ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার আমলে লাল ফাইলে বন্দি ছিল বগুড়া বিমানবন্দর। দুইযুগ বঞ্চনার পর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে চলছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, সকল কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রয়োজন ১২শ’ কোটি টাকা। বিমানবন্দর চালু করার জন্য আরও জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। শুরুতেই অভ্যন্তরীণ রুটে উড়বে বিমান। ইতিমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ রোববার সরেজমিনে বগুড়া বিমানবন্দর ও আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করবেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া ও বিমান বাহিনী প্রধানসহ একটি টিম। পরিদর্শন শেষে তাঁরা বিমানবন্দর চালুর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিলেই শুরু হবে কার্যক্রম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা।
বাংলার প্রাচীন রাজধানী বগুড়ার মহাস্থানগড়। এ জেলায় দর্শনীয় ও ধর্মীয় একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ হাজার বিদেশি পর্যটক আসেন। শিল্প, শিক্ষা ও ব্যবসা বাণিজ্যে এগিয়ে থাকলেও বগুড়ায় বিমানবন্দর চালু না হওয়ায় উন্নয়নের পরিবর্তন ঘটেনি। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাড়ি বগুড়াতে হওয়ায় আওয়ামী লীগ শাসনামলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে উত্তরাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন প্রত্যাশা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন।
সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে বগুড়ায় আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের শেষদিকে বিমানবন্দর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। ১৯৯৫ সালে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ সড়কের পাশে ১১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এরপর ১৯৯৬ সালে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরে রানওয়ে, কার্যালয় ভবন, কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ ও রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ কাজ ২০০০ সালে শেষ হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় বিমান চালুর উদ্যোগে ভাটা পড়ে। ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
সূত্র আরও জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার শাসনামলে বগুড়া-৭ আসনে রেজাউল করিম বাবলু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিমানবন্দর চালুর জন্য বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন করেছিলেন। তিনি বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে বগুড়া বিমানবন্দর চালুর প্রস্তাবনা করেন।
ওই আবেদনে বলা হয়, বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচলের জন্য নব্বইয়ের দশকে ১১০ একর জায়গাজুড়ে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিমানবন্দরের কাজ সম্পন্ন করলেও ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এটি বাণিজ্যিকভাবে চালু না করে বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। এমন প্রেক্ষাপটে রাজস্ব আয় এবং দেশি-বিদেশি যাত্রীদের সুবিধার্থে বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু করার সুপারিশ করেন বাবলু। তার প্রস্তাবনার আলোকে সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদনসহ মতামত দিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। বিমানবন্দর এলাকা পরিদর্শনের পর একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেছিল সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটি।
বগুড়া জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মীর শাহে আলম রূপালী বাংলাদেশ-কে বলেন, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়াতে হওয়ায় উত্তরাঞ্চলকে সবক্ষেত্রেই বঞ্চনা করেছে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার। বগুড়া বিমানবন্দর চালুর বিষয়টি তারা আমলেই নেয়নি। এই জেলার মানুষের ভাগ্য লাল ফাইলে বন্দি করে রেখেছিল। বিমানবন্দর চালু হলেই উত্তরের কয়েকটি জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে, এটি কখনোই চায়নি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ পলাতক শেখ হাসিনা।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, জেনেছি বাণিজ্যিকভাবে বিমানসেবা চালুর মতো সব ধরনের অনুকূল পরিবেশ বগুড়ায় রয়েছে। আমরা একটি টিম রোববার পরিদর্শনে যাচ্ছি। বগুড়া বিমানবন্দর চালু করতে পারলে দেশের জন্য ভালো হবে। পরিদর্শন করার পরই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :