ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
প্রক্টর দপ্তরে অভিযোগ

মধ্যরাতে রাবির নবীন শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতন

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৬:০৭ পিএম

মধ্যরাতে রাবির নবীন শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতন

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাস ও নাজমুল হোসেন নাবিল। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এক নবীন শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে মানসিক হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মার্কেটিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এছাড়া শিবির সদস্য ডেকে এনে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরের লেবুবাগান এলাকার ‘বিশ্বাস ম্যানসন’ ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ রকি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাস ও  ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান নাভিল। 

অভিযোগপত্রে মোহাম্মদ রকি উল্লেখ করেন, ‘আমি মোহাম্মদ রকি গতকাল রোববার রাত পৌনে ১২টা থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছি। ‘বিশ্বাস ম্যানসন’ ছাত্রাবাসের ২০১ ও ২০৫ নম্বর রুমের দুইজন শিক্ষার্থী গতকাল রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে আমার কক্ষে আসেন। শুরুতেই তারা আমাকে নানা রকম বিব্রতকর প্রশ্ন করেন। ফলে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হই। কথাবার্তার একপর্যায়ে তারা আমাকে বলেন, তোকে হলের গেস্টরুমে নিয়ে যাব, গেস্টরুমে নিয়ে গিয়ে তোকে আদর আপ্যায়ন করব। এরপর তারা বলেন, শেষবারের মতো তোর মাকে কল দে, কল দিয়ে বলবি আর কোনদিন দেখা নাও হতে পারে, আমি কোনো ভুল করলে আমাকে মাফ করে দিও।’ 

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী আরও উল্লেখ করেন, ‘একপর্যায়ে তারা বলেন, আবরার ফাহাদকে কিভাবে মারা হয়েছিল জানিস? আমি বলি, জি ভাই পিটিয়ে মারা হয়েছিল। তারপর তারা বলেন, তোকে এভাবে মারলে তখন কি করবি?’ তারপর আমি চুপ থাকি। তারা হুমকি দিয়ে বারবার আমাকে হলের গেস্টরুমে যেতে বলেন। আমি যেতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে বলেন, তুই যদি হলের গেস্টরুমে যেতে না চাস তাহলে মেসে শিবির ডেকে নিয়ে এসে তোকে মারবো। এরপর তারা আমাকে বলেন, তোর রুমমেটদের সেমিস্টার ফাইনাল ৭ তারিখে শেষ হবে। ৮ তারিখ রাতে তোর সঙ্গে আমরা পার্টি দিব। এরপর তারা আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে রুম থেকে বের হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ রকি বলেন, গত শুক্রবার আমি মেসে উঠেছি। মেসে উঠার পর আমি মেসে অবস্থানরত সবার কক্ষে গিয়ে পরিচিত হয়ে এসেছিলাম। পরে, রোববার রাতে ওই দুজন আমার কক্ষে এসে নানাভাবে হুমকি ও হয়রানি করেন। ওইদিন রাতে আমি ঘুমাতে পারি নি। এ রকম ঘটনা যেন আর কারো সঙ্গে না ঘটে এটাই আমার একমাত্র চাওয়া। এছাড়া অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

পরে অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. নাসির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনেন এবং অভিযুক্ত দুজন শিক্ষার্থীকে প্রক্টর দপ্তরে ডেকে আনা হয়। পরে অভিযুক্ত দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মার্কেটিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন নাবিল বলেন, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভাগের বড় ভাই ওই ছেলের কক্ষে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে বড় ভাই রকির সঙ্গে মজা করেন। কিন্তু আমি সেরকম ইনফ্লুয়েন্স করিনি। কোনো রকম শিবির নিয়ে কথাবার্তা, মারা বা অত্যাচার করা হয়নি। তবে আবরার ফাহাদের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং, মারামারি এসব চলে না। এ ধরণের কোন পরিস্থিতিতে পড়লে আমাদের জানাবি।’ এরপর আমরা কক্ষ থেকে বের হয়ে যাই।  কিন্তু সে বিষয়টা অন্যভাবে নিয়েছে।

অভিযুক্ত আরেক শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাস বলেন, তার সঙ্গে খুবই সাধারণভাবে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টা সে যেভাবে উপস্থাপন করেছে, সেভাবে হয়নি। মাকে ফোন দেওয়ার বিষয়টা তাঁকে বলা হয়েছে। একটা ফরমাল সম্পর্ক করার জন্য বলেছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল তার সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা। কিন্তু ব্যাপারটা এতদূরে চলে যাবে বুঝতে পারিনি। শিবিরের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আবরার ফাহাদের বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে বলেছি, ‘তাঁর সঙ্গে যেটা ঘটেছে ওটা র‍্যাগিং কিন্তু তোমার সঙ্গে যা হচ্ছে এটাকে তুমি র‍্যাগিং হিসেবে নিও না।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। একজন নতুন শিক্ষার্থীকে যেভাবে র‍্যাগিং দেওয়া হয়েছে, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি যেভাবে নিশ্চিত করা যায়, আমরা সে চেষ্টাই করবো। ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তির তথ্যগুলো আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিভাগে পাঠাবো। বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি একটা সুপারিশ তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিকে পেশ করবে। সেই অনুযায়ী শৃঙ্খলা কমিটি সিদ্ধান্ত নিবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দপ্তরে অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা শুনে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ঘাবড়ানোর কিছু নাই। আমরা আছি। এগুলো আমরা বরদাস্ত করব না।

 

আরবি/ এইচএম

Link copied!