, সে ওই কাউন্সিলের সফর সঙ্গী না। সে পাবনা থাকায় রাবি যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল মিঠুর ক্যাম্পাসের ছোট ভাই হিসেবে দেখা করতে আসে।’