ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
দুর্নীতিবাজ-আদর্শহীনের অপসারণ দাবি

রাবি শিক্ষক সুজন সেনের বিরুদ্ধে ২০০ পৃষ্টার অভিযোগ দাখিল

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪, ০৪:০১ পিএম

রাবি শিক্ষক সুজন সেনের বিরুদ্ধে ২০০ পৃষ্টার অভিযোগ দাখিল

রাবির চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজন সেন। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজন সেনের বিরুদ্ধে উপাচার্য ও বিভাগের সভাপতির কাছে ২০০ পৃষ্টার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা  দুর্নীতিবাজ-আদর্শহীন এই শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে তারা সুজন সেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সেচ্ছাচারীতা, দালালী, দলান্ধ, অশিক্ষকসুলভ আচরণসহ নানা ধরনের অভিযোগ তুলে ধরেন।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর এ অভিযোগপত্র জমা দেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি, বিভাগের সভাপতি বরাবর অনুলিপি দেন তারা। 

এদিন বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা চারুকলা অনুষদের মুক্তমঞ্চে জড়ো হয়ে ‘ভাউচার সুজনের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘এক দফা এক দাবি, সুজন সেনের চাকরিচ্যুতি’, ‘কুলাঙ্গার শিক্ষকদের কালো হাত, ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘সুজনের চামচারা, হুশিয়ার সাবধান’, ‘তেলবাজি না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘চারুকলায় দুর্নীতি, চলবে না চলবে না’, ‘দালালদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ এসব স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

পরবর্তীতে শিল্পচর্চা জয়নুল আবেদিন অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে অভিযুক্ত শিক্ষকের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ড. সুজন সেনের বিরুদ্ধে বিভাগের বর্তমান ও সাবেকদের মধ্যে ৪৬ জন শিক্ষার্থী অনলাইনে গুগল ফর্ম পূরণের মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাছাড়া অভিযোগপত্রে সুজন সেনকে সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অবাঞ্চিত ও বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর করেছে বিভাগের ৮৬ জন শিক্ষার্থী।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সুজন সেন নূন্যতম শিক্ষাদানে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। তাছাড়া তিনি সেচ্ছাচারী আচরণের মাধ্যমে কোর্সের কাজ আদায় করে মনগড়া মার্কিং (নম্বর) করেন। তার বিরুদ্ধে পছন্দের শিক্ষার্থীকে তুলনামূলক বেশি নাম্বার অন্যানদের কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

এছাড়া, ‍‍`তুমি কিভাবে পাশ করো আমি তোমায় দেখে নেবো‍‍` বলে এক শিক্ষার্থীকে হুমকি দেন তিনি।

শহীদ জিয়াউর রহমান হল প্রাধ্যক্ষের তিন বছরের মেয়াদকালে ৪ হাজার ২০০ টাকায় দুটি টিস্যু বক্স ক্রয় করে একটি নিজের বাসায় নিয়ে যায়। নাস্তা ও খাবার বাবদ ৪ লখ ১৮ হাজার ৮৯০ টাকা, ইন্টারনেট, লাইব্রেরী এবং ক্রীড়া তহবিল থেকে তিনি ১ লাখ ৮২ হাজার ৬১০ টাকা, নিজের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাভন মেটালিক’থেকে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে হলের জন্য ২ লাখ ২০ হাজার ৫৪৫ টাকার নেমপ্লেট, অনারবোর্ড এবং ক্রেস্ট ক্রয় করেন।

এছাড়া, প্রাধ্যক্ষের কক্ষ সম্প্রসারণের জন্য ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে দুটি এসি এবং ইন্টোরিয়রের জন্য আসবাব, র‌্যাক, জানালার পর্দা, গ্লাস ভোর পর্দা ও টিস্যুবক্স বাবদ ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৩৩ টাকা ব্যয় করেন বলে অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, হলের ছাত্রকল্যাণ তহবিলের ৫৩ হাজার ৫০০ টাকার পুরোটাতে দুর্নীতি করেছেন। তহবিল থেকে শিক্ষার্থী পরিচয়ে সহযোগিতা চেয়ে ৪৯ টি আবেদনের মধ্যে ৪৬টি আবেদনই ছিলো অবৈধ। তবে আবেদনগুলোর প্রত্যেকটিই গ্রহণ করা হয়।

এছাড়া, এসবের বাইরে তিনটি বৈধ আবেদনের মধ্যে কেবল একজন শিক্ষার্থী হাজার টাকা পেয়েছেন। বাকিটকাগুলো প্রাধ্যক্ষ বিভিন্নভাবে তছরূপ করেছেন। বঙ্গবন্ধু কর্নারের নামে তিনি প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় দেখালেও এখানে বই বাবদ তিনি খরচ করেছেন মাত্র ৪৪ হাজার ৬৯৭ টাকা। বাকি অর্থ তিনি নিজের দোকান থেকে ক্রয় করা চড়ামূল্যের স্মারক, ফলক এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচেই ব্যয় করেছেন।

এছাড়া ২০২২ সালের শেষের দিকে ড. সুজন সেন প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর সমন্বিত হল সমাপনীর আয়োজন করা হয়। এসময় কোনো প্রকার দরপত্র আহ্বান ও ক্রেস্ট কমিটির পরামর্শ ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে নিজের দোকান থেকে ক্রেস্ট ক্রয় করেন তিনি। ১ হাজার ৯০৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ১৫০ টাকার প্রস্তাবিত মূল্যে নিম্নমানের ক্রেস্ট সরবরাহ করেন তিনি। ওই সময় এ বিষয়ে একাধিক হল প্রাধ্যক্ষ প্রতিবাদ করেছিলেন বলে জানা যায়। এমনকি স্বাধীনতা দিবসের খাবার আয়োজনের প্যাকেট থেকে শুরু করে বাবুর্চির বিলের টাকা পর্যন্ত তছরূপ করেন তিনি।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, তার মেয়াদকালে শহীদ জিয়াউর রহমান হলে প্রকৌশল দপ্তর থেকে এককভাবে ৩৯ লাখ ২২ হাজার ২০৮ টাকা এবং বিভিন্ন বিভাগ ও হল মিলে সম্মিলিতভাবে ১১ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ টাকার কার্যাদেশ আসে। এর বাইরেও প্রায় ৩৩ লাখ টাকার আরেকটি কার্যাদেশ আসে বলে হল সুপার মামুনুর রহমান জানিয়েছেন। তবে সেটির কাগজপত্র ড. সুজন সেন নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন। এটি তিনি হল কর্তৃপক্ষের হাতে দেননি। এসব কার্যাদেশের কাজে হল সংস্কার, ওয়াশরুমে টাইলসহ অন্যান্য কাজ যথাযথভাবে করেননি তিনি।

সব অভিযোগ তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা জানান, সার্বিক কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ড. সুজন সেনকে আমাদের শিক্ষক হিসেবে মনে করছি না এবং তার মতো আদর্শহীন, দালাল, চাটুকার, দুর্নীতিবাজ, স্বেচ্ছাচারি, দলান্ধের ছাত্র হিসেবে আমরা নিজেদের পরিচয় দিতে ঘৃণাবোধ করছি।

ড. সুজন সেন চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক কলঙ্কযুক্ত অধ্যায়। শিক্ষকরূপী এমন দুর্নীতিবাজকে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দেখতে চাই না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. সুজন সেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. বনি আদম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দেওয়া অনুলিপি পেয়েছি। এ নিয়ে বিভাগের শিক্ষকরা বসে সিন্ধান্ত নিবো। অধিকাংশ শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।

আরবি/ এইচএম

Link copied!