ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

বিশেষ উদ্দেশ্যে নিখোঁজের নাটক করেছিল সজীব

তানভীর খন্দকার, যবিপ্রবি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম

বিশেষ উদ্দেশ্যে নিখোঁজের নাটক করেছিল সজীব

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নিখোঁজের ২০ ঘণ্টা পর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী সজীব হোসেনকে উদ্ধার করেছে জেলা পুলিশ। পুলিশ বলছে, অপহরণ বা গুম নয়, ব্যক্তিগত কারণে বন্ধু নাজমুল হাসান রকির বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন ওই শিক্ষার্থী। আর বন্ধুদের দাবি, অপহরণের নাটক সাজিয়ে ভাইরাল হতেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে সজীব।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার সৃষ্টি হয়, যেখানে তাকে প্রতারক ও ভণ্ড বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন নেটিজেনরা।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে যশোর জেলা পুলিশ মিডিয়া সেল থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাকে উদ্ধার করার তথ্য জানানো হয়।

সজীব হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন। তবে গত নভেম্বর মাসে তিনি ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এছাড়া তিনি যবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশী ছিলেন বলেও জানা গেছে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি রাত ৯টার পর থেকে সজীব হোসেনের নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসেন যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এদিকে ‍‍`সজীবকে যবিপ্রবির ছাত্রদল নেতা‍‍` দাবি করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত যবিপ্রবিতে ছাত্রদলের কমিটি গঠন হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের তৎপরতায় ৮ জানুয়ারি রাতে সজীবকে তাঁর বন্ধুর বাসা থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিবারের জিম্মায় দেয় পুলিশ।

এ ঘটনাকে ভাইরাল হওয়ার নাটক বলে দাবি করে তাঁর বন্ধু ও যবিপ্রবির শিক্ষার্থী হান্নান হোসেন বলেন, সজীব ভাইরাল হওয়ার জন্য আত্নগোপন করেছে। ও যখন আমাকে ম্যাসেজ দেয় ‍‍`তুই কই? আমার সাথে একজন খারাপ ব্যবহার করছে, তিন-চার জন ছেলে হাতে ছুরি আছে।‍‍` তারপরে ওকে কেউ অ্যাটাক করছিলো এবং দৌড়ানি দিছিলো। পরবর্তীতে এক বন্ধুর কাছে চলে যায়। রাত নয়টার পর থেকে পরের দিন বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত আমাকে জানালো না কেনো, যে আমি সেইভ আছি ভালো আছি। ও যেখানে ছিল অবশ্যই ফোন ছিল। ওর জন্য আমি সারারাত-দিন শিক্ষক, ডিএসবি, এনএসআই, পুলিশ, বন্ধু-বান্ধবের সাথে যোগাযোগ করেছি। আমি মনে করি, আমাকে ব্যবহার করে নিজেকে ভাইরাল করার জন্য এমন আত্নগোপন করেছে সজীব।

ঘটনাকে প্রতারণা বলে দাবি করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রআন্দোলনের যশোর জেলার আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, সজীব যে বিতর্কিত কাজটি করেছে সেটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে পুঁজি করে হাইলাইট হওয়ার জন্য বাজেভাবে ব্যবহার করেছে। এতে করে ছাত্র সমাজ যেভাবে অপমানিত হয়েছে পাশাপাশি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ক্ষুণ্ণ করেছে, যার কোন ক্ষমা হয় না। সজীব যে নাটক মঞ্চস্থ করেছে তার মদদদাতা যারা তাদের খুঁজে নিয়ে আসা হোক। কেন তারা এমন নাটক মঞ্চস্থ করল? কেন শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে খেলা করা হলো?

আমরা মনে করি, সজীব যেভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এর জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত। পাশাপাশি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত যাতে, ভবিষ্যতে অন্য কোন ছাত্র নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে খেলতে না পারে।

ঘটনা জানতে সজীব হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

আরবি/এইচএম

Link copied!