ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০৬:৪৭ পিএম

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

ঢাবি: রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পদত্যাগসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র  আন্দোলন। এই সপ্তাহের মধ্যে দাবি মানা না হলে পুনরায় রাজপথে নামার ঘোষণা দেন তারা।  মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩ টায় ‘রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার’ দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত গণজমায়েতে সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এই ঘোষণা দেন।

গণজমায়েতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্র-জনতা জড়ো হন। জাতীয় নাগরিক কমিটির ঢাকা মহানগর শাখা একই দাবি নিয়ে গণজমায়েতে যোগ দেন। গণজমায়েত শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে কর্মসূচি শেষ হয়।

দাবিগুলো উল্লেখ করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ১. বিদ্যমান সংবিধান অনতিবিলম্বে বাতিল করে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন সংবিধান লিখতে হবে। ২. ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে এই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ৩. রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে এই সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। ৪. এই সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের আলোকে ‘প্রোকলেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে। বাংলাদেশের বিদ্যমান গণতন্ত্রকামী ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলবে। ৫. ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এই তিন নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছে, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তারা যেন কখনো বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না পারে, সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামীলীগসহ ফ্যাসিবাদি সকল সংগঠন এবং মুজিববাদি চেতনার সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গণমাধ্যমকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। ১৭ জুলাই যখন ছাত্রলীগ, যুবলীগ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে, তখনই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, জঙ্গি সংগঠন ও তার মা শেখ হাসিনার এই বাংলাদেশে স্থান হবে না।

অনলাইনে সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মীদের উদ্দেশ্য করে হাসনাত বলেন, তোমরা আমদের কী  ভয় দেখাবে? আমরা পুলিশলীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমাদেরকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করেছি। তোমাদের ‘মাদার অব টেরর’ শেখ হাসিনা তোমাদের ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য টেনে-হিচড়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিম উদ্দীন পাঠওয়ারী বলেন, আমরা কোন ফ্যাসিবাদের অংশ চাই না। চুপ্পু ফ্যাসিবাদী হাসিনার অংশ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে চুপ্পুর পদত্যাগের দাবি জানান।

তিনি বলেন, শহীদদের রক্তের উপর দাড়িয়ে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ চাই। গত ১৫ বছর যারা গুম, খুনের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের বিচারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এই দাবি যদি না মানা হয় গত ৫ আগস্ট যেভাবে আন্দোলন হয়েছিল, আমরা সেভাবে চূড়ান্ত বিপ্লবের দিকে নিয়ে যাব। সকল সমস্যার কারিগর ৭২ এর বাকশালি সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান গঠন করতে হবে। এইসকল দাবি এই মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশের সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলবে বলে হুশিয়ারি দেন নাসিম উদ্দীন।

সমম্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ৫ আগস্ট সাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু এখন কী খেয়ে, কোন মানসিক অবস্থায় থেকে তিনি বলছেন যে তার কাছে পদত্যাগপত্র নাই! শেখ হাসিনাকে যেভাবে পালাতে হয়েছে, সাহাবুদ্দিককেও সেভাবে পালাতে হবে। কোনো ফ্যাসিস্ট যদি গর্ত থেকে উকি দিতে চায়, ছাত্রজনতা ঐক্যবদ্ধভাবে তাকে প্রতিহত করবে।

সমম্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ফ্যাসিবাদের মূল আদর্শ মুজিববাদিতা। ছাত্রলীগ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় অগ্রনায়ক ছিল। শেখ হাসিনার সময়ও তারা এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম জারি রেখেছে। বিগত ১৫ বছরে তারা বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। হাজার হাজার মানুষকে গুম করেছিল। ছাত্রলীগ দিয়ে এই ফ্যাসিবাদের শুরু হয়। তাই  এদেরকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা ৩ তারিখ অঙ্গীকার করেছিলাম, ফ্যাসিবাদের বিলোপ করব এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করব। কিন্তু  ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থায় সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত সাহাবুদ্দিন এখনো ক্ষমতায় আছে।

তাছাড়া, গণজমায়েতে আরও বক্তব্য দেন সমম্বয়ক লুৎফর রহমান, আরিফ সোহেল, সহ-সম্বয়ক রিফাত রশীদ, শিক্ষার্থী আশরেফা খাতুনসহ প্রমুখ।

আরবি/এস

Link copied!