সকল ধরনের রাজনীতি বন্ধের প্রজ্ঞাপন নিয়ে ২০০৬ সালের ২৮মে দেশের ২৬তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। আইনে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও বাস্তবে নেই কোন পদক্ষেপ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ২০০৬`র ৪৩-এর (ঘ) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবে না। সেই অনুযায়ী ২০০৭ সালে কুবির প্রথম সিন্ডিকেট সভাতেই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ক্যাম্পাসকে রাজনৈতিক দল ও লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ছাত্র শিক্ষক কেউ তার ধার ধারে নাই। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই শুরু হয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি। শিক্ষকরা গঠন করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ আর ছাত্রলীগ শুরু করে দমন-পীড়নের রাজনীতি। তাদের অরাজকতার কারণে অনেক শিক্ষককে ছাড়তে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন শেষ করতে না পেরে পাড়ি দিয়েছেন অন্য পেশায়।
রক্তাক্ত জুলাই বিল্পবের পর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি উত্থাপন করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, তার আর কোন দলের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির শিকার হতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা, সমাধান সবকিছু ছাত্র সংসদের মাধ্যমে করতে চাই তারা। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করার এখনই সময়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিলেই ছাত্র সংসদ সময়ের ব্যাপার। তবে ছাত্র সংসদের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন নীতিমালা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে।
এদিকে ৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০তম (জরুরী) সিন্ডিকেট সভায় প্রথম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের আলোকে ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগী/ অঙ্গ/ ভাতৃপ্রতীম সংগঠন প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও এ-সবের তোয়াক্কা না করে সাম্প্রতিক সময়ে আবারও শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোডাউন, হলে দলীয় প্রোগ্রাম, শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে আনাগোনা এবং কেক কেটের দলীয় কার্যক্রম উদযাপন করার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে।
ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ তবুও কেন প্রচারণা জানতে চাইলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তার জায়গা। আমরা এটাকে সম্মান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতেছি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে আগামীর বাংলাদেশ হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, কারা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করছে! যারা ফ্যাসিস্টের সহযোগী ছিল। তারা ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি করে সিন্ডিকেট ডেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফ্যাস্টিস্টের কোন সিদ্ধান্ত মানা হবে না।
ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করলে ছাত্রদলের কেন প্রয়োজন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্র সংসদকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি না থাকলে ফ্যাসিস্টের সহযোগীরা আবারও মাথচাড়া দিয়ে উঠবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ ভাগ শিক্ষক ফ্যাস্টিস্টের মাধ্যমে নিয়োগকৃত। তাদের সহযোগিতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় রক্তদাতা `বন্ধু`র সভাপতি ওসমান গনী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের কার্যক্রর ব্যবস্থার নেওয়ার এখনই সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যে রাজনীতি তা লেজুড়বৃত্তিক ছাড়া কিছুই না। তা বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিত করতে, শিক্ষক - শিক্ষার্থীদের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরপেক্ষ প্লাটফর্ম ছাত্র সংসদ`র নীতিমালা প্রণয়নের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
নাজিম উদ্দীন নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা ক্যাম্পাসে কোনো সমন্বয়ক,দল,শিবিরের রাজনীতি চাই না। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য একটা ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতোদিন ভিসি ছিলো না। এখন ভিসি আসছে।ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহামুদুল হাসান খান বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনের পর আবারও লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি শিক্ষার্থীদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি বয়েই আনবে। রাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে আধিপত্যে বিস্তার, হল দখলকে কেন্দ্র করে গ্রুপিং বা ভয়ের রাজনীতি শুরু হলে সাধারন শিক্ষাথীদেরই ক্ষতি।
এই আন্দোলনে যদি ক্যাম্পাসে ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ না হয় তাহলে আবার কোন স্বৈরাচার ঘাড়ে চাপলে তখন কোন শিক্ষার্থী স্বৈরাচার তাড়ানোর মনোবল নিয়ে এগিয়ে আসবে না। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে শিক্ষক রাজনীতি ও বন্ধ হবে।
কিছু স্বার্থনেস্বী শিক্ষকরা ছাত্রদের নিয়েই রাজনীতি করে। ছাত্রদের কে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ উদ্বার করে। এই অপরাজনীতি ফলে শিক্ষার্থী, সমাজ, রাষ্ট্র শিক্ষকদের গবেষণা থেকে বঞ্চিত হবে।
এ বিষয়ে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, বিষয়টি আমি তোমার থেকে জানলাম। সবার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো।
আপনার মতামত লিখুন :