ভিডিও কলে প্রেমিককে রেখেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০২৩-২০২৪ সেশনের প্রথম বর্ষের (৫৩ ব্যাচ) শিক্ষার্থী তাকিয়া তাসনিম বিভা (১৯)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ভোর ৫টায় হলের ৭০০৫ নম্বর রুমে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান শিক্ষার্থীরা। নিহত তাকিয়া মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালীর আরিফ হোসেনের মেয়ে।
জানা গেছে, তাকিয়া সাভারে তার মামার বাসায় থেকে ক্লাস করতেন। হলে অনিয়মিত ছিলেন। সে শনিবার হলে আসে। অন্য রুমমেটরা হলে না থাকায় তিনি একাই রুমে ছিলেন। তার মোবাইল ফোনে দেখা গেছে, ফাঁস নেওয়ার আগে ১ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট ভিডিও কলে কথা বলেছেন।
সহপাঠীরা জানান, ভিডিও কলে থাকা ব্যক্তিটি তাকিয়ার প্রেমিক সাব্বির। কলে তাদের ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সাব্বিরকে ভিডিও কলে রেখেই সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস নেওয়ার চেষ্টা করেন তাকিয়া। এ সময় ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের বিষয়টি জানান সাব্বির। তারা হল প্রভোস্টকে জানান। পরে দরজা ভেঙে তাকিয়াকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান সহপাঠীরা। উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী তার ব্লকের শিক্ষার্থী শিউলি আক্তার বলেন, ‘ভোর ৪ টা ৪৬ মিনিটে একটি নম্বর থেকে আমার নম্বরে কল আসে। অপর পাশ থেকে একটা ছেলে বলে আপনি কি তাকিয়ার পাশের রুমের? আমি বলি আমার থেকে একটু দূরে ওর রুম। সে বলে দ্রুত তাকিয়ার রুমে যান ও সুসাইড করতে পারে। পরে আমি দৌঁড়ে তাকিয়ার রুমে গিয়ে ধাক্কা ধাক্কি করি। এরপর আরও কয়েকজন লোক জড়ো হয়। পরে দরজা ভেঙে দেখি সে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। এটা দেখে সেখানেই কয়েকজন পড়ে যায়। পরে কয়েকজন ধরে তাকে বিছানায় নামানো হয়।
আরেক শিক্ষার্থী উম্মে মারিয়াম বলেন, ‘আনুমানিক ভোর ৫টায় খবর পাই ৭০০৫ নম্বর রুমে একজন ঝুলে আছে। সেখানে গিয়ে দেখি তাকিয়া ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস নিয়েছে। এরপর একটি বটি দিয়ে ওড়না কেটে তাকে খাটে শুইয়ে দিই। তখন গলায় হাত দিয়ে দেখি তার গলা ঠান্ডা আবার হালকা গরমও ছিল। গলায় তেমন দাগ ছিল না। তার পা ঠান্ডা হয়ে গেছিলো।
নিহত তাকিয়ার স্থানীয় অভিভাবক মামা মনির হোসেন বলেন, ‘ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আমার ফোনে হল থেকে একটা ফোন আসে। এরপর আমাকে বলা হয় তাকিয়া আত্মহত্যা করেছে। পরে আমি সাভার থেকে ঘটনাস্থলে যাই এবং দেখি যে তাকে ওড়না কেটে খাটের ওপর নামানো হয়েছে। এর আগে আমি তাকিয়ার বাবাকে ফোন করে ঘটনা জানাই। তার বাব-মা মাগুরা থেকে রওনা হয়েছে বলে জানান তিনি।’
পুলিশের ডিউটি অফিসার মাসুদ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে নিহত শিক্ষার্থীর তথ্য নিয়েছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী ও তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। নিহতের পরিবার এবং হল প্রাধ্যক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তার ময়নাতদন্ত করা হবে। তারা অনুমতি না দিলে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
নিহত শিক্ষার্থী তাকিয়া রুমে একাই থাকতেন এবং হলে নিয়মিত থাকতেন না। তার রুমের বাকি সদস্যরা হলে থাকতেন না। তার সহপাঠীরা ধারণা করছেন বয়ফ্রেন্ডকে ভিডিও কলে রেখে তাকিয়া আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ নিহতের রুম থেকে ডায়েরি, ল্যাপটপ এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :