ঢাকা সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪

জাবিতে ’অ্যান্টি র‌্যাগিং সেল’ গঠনের দাবি

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৪, ০৭:৫৫ পিএম

জাবিতে ’অ্যান্টি র‌্যাগিং সেল’ গঠনের দাবি

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

জাবি: র‍্যাগিং মুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে র‍্যালি ও মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন।  আজ শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হল থেকে র‍্যালিটি শুরু হয়ে মওলানা ভাসানী হল, বটতলা,  আ ফ ম কামালউদ্দিন হল ও রেজিস্ট্রার বিল্ডিং হয়ে শহীদ মিনারে এসে মানববন্ধনের মাধ্যমে শেষ হয়।

র‍্যালিতে শিক্ষার্থীদেরকে ‘একশন টু একশন- র‍্যাগিং এর বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট একশন’, ‘এসো নবীন ভয় নাই-জাহাঙ্গীরনগরে র‍্যাগ নাই’, ‘জাহাঙ্গীরনগর এর পক্ষ থেকে-লাল গোলাপ শুভেচ্ছা’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

এসময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান ধ্রুব বলেন, এতদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রাজনৈতিক দল গণরুম কালচার চালু রেখে হলে হলে সিন্ডিকেট করেছে। যা অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গের কারণ। আমরা চাই, আর কখনো যেন কোন রাজনৈতিক দল এই ধরণের কালচার গড়ে তুলতে না পারে। র‍্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সকলকে সোচ্চার হতে হবে। এই কালচার বন্ধ করতে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতেই হবে।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, আপনারা র‍্যাগিং কালচার বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পরিয়ে স্কুল-কলেজেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যেত একজন নবীন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে তাকে মুরগী নামে আখ্যা দেয়া হয়। একটি মুরগী দেখলে যেমনিভাবে শিয়াল ঝাপিয়ে পড়ে তেমনিভাবে সিনিয়ররা ওই নবীন শিক্ষার্থীর উপর কে কার চেয়ে বেশি র‍্যাগ দিতে পারে সেই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। আমরা প্রশাসনের কাছে জানাতে চাই এই ধরণের কালচার যেন আর গড়ে উঠতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দিতে চাই বিগত স্বৈরাচারের আমলে ম্যানার শিখানোর নাম করে যে অন্যায় দিনের পর দিন করেছে তা এখন আর সহ্য করা হবে না।

বায়োকেমিস্ট এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজিরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসার পর যে ধরণের মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় তা খুবই নিন্দনীয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমরা প্রশাসনের কাচগে একটি এন্টি র‍্যাগিং সেল/স্কোয়াড গঠনের দাবি জানাচ্ছি। যেন কোন নবীনরা এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পায়।

জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহবায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, একজন নবীন শিক্ষার্থী অনেক স্বপ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরে তাদেরকে যে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা ছিল নজিরবিহীন। আমরা জুলাই বিপ্লবের পর একটি পরিবর্তন চেয়েছি যেখানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা গণরুম ও র‍্যাগিং কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে চাই
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোন র‍্যাগিং দেখতে চাই না। তাই জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের পক্ষ থেকে সকল স্তরের  স্টেকহোল্ডারদেরকে এই কালচার এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলার আহবান জানাচ্ছি। আমরা শিক্ষকদেরকে আহবান জানাই র‍্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে আপনাদের অগ্রনী ভূমিকা রাখতে হবে।

প্রণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, র‍্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্য এই ধরণের সময়োপযোগী আয়োজনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যাবস্থা নিয়েছে যেন কোণ র‍্যাগিং না হয়। এর পাশাপাশি আমরা প্রক্টরিয়াল বডি সর্বদা সচেষ্ট আছি যেন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটতে পারে। প্রক্টরিয়াল টিম আজকে রাত থেকে শুরু করে আগামী ১০-১২ দিন করা নজরদারিতে রাখবে যেন র‍্যাগিং কালচার পুনরায় চালু না হয়।

অধ্যাপক খোঃ লুৎফুল এলাহী বলেন, আমি র‍্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের এই র‍্যালির সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। আমি সবাইকে আহবান জানাবো এতদিন পরে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি সেখানে যেন কোন ধরণের র‍্যাগিং কালচার না থাকে। সেই লক্ষ্যে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি নবীনদেরকে বলবো নিজেরা সচেতন থেকে র‍্যাগের বিরুদ্ধে আওয়াজ ত্যলতে হবে।

অধ্যাপক এলাহী আরও বলেন, নবনির্মিত হলগুলোতে গ্যাস সংযোগ দিয়ে নতুন হলে যেন ডাইনিংএর ব্যবস্থা করা যায় এইদিকে সুনজর দেয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন ব্যাচ (৫৩ ব্যাচ) এর আগমন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সকল হলেই প্রথম বর্ষের সকল শিক্ষার্থীর জন্য সিট নিশ্চিত করেছে। এখন পর্যন্ত কোন হলেই গণরুম নেই বলে খোঁজ পাওয়া গেছে। এর পাশাপাশি যেন র‍্যাগিং কালচারও না থাকে সেই লক্ষ্যে এই আয়োজন করে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন।

 

আরবি/এস

Link copied!