বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যকে ধারণ করে ও গ্রামীণ বাংলার সংস্কৃতি বিনিময় করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নবান্ন উৎসব পালন করা হয়েছে। `নতুন ধানে নবান্ন সবার ঘরে আনন্দ` প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিবছরের ন্যায় উৎসবটি আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় কৃষি অনুষদের সামনে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। পরে উৎসব উপলক্ষে অনুষদের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে আবার কৃষি অনুষদে এসে শেষ হয়। এছাড়াও দিনটিকে ঘিরে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
পিঠা উৎসবে `হৈমন্তী`, `বরেন্দ্রের পিঠা`, `পিঠান্ন`, `পিঠা বাড়ি`, `হৃদয় হরণ`, `প্লিজ মামা ডাকবেন না টি স্টল`, `জামাই বাড়ি`, `খাইলেই সিজি হাই`সহ বিভিন্ন নামের ১০টি স্টল সাজানো হয়েছে। স্টল গুলোতে দুধপুলি, চন্দ্র পুলি, তেল পিঠা, নকশী পিঠা, পাটি সাপটা, লবঙ্গ লতিকা, গাজরের হালুয়া, রস মলাইসহ দেড় শতাধিক পদের পিঠা প্রদর্শিত হচ্ছে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি হওয়া এসব পিঠা উপভোগ করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভিড় ছিল উপচে পড়ার মতো।
এ ছাড়াও স্টলগুলো পিঠা বিক্রির জন্যও অবলম্বন করেছেন ভিন্ন ভিন্ন কৌশল। স্টলের নেমপ্লেটের সাথেই `খুব খাচ্ছি, আরাম পাচ্ছি`, `শোনো শোনো বন্ধুগণ, শোনো দিয়া মন, নবান্নে ক্ষুধা মেটাতে পিঠার প্রয়োজন`, `মেয়েদের মন যদি করতে চান জয়, হৃহৃদয় হরনের পিঠা খেয়ে যান দূর হয়ে যাবে ভয়`, `রূপে নয় গুনে পরিচয়`, `পিঠা খান মন ভরে, টাকা দিন পকেট খুলে` এমন সব লেখনীর মাধ্যমে ক্রেতাদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করা হয়েছে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি বলেন, `নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ইতিহাস ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের। এ সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য আমাদের কৃষি অনুষদ কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই নবান্ন উৎসব। আমাদের দায়িত্ব হলো ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।`
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান ও অধ্যাপক মোহা. মাঈন উদ্দিন, এগ্রোনোমী এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, বিভাগের শিক্ষকরাসহ প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, `পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব ও অপসংস্কৃতির সয়লাব থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা গ্রাম বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যকে সামনে আনার উদ্দেশ্যে নবান্ন উৎসব উদযাপন করি। নবান্ন বাঙালি সংস্কৃতির গভীর শিকড়ে প্রোথিত একটি আনন্দঘন অধ্যায়। কার্তিক মাসের দুঃসহ অভাব পেরিয়ে অগ্রহায়ণের ঋতুসন্ধি আমাদের জীবনে যে মাধুর্য ও প্রাচুর্যের বার্তা বয়ে আনে, সেটিই এই উৎসবের মূল সুর।`
পিঠা উৎসবের বিষয়ে জানতে চাইলে বরেন্দ্র স্টলের শামীম রেজা বলেন, পিঠা উৎসবে যে শুধুমাত্র অর্থের বিনিময়ে পিঠা দেওয়া হয় বিষয়টা মোটেও এমন নয়। বরং এ অনুষ্ঠানে আমরা বাঙালি সংস্কৃতিকে লালন করে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা সকল অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে আমাদের অঞ্চলের সংস্কৃতি বিনিময় করতে পারছি।
আপনার মতামত লিখুন :