আমরণ অনশন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৩২ জন ছাত্র। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের দাবিতে সোমবার বিকেল ৪টা থেকে ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টায় আমরণ অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কুয়েটের এমটিই বিভাগের ২৩ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী। অসুস্থ শিক্ষার্থীকে কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারের কর্মকর্তারা সেবা-শুশ্রূষা করেন। এ সময় তাকে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তির অনুরোধ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ভর্তি হতে অস্বীকৃতি জানান।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ৩২ জন ছাত্র মেঝেতে তোষক বিছিয়ে কেউ বসে আছেন, কেউ শুয়ে আছেন। পাশে কয়েকটি স্ট্যান্ড ফ্যান রয়েছে। রাতে কিছু খাননি তারা। সেন্টারের সামনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স।
অনশনরত শিক্ষার্থী রাহাত, গালিব, মহিবুজ্জামান উপল, তৌফিক ও ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘উপাচার্যকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে জীবন দেব।’
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা হামলা করলেও কুয়েট প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। হামলাকারীদের নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত পরিচয় লোকজনের বিরুদ্ধে দায়সারা একটি মামলা করেছে কুয়েট প্রশাসন। হামলার ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
এদিকে, সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক, সহকারী পরিচালক, ডেপুটি পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক অনশনরত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় যান।
এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের আবারও অনুরোধ করেন অনশন থেকে সরে এসে আলোচনায় বসার জন্য। এ ছাড়াও তারা এ সময় শিক্ষার্থীদের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা সাড়া দেননি।
এর আগে সোমবার (২১ এপ্রিল) ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৩২ জন আমরণ অনশনে অংশ নেন। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ওই দিন বেলা ২টার পর থেকে শিক্ষার্থীরা দুর্বার বাংলা পাদদেশের সামনের সড়কে জড়ো হতে থাকেন।
এরপর সেখানে বিভিন্ন বিভাগের ৩২ জন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে আমরণ অনশন শুরু করেন। বাকি শিক্ষার্থীরা অনশনরত শিক্ষার্থীদের চারদিকে অবস্থান নিয়ে তাদের উৎসাহ প্রদান করেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা গত ১৩ এপ্রিল ক্যাম্পাসে ঢুকে হল খুুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। দুই রাত তারা খোলা আকাশের নিচে থাকার পর ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে হলে ঢোকেন।
কিন্তু হলে খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ তাদের দাবি পূরণের উদ্যোগ নেননি। তাই তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনে বাধ্য হয়েছেন।
মঙ্গলবার বেলা বারোটায় ছাত্রকল্যাণ পরিচালক, সহকারী পরিচালক, ডেপুটি পরিচালকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনশনস্থল স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় অবস্থান নেন।
এরপর বেলা তিনটার পর অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন থেকে সরে এসে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়ে একাধিক শিক্ষক বক্তব্য দেন।
এ সময় শিক্ষকরা তাদের জুস পান করার অনুরোধ জানিয়ে অনশন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। এভাবে টানা দীর্ঘ সময় চেষ্টা চালিয়েও শিক্ষার্থীদের নমনীয় করতে না পেরে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালকসহ শিক্ষকরা সেখান থেকে চলে যান।
এ ব্যাপারে কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের এবাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়। আবারও শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করার ব্যাপারে কথা বলব।’
আপনার মতামত লিখুন :