গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যেই আবেগীয় বন্ধন তৈরি হয়েছে তা কিন্তু আর বেশিদিন কাজ করবে না। এর সমাধান হলো, অভ্যুত্থানে জন্ম নেয়া নতুন শক্তিকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ডিনস কমপ্লেক্সে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন যোগসূত্র, উত্তরণ আয়োজিত এই আলোচনা সভায় আয়োজিত `গণঅভ্যুত্থান, জন আকাঙ্ক্ষা ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভবিষ্যৎ` শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সভায় আলোচকের বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, শেখ হাসিনা রাজাকারের নাতি-পুতি বলে রাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছে। শিক্ষার্থীরা সেদিনই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর আগেও আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে। তবে এবারের আন্দোলন ছিল সমষ্টিগত আত্মসম্মান রক্ষার লড়াই। আর এরকম শত শত উদাহরণ রয়েছে যেখানে আত্মসম্মান রক্ষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে। আওয়ামী রেজিম মরদেহের কারবালা তৈরি করে সকল ভয় ভাঙিয়ে দিয়েছে, যার ফলাফল ৩৬ জুলাই। আওয়ামী লীগের পতনের ন্যায্যতা আরও আগেই তেরি হয়েছে। ক্ষমতার জন্য ভারতের পক্ষ নেয়া, নির্বাচনের নামে প্রহসন, ক্ষমতা অপব্যবহার করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করার ফলেই এই ন্যায্যতা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৫২, ১৯৬৯ এবং ১৯৯০ এ ছাত্ররা আন্দোলন করেছে। ছাত্রদের বুকে গুলি করার পরই আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে এবং স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যের কারণে ছাত্র জনতা একধরনের বিভেদের মধ্যে ছিল। তবে ২৪ এর অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা আবার তা করে দেখিয়েছে। যখন ছাত্রদের বুলেটের ভয় দেখানো যায়না তখন স্বৈরাচারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তারা কি করবে। আর এই সিদ্ধান্তহীনতার চূড়ান্ত পরিণতি ৩৬ জুলাই।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে জুলাইয়ের পর যেই প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে তার কোনো সীমা নেই। প্রত্যাশায় কোন সীমা থাকে না। কিন্তু বিনির্মানে সীমাবদ্ধতা থাকে। আর এই দুইয়ের ফারাকেই কাজ করে রাজনৈতিক নেতারা।আমাদের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কারণেই আওয়ামী রেজিম ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পেরেছে। পাশাপাশি জনগণের প্রত্যাশার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এভাবেই জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচকের বক্তব্যে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, জুলাই বিপ্লবের ভাষা ছিলো মৃত্যু অথবা মুক্তি। শুরু থেকেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশিদের জনগণ হিসেবেই ভেবেছে, কখনোই তাদের নাগরিক ভাবেনি। আমাদের দেশও আরেকটি ফিলিস্তিন হয়ে উঠবে যদি হাসিনা রেজিম আমরা আবারও ফিরিয়ে আনি। জুলাই অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা সেটি হলো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে ন্যূনতম নাগরিক অধিকার রক্ষিত হবে। আর এটি না হলে জুলাই বিপ্লবের যেই লক্ষ্য সেটি ব্যাহত হবে।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্য বক্তব্য দেন রাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, এডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মারুফ, রাবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ মিঠু, রাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরমা মোস্তফা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল ও ছাত্র ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হাবীব।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল ইসলান মাসুদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি কাজী রবিউল আলম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামান কাদেরীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :